ঢাকা-১৯ আসনে নৌকার প্রার্থীসহ ৭ জনকে শোকজ

প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭:৪৩ | অনলাইন সংস্করণ

  সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীসহ মোট ৭ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। গতকাল রোববার (২৪ ডিসেম্বর) ঢাকা-১৯ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সহকারী জজ জাকির হোসেন এসব কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন।

নোটিশ প্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন- ঢাকা-১৯ এ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ডা: মো: এনামুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সাভার উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াসমিন চৌধুরী সুমি, পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: পারভেজ দেওয়ান, রকি, মো: সাইদ এবং টিপু। 

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা: মো: এনামুর রহমানকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়েছে, গত বুধবার রাতে সাভারের থানা স্ট্যান্ড এলাকায় এনামুর রহমানের উপস্থিতিতে তাঁর কর্মী ও সমর্থকেরা স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। এসময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী এবং সমর্থকদের মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া সহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়াএ অভিযোগ উঠে। বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার একটি অনলাইন পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এটি আচরণ বিধিমালা ২০০৮- এর ৬ (ক) ও ৭(২) বিধির লঙ্ঘন।

অপরদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে দেওয়া নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার নির্বাচনী প্রচারকালে পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিন্দুরিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, মাদ্রাসা ও কবরস্থানের উন্নয়নের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের তহবিল থেকে টাকা হস্তান্তর করেন। কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষ থেকে কোনো ব্যক্তি নির্বাচনী এলাকার কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে বা গোপনে কোনো প্রকার চাঁদা বা অনুদান দিলে তা জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০০৮-এর ৩ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। অনুদান দেওয়ার ছবি ও সংবাদ অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ওই আসনের ভিজিল্যান্স ও অবজারভেশন টিমের এসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে পেয়েছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি।

এদিকে, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াসমিন চৌধুরি সুমিকে দেয়া নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, নৌকার প্রচারণায় অংশ নিতে গিয়ে মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী নুরন্নাহার আক্তার আলোকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেছেন ইয়াসমিন চৌধুরি সুমি এমন অভিযোগ সংক্রান্ত সংবাদ গত বুধবার একটি অনলাইন প্রত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এমন ঘটনা সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ৬ (ক) ও ১১ (৭) বিধির লঙ্ঘন।

পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: পারভেজ দেওয়ানকে দেওয়া নোটিশে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের নির্বাচনী প্রচরণায় পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিন্দুরিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, মাদ্রাসা ও কবরস্থানের উন্নয়নের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের তহবিল থেকে টাকা হস্তান্তর করেছেন। এটি আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ৩ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। উক্ত আসনের ভিজিল্যান্স ও অবজারভেশন টিমের এসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে পেয়েছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। 

রকিকে দেয়া নোটিশে বলা হয়েছে, রকিসহ অন্যান্য ব্যক্তিরা ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার তৌহিদ জং  মুরাদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার করা আব্দুল হালিমকে হুমকি দেওয়াসহ ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। গত সোমবার দিবাগত রাতে রকিসহ অন্যান্যরা সাভার পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাতলাপুরের হালিম মার্কেটে আব্দুল হালিমের নিজস্ব কার্যালয়ে হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে। এসময় বিশ্বজিৎ কর্মকার নামে নিরাপত্তারক্ষী হামলাকারীদের বাঁধা দিলে নিরাপত্তারক্ষীকে নির্বাচনী প্রচারণা না করার জন্য হুমকি দেন। এসংক্রান্ত একটি অভিযোগ সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে পেয়েছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। এমন ঘটনা সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ১১ (গ) বিধির লঙ্ঘন। এছাড়া, একই অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া দেয়া হয়েছে মো: সাইদকে।

অপরদিকে, টিপুর কারণ দর্শানোর নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, টিপুসহ অন্যান্য ব্যক্তিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার মো: তৌহিদ জং মুরাদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে জড়িত আবু সাইদকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। গত সোমবার রাত ৩টায় তাঁরা ভাগলপুর সিরামিক্স বাজারের দক্ষিণ পাশে আবু সাইদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে তাঁর স্থাপন করা মুরাদ জংয়ের অস্থায়ী নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে চেয়ার, টেবিলসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর করে। পরে ওই কার্যালয়ের পাশে  আবু সাঈদের বাড়িতেও হামলা করে। এসংক্রান্ত একটি অভিযোগ সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে পেয়েছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। এ ধরণের কর্মকান্ড সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ১১ (গ) বিধির লঙ্ঘন। 

শোকজ নোটিশে বিধিমালা লঙ্ঘনের কারণে কেন নির্বাচন কমিশনে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হবে না এবং শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে না সে বিষয়ে আগামী ২৬ ডিসেম্বর রকি, মো: সাইদ ও টিপুকে এবং পরেরদিন ২৭ ডিসেম্বর ডা: মো: এনামুর রহমান, মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ইয়াসমিন চৌধুরী সুমি ও  পারভেজ দেওয়ানকে ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনের নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সহকারী জজ জাকির হোসেনের কার্যালয়ে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, ঢাকা-১৯ আসনে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি ২ জন প্রার্থীসহ ৭ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।