ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাতীয় সংসদ নির্বাচন - ২০২৪

নেত্রকোণা - ৩ ভোট চাওয়ার সময় রামদা সঙ্গে রাখতে আ’লীগ নেতার নির্দেশ

নেত্রকোণা - ৩ ভোট চাওয়ার সময় রামদা সঙ্গে রাখতে আ’লীগ নেতার নির্দেশ

ভোট চাওয়ার সময় রামদা সঙ্গে রাখার জন্য কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার গন্ডা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সাজিদুল ইসলাম সঞ্জু। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার এমনি এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। জাতীয় সংসদের নেত্রকোণা- ৩ (আটপাড়া-কেন্দুয়া) আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীর সমর্থনে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক প্রচারনা সমাবেশে সঞ্জুকে এই নির্দেশ দিতে ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখা যায়। আসনটিতে নৌকা নিয়ে কেদ্রীয় আওয়ামীলীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। ভিডিওটি নজরে আসায় সঞ্জুর বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেছেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার শাহেদ পারভেজ। সঞ্জু গন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।

ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, গন্ডা ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন সাজিদুল ইসলাম সঞ্জু। এসময় নিজের কোমর থেকে ছোট একটি ছুরি বের করে সকলকে দেখান। তাকে বলতে শোনা যায়, ‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়া আপনারা, মোটরসাইকেল পারেন আর যা-ই পারেন, তাই নিয়ে আইবেন। উদাহরণ হিসেবে (কোমরের ছুরি দেখিয়ে) আজকে কিন্তু আমিও গেছি, খালি হাতে যাইনি। অন্যরা গেছে রামদা-টামদা লইয়া, আমিও একটা লইছি সভাপতি হিসেবে। নিজের প্রয়োজন যখন পড়বো তখনতো ছাড়ন যাইতো না, ছাড়ন যাইবো? এ কারণে আমিও একটা লইছি।’

সঞ্জু বলেন, ‘কালকে থাইক্কা সকাল ৯টার সময়, ওয়ার্ডের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি যারা আছেন, দয়া করে আল্লাহর ওয়াস্তে একজন সভাপতি, একজন সেক্রেটারি দুইজন দুইটা গাড়ি (মোটরসাইকেল) নেবেন। একটা গাড়ির মধ্যে একজন করে লোক থাকবো, একটা করে রামদা থাকবো। এটা হইলো আপনাদের জন্য বাধ্যবাধকতা, আনতে হবে। আইসা বলবেন, আমারতো গাড়ি নেই। দরকার হলে গাড়ি একটা ভাড়া নিবেন। যাদের গাড়ি নাই, গাড়ি আপনি ভাড়া নিবেন, নাইলে কিনবেন, নাইলে পয়দা করবেন। আপনাদের ভাইঙ্গা ভাইঙ্গা বলতেছি, গাড়ি লইবেন, সাথে একজন লোক নেবেন, হেলমেট পরবেন, রামদা লইবেন..., লইয়া আপনারা মুভ করবেন।’

নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে সঞ্জু আরো বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের অনেকে আছেন বয়স্ক। তারপরও আমি বলবো যদি পারেন, আসবেন। তবে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের অন্য যারা আছেন, দয়া করে আপনারা কেউ খালি হাতে আসবেন না। প্রত্যেককে একটা গাড়িতে একজন লোক নিয়া আসবেন। আর যুবলীগ যারা আছেন, ম্যাক্সিমাম লোকের গাড়ি আছে, ছাত্রলীগেরও গাড়ি আছে। তোমরা হেলমেট পইরা, মাথা বাইন্দা যা নেওয়ার, তা-ই নিবা। অর্থাৎ আগামীকাল থাইক্কা আমি যেহেতু কোমরে এইটা বানছি (কোমরের ছুরি দেখিয়ে), দরকার হলে আরও একটা বড় লইয়াম (নেবো)। আগামী নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত, ইলেকশনের দিন আল্লাহ বাঁচাইলে বিজয় মিছিল করে আমরা ফিরবাম। এইটা হলো আমাদের গন্ডা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের আদেশ এবং নির্দেশ।’

ভাইরাল ভিডিও নিয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীসহ সচেতন মহলের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সঞ্জু ভাইয়ের প্রকাশ্যে এসব কথা বলা ঠিক হয়নি। এতে আমাদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। আমাদের প্রতিপক্ষের লোকেরা তার বক্তৃতার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে।’ তবে মোবাইল বন্ধ থাকায় সঞ্জুর বক্তব্য জানা যায়নি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা এভাবেই ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছেন। এতে আমার কর্মী-সমর্থকরা ভয়ে আছেন। প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।’

পুলিশ সুপার মো: ফয়েজ আহমেদ বলেন, যেহেতু তিনি প্রকাশ্যে ছুরি দেখিয়ে অন্যদের মোটরসাইকেলে রামদা নিয়ে বের হয়ে ভয়ভীতি দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন, সেহেতু এটি স্পষ্ট আচরণবিধির লঙ্ঘন। এটি আইনগতভাবে অপরাধের শামিল। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

ভোট
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত