দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে নির্বাচন করছি : জি এম কাদের

প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০:১৬ | অনলাইন সংস্করণ

  রংপুর ব্যুরো

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, আমাদের সাংগঠনিক দূর্বলতা রয়েছে। রয়েছে আর্থিক সংকট। সেই সাথে নির্বাচনে না আসলে দল বিভক্ত হয়ে যেত পারে। আর যখন দেখছি, সরকার যে কোন মূল্যে নির্বাচন করবে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশুতি দিয়েছে সেই অবস্থা বিবেচনা করেই আমাদের নির্বাচনে অংশ নেয়া।

শনিবার দুপুরে রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডস্থ জাতীয় পার্টির দলীয় কার্যালয়ে কর্মীসভা ও রংপুর-৩ আসনে নিজের নির্বাচনী গনসংযোগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

তিনি বলেছেন বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনে দেশে অস্বাভিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। আমরাও নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবো কিনা না সে বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত নিয়েছিলাম। তিনি বলেন যখন দেখছি বিরোধীদের আন্দোলন পর্যবেক্ষন করে আমরা দেখেছি তাদের আন্দোলন ধীরে ধীরে স্থমিত হয়ে যাচ্ছে এবং জনগণ নির্বাচন মূখি হচ্ছে এমন অবস্থা থেকে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে এসেছে।

তবে আমরা সরকারের সাথে আলোচনা করেই নির্বাচনে এসেছি। সুষ্টু নির্বাচন, অর্থ এবং পেশী শক্তির ব্যবহার যেন না হয় সে সব প্রতিশ্রুতি সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন নির্বাচন কমিশন একটি গ্রহণ যোগ্য ও অংশ গ্রহণ মূলক নির্বাচন আমাদের উপহার দিতে চেয়েছে। আমরা আশাবাদি অংশ গ্রহণ মুলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির রাজনীতি টিকিয়ে রাখার জন্য নির্বাচনে এসেছে। ভবিষ্যতে আমরা যদি মনে করি সেটা কার্যকর হচ্ছে না, আওয়ামী লীগ এবং নির্বাচন কমিশন তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছে না, তখন আমরা আমাদের পার্টির ফোরামে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের ক্ষমতা হারানো ঝুঁকি এই মুহূর্তে নেই। কাজেই আমরা মনে করছি নির্বাচনটা ভালো করার জন্য তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। নির্বাচনে যাবার শর্ত এবং সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী ও দলের অনৈক্য দূর করার জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়ায় থাকা জাতীয় পার্টির জন্য লাভজনক। তবে আমাদের অপশনও আছে, যদি দেখি আমাদের শর্ত মতে কার্যক্রম হচ্ছে না, তাহলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তা করব।

সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কাছে জাতীয় পার্টির প্রত্যাশা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমাদের ডিমান্ড হলো প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। পেশীশক্তি এবং অর্থের ব্যবহার ও প্রভাব থেকে নির্বাচনকে মুক্ত রাখতে হবে। নির্বাচন বিধিমালা মেনে চলতে হবে। এটা যদি তারা মেনে না চলেন তাহলে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।  

জিএম কাদের বলেন, আমরা পার্লামেন্টে থাকার জন্য নির্বাচন করছি। আমরা কোনো ভাগ বাটোয়ারার নির্বাচন করছি না। এটা কোনো মহাজোট হচ্ছে না। বিভিন্ন দলের ধারণা তৈরি হয়েছে আমরা জোট করেছি। আমাদের ক্যান্ডিডেটরাও অনেকেই ভুল করছেন। এটা ইলেকশন কমিশনের দেখা উচিত ছিল। আমরা আগে মহাজোটে ছিলাম কিন্তু এখন আর নেই। এই নির্বাচন মহাজোটের নির্বাচন হচ্ছে না। আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সেই ধরনের কোনো চুক্তিও করিনি।

পার্টির মহাসচিবের নির্বাচনী পোস্টারে ‘জাতীয় পার্টি মনোনীত ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত’ লেখা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি এটা চুন্নু করেনি। তার একজন ভক্ত ওই পোস্টার ছাপিয়েছে। যিনি ছাপিয়েছেন তিনি চুন্নুর ভক্ত এবং আওয়ামী লীগ করে। চুন্নু সাহেব ওই পোস্টার সরিয়ে নেওয়ার জন্য তার ভক্তকে অনুরোধও করেছেন। আমাদের অনেক প্রার্থী এমন ভুল করেছেন।

এসময় দলটির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সংসদ সদস্য আদেলুর রহমান, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসীর, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় সদস্য লোকমান হোসেন, জাহিদুল ইসলাম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর ও বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করেন জাপা চেয়ারম্যান। পরে হজরত শাহ সূফি মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী (রঃ) মাজার জিয়ারত শেষে কর্মী সভায় যোগ দেন তিনি। কর্মী সভা শেষে নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে নগরীতে নির্বাচনী প্রচার মিছিল করেছেন রংপুর-৩ সদর আসনের মনোনীত প্রার্থী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এমপি।