জালিয়াতি মামলার আসামী আইনজীবীকে বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল, তোলপাড়
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬:০০ | অনলাইন সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
আদালতের বিচার কার্যক্রমে ব্যাংকের প্যাড, সীল, স্বাক্ষর, নাম ও পদবী ব্যবহার করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক গ্যারান্টি সৃষ্টির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন আদালতের এক কর্মকর্তা। সেখানে জালিয়াতিতে অভিযুক্ত হন একজন আইনজীবীও। ওই আইনজীবী আসামিকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা, কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) (বর্তমানে কুমিল্লা তিতাস থানায় কর্মরত) ওবাইদুল হক।
তবে, কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জমা করা অভিযোগপত্র এখনো গৃহীত হয়নি। মামলাটি অন্যকোন সংস্থাকে দিয়ে পুনতদন্তের দাবি জানিয়েছেন বোদ্ধামহল। আগামী বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
গত বছরের ৩ মে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (৫) এর বেঞ্জ সহকারী মোহাম্মদ শফি সদর থানায় মামলাটি করেন (যার নং-৬/২৩৪)।
আদালতে জমা করা অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, জাল-জালিয়াতির বিষয়ে উক্ত মামলার ৪নং আসামী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন অবগত ছিলেন না। আসামি দেলোয়ার হোসাইন, সহিদুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হক মামুন পরস্পর যোগসাজশক্রমে কাগজ জালিয়াতি করেছেন। তবে আদালতের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয়া ৪নং আসামী জিয়াউদ্দিনকে ১নং আসামি দেলোয়ার হোসাইন অভিযুক্ত করে আদালতে লিখিত স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। মোজাম্মেল হক মামুনের কোন সম্পৃক্ততা নেই মর্মে আদালতের কাছে লিখিত জবাব দিয়েছেন। উক্ত বিষয়ে মোজাম্মেল হক মামুনের কোন সম্পৃক্ততা না থাকা স্বত্বেও মোজাম্মেল হক মামুনসহ অপর ২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। অথচ জিয়াউদ্দিনের বিরুদ্ধে সু-নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্বেও তাকে বাদ দেয়া হয়েছে। এতে মোটা অংকের লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কক্সবাজার বন মামলা নং-১৩০/২০২০ (সদর) এর বিগত ০২/০৫/২০২৩ এর আদেশের অনুবলে দায়েরকৃত এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, সরকারি রক্ষিত বনে অবৈধভাবে প্রবেশ করে পাহাড়ের মাটি কেটে পাচার, ভূমিরূপ বৈচিত্র্য পরিবর্তন, বন ও পরিবেশের ক্ষতিসাধনের অপরাধে ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর সহিদুল ইসলাম ও নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে মামলা হয়। যা বর্তমানে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-৫ এ বিচারাধীন রয়েছে।
বালি পরিবহনের সময় জব্দকৃত ডাম্প ট্রাকের (চট্টমেট্রো-ড-১১-০০৪৭) মালিক দেলোয়ার হোসাইন জিম্মা প্রার্থী হিসেবে গাড়ির জিম্মা প্রার্থনা করলে জেলা ও দায়রা জজ আদালত তার আবেদন নামঞ্জুর করেন। পরে মামলা নিষ্পত্তি পর্যন্ত ৫ লাখ টাকা ব্যাংক গ্যারান্টি সাপেক্ষে গাড়িটি জিম্মা প্রদানের আদেশ দেন উচ্চ আদালত।
পরবর্তীতে জিম্মা প্রার্থী দেলোয়ার হোসাইনের যোগসাজশে অ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দিন স্বাক্ষরিত আবেদনের মাধ্যমে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের আদেশের অনুবলে ডাম্পার গাড়ির জিম্মা নামা সম্পাদনের আবেদন করেন।
জিম্মা প্রার্থীর পক্ষে পাঁচ লাখ টাকা ব্যাংক গ্যারান্টি দাখিল করায় গাড়িটি শর্তসাপেক্ষে জিম্মা প্রদানে আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে মামলা নিষ্পত্তি পর্যন্ত জিম্মা প্রার্থী দেলোয়ার হোসাইনের ব্যাংক হিসেবে প্রত্যয়ন উল্লেখিত ৫ লাখ টাকা স্থিত রাখতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড লিংক রোড শাখার ম্যানেজারকে নির্দেশ দেয়া হয়।
আদালতের আদেশের জবাবে শাখা ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হামিদ উল্লাহ জানান, দেলোয়ার হোসাইনের সঞ্চয়ী হিসাব নং-২০৫০৪১৯০২০০০৭৪৫১৮ এর অনুকূলে কোন প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করা হয়নি। সংযুক্ত প্রত্যয়নপত্রে যে প্যাড-সীল, স্বাক্ষর, নাম ও পদবী ব্যবহার করা হয়েছে তা তাদের ব্যাংক বা শাখার নয়।
মূলত আদালতকে প্রভাবিত করতে আসামিরা জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন, এমনটি উল্লেখ করেন মামলার বাদি মোহাম্মদ শফি।
এ বিষয়ে মোজাম্মেল হক মামুন জানান, তদন্ত কর্মকর্তা মনগড়া তদন্ত করে তাকে মামলায় অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়ে চলে গেছেন। মামলার প্রধান আাসামীর লিখিত জবাব অনুসরণ করেননি তদন্ত কর্মকর্তা এবং তার জবাবটির কথাও চার্জশিটে উল্লেখ করেননি। প্রকৃতপক্ষে আমি (মামুন) নির্দোষ- এবিষয়ে প্রতিকার পেতে উচ্চাদালতের আশ্রয় গ্রহণ করেছি।
অভিযোগপত্র প্রসঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওবাইদুল হক, এবিষয়ে সঠিক কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মুঠোফোনে সব কথা বলা যায়না। তবে টাকা লেনদেনের অভিযোগটি সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।