কক্সবাজার ৩ সদর, রামু ও ঈদগাঁও আসনের ঈগল প্রতীকের প্রচারণায় অংশ নেয়া লোকজনের উপর হামলা, গুলিবর্ষণ এবং নির্বাচনী প্রচারনায় নৌকার প্রার্থী ও তার কর্মি-সমর্থকদের কর্তৃক পদে পদে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ।
তিনি বলেন, নৌকার প্রার্থী ও সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল কর্তৃক সরাসরি হামলায় অংশগ্রহণ এবং ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মি-সমর্থকদের তুলে নিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে পক্ষপাত দুষ্ট আচরণের করছেন রামু উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এবং রামু থানার ওসি।
এ অবস্থায় নির্বাচন সুষ্ঠ, নিরেপক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ হবে কিনা তা নিয়েও আশংকা প্রকাশ করে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ দ্রুত সময়ের মধ্যে রামু উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এবং রামু থানার ওসি প্রত্যাহারের দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, এব্যাপারে নির্বাচন কমিশনার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ এসব অভিযোগ করেন।
মিজান বলেন, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচনকে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে তিনি কক্সবাজার-০৩ আসনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া থেকে শুরু করে প্রতি পদে পদে নৌকার প্রার্থীর ষড়যন্ত্রের কারণে তার প্রার্থিতা ফিরে পেতে আইনি লড়াই করতে হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করার পর থেকেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও তার লোকজন ঈগল প্রতীকের প্রচারণায় নানা হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। বুধবার সন্ধ্যায় রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা স্টেশনে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কামাল শামশুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স সহ তার একদল কর্মি-সমর্থক নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিল। এসময় নৌকার প্রার্থী কমলের নেতৃত্বে একদল লোক সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের ( ঈগল সমর্থক ) উপর হামলে পড়ে। এক পর্যায়ে কমল নিজেই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে গুলি ছুঁড়ে। পরে তার ( কমল ) লোকজন ১০ থেকে ১৫ টি গুলি ছুড়ে এবং দেশিয় অস্ত্র-সশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে ইউপি চেয়ারম্যান কামাল শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স সহ তার ৫ জন কর্মি-সমর্থক হয়েছেন। “
সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজান অভিযোগ করে বলেন, “ঘটনার পরপরই এমপি কমল সহ তার কর্মি-সমর্থকরা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের জোয়ারিয়ানালার ঘটনাস্থলে সশস্ত্র অবস্থায় দুই ঘন্টার বেশী অবস্থান করেন। এসময় সেখানে সমাবেশের আয়োজন করে কমল বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে কর্মি-সমর্থকদের উসকে দিয়ে ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করেন। এক পর্যায়ে ঈগল প্রতীকের কর্মি-সমর্থকদের খুঁজে খুঁজে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আবারও হামলার চেষ্টা চালান। পরে ঘটনার খবর পেয়ে রামু উপজেলার সহকারি কমিশনার ( ভূমি ) ও রামু থানার ওসি সহ পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এসময় এলাকাবাসী এমপি কমলের কর্মিদের একটি গাড়িতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র থাকার তথ্য দিলেও প্রশাসন ও আইন শৃংখলার কর্তাব্যক্তিরা তা আমলে নেননি। অভিযোগের ব্যাপারে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে তা এড়িয়ে যান।
ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, “ সমাবেশ নৌকার প্রার্থী কমল হুমকি বলেছেন, তার পকেটে যে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে তা দিয়ে নিমিষেই হাজারখানেক লোককে শেষ করে দেওয়া সম্ভব। যদি কেউ বাড়াবাড়ি করে তাদের তুলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। “
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি ও পুলিশসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে নৌকার প্রার্থীর উদ্যতপূর্ণ বক্তব্যে ঈগল প্রতীকের কর্মি-সমর্থকরা আতংকে রয়েছে জানিয়ে মিজান বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ পক্ষপাত দুষ্ট আচরণ করেছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আশংকার সৃষ্টি হয়েছে।
এমতাবস্থায় সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে রামু উপজেলা সহকারি কমিশনার ( ভূমি ) ও রামু থানার ওসি’র দ্রুত প্রত্যাহার দাবি করেছেন তিনি।
মিজান জানান, এর আগেও কয়েক দফা হামলার ঘটনা ঘটলেও রামুর স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক। তাই প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষপাত দুষ্ট আচরণ বন্ধে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও ওসি’কে দ্রুত প্রত্যাহার করে নির্বাচন কমিশনকে সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে। ঘটনার ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ইসি’তে অভিযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান ঈগল প্রতীকের এ স্বতন্ত্র প্রার্থী।
এ ব্যাপারে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া না দেওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।