কালের পরিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গরু দিয়ে হালচাষ

প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:১৩ | অনলাইন সংস্করণ

  মো. সিদ্দিক হোসেন, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

কালের পরিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কৃষি ক্ষেতে  চাষের ক্ষেত্রেও এসেছে পরিবর্তন। জমি চাষের প্রয়োজন হলেই অল্প সময়ের মধ্যেই পাওয়ারট্রিলারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চলছে জমি চাষাবাদ। তাই কৃষকরা এখন পেশা বদল করে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গরু, মহিষ, লাঙল ও জোয়াল দিয়ে জমিতে হালচাষ।

আদিকাল থেকেই দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় কৃষি কাজে ব্যবহার হতো হাল, লাঙল ও মই। কালের আবর্তে আধুনিকতার যুগে যান্ত্রিকতা নির্ভর যন্ত্র দিয়ে জমি চাষের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে দিন-দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বংলার ঐতিহ্যের ধারক গরুর লাঙল। এক সময় দিনাজপুরের ১৩ টি উপজেলায় দেখা যেতো সেই কাক ডাকা ভোরে কৃষকরা গরু ও কাঁধে লাঙল-জোয়াল নিয়ে বেড়িয়ে যেতো মাঠে। বামে-ডানে হুট-হাট শব্দে গরুকে তাড়া করে চলে জমিতে হালচাষ। নিজের সামান্য জমির পাশাপাশি অন্যের জমিতে হালচাষ করে তাদের সংসারের ব্যয়ভার বহন করতো। হালের গরু দিয়ে দরিদ্র মানুষ জমি চাষ করে ফিরে পেতো তাদের পরিবারের সচ্ছলতা। বাংলার গৃহবধূরা লালপেড়ে শাড়ি পরে কোমরে খাবারের গামলা আর হাতে পানির ঘটি নিয়ে সকাল হলেই মাঠের আঁকা-বাঁকা পথ ধরে খাবার নিয়ে যেত কৃষকের নিকট। কৃষকরা মাঠের প্রান্তরে হালচাষ করতো, কেউবা জমিতে বীজ বপন করতো।জমির চাষের ক্ষেত্রে গরুর হাল ও মই ব্যবহার করে বীজ বপন করে সোনার ফসল ঘরে তুলে আনতো। এতে একজন লোক ও একজোড়া গরু অথবা মহিষ থাকতো। এসব বইয়ের পুঁথিগাথা গল্পের মতো শোনায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বীরগঞ্জ পৌর শহরের মাকড়াই  গ্রামের  কৃষক মো. সোয়েব আলী   বিলুপ্তপ্রায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর লাঙল দিয়ে জমি চাষ করছে।  

তিনি বলেন, ‘হালচাষের জন্য এক জোড়া বলদ গরু, লাঙল-জোয়াল, মই, গরু তাড়ানোর লাঠি, গরুর মুখের টোনা (মুকির) লাগে। পাওয়ারট্রিলারে আগমনে গরু দিয়ে হালচাষ হয় না বললেই চলে।তিনি আরো বলেন, গরুর লাঙল দিয়ে মাটির গভীরে গিয়ে মাটি তুলে উল্টিয়ে রাখে। এতে জমিতে ঘাস কম হতো, আর হাল চাষের সময় গরুর গোবর সেই জমিতেই পড়তো এতে একদিকে যেমন জমিতে জৈব সারের চাহিদা পূরণ হতো তেমনি ফসলও ভালো হতো। পাওয়ারট্রিলারের প্রচলন হওয়ায় গরু দিয়ে হালচাষের কদর কমে গেছে।

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হিসেবে হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা লাঙল-জোয়াল, ফাল, দা, কাস্তে, খুনতি, মই, গরু ও মহিষ এখনো মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হতে দেখা যাচ্ছে। তবে গরু থাকলেও লাঙলে হালচাষ নেই। অনেকেই তার বাপ-দাদার পেশা গরুর লাঙল দিয়ে জমি চাষকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান আমাদের প্রতিনিধি মো. সিদ্দিক হোসেনকে জানান, এখনও গরুর হালে জমি চাষাবাদ করতে দেখা যায়। গরুর লাঙলে জমির চাষাবাদে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়।