ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রামু বৌদ্ধ বিহারে ‘অজ্ঞাত দূর্বৃত্তদের’ আগুন

রামু বৌদ্ধ বিহারে ‘অজ্ঞাত দূর্বৃত্তদের’ আগুন

কক্সবাজারের রামুর উসাইচেন (বড় ক্যাং) বৌদ্ধ বিহারে আবারো আগুন দিয়ে নাশকতার চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে রামুর চেরাংঘাটায় রাখাইন সম্প্রদায়ের এ বড় ক্যাং বৌদ্ধ বিহারের সিঁড়িতে অগুন লাগানো হয়। তবে এলাকাবাসী ও রামু ফায়ার সার্ভিসের হস্তক্ষেপে ভয়াবহ নাশকতা থেকে রক্ষা পেয়েছে মন্দিরটি।

গত ২০১২ সালে রামু বৌদ্ধপল্লীতে অগ্নিকান্ডের সেই ঘটনার দীর্ঘ এগারো বছর পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একদিন আগে এ নাশকতার চেষ্টায় রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ে ফের আতংক বিরাজ করছে। কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না।ঘটনার পর থেকে বিজিবি, পুলিশ ও র‍্যাব মন্দিরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। শনিবার সকালে নাশকতাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতনরা।

হিন্দু-বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন একে নির্বাচনকালীন পরিকল্পিত নাশকতা বলে দাবি করছেন। তবে, তদন্তের পর ঘটনার রহস্য জানা যাবে বলে উল্লেখ করছে প্রশাসন।

জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে ৭ জানুয়ারি। তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি-জামায়াতসহ একাধিক রাজনৈতিক দল একে সরকারের একতরফা নির্বাচন দাবি করে তা প্রতিহতের ঘোষণা দেন। শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা করেন নির্বাচন বিরোধীরা। শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) দিনগত রাতে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগানোর কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে রামু বৌদ্ধ মন্দিরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনাকে পরিকল্পিত নাশকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা বলে মনে করেন স্থানীয়রা। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা।

বিহারের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ২ টা ৬ মিনিটে মুখোশ পরা এক ব্যক্তি দেওয়াল টপকিয়ে মন্দিরের সিঁড়ি পর্যন্ত আসেন। এর কয়েক মিনিট পর তাকে দ্রুত পালিয়ে যেতে দেখা যায়। আরো কয়েক মিনিট পর সিঁড়ির পাশ থেকে ধোঁয়া বের হয়।

বড় ক্যাং বৌদ্ধ বিহারের সাবেক সভাপতি ও স্থানীয় বাসিন্দা অংথুই মং জানান, বিহারের পাশে আমার বাড়ি। রাত আড়াইটার দিকে বিহারে আগুন লেগেছে বলে আমাকে ফোন করেন বৌদ্ধ ভিক্ষু (বিহার অধ্যক্ষ)। সাথে সাথে লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে অবশ্য রামু ফায়ার সার্ভিসের দমকল বাহিনীও ঘটনাস্থলে আসে।

স্থানীয় ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ ইউনুছ জানান, সিসিটিভি ফুটেজে আমরা দেখতে পেয়েছি মাস্ক পরা এক লোক পশ্চিম পাশের দেয়াল ডিঙিয়ে বিহারে প্রবেশ করছে। কিছুক্ষণ পর দ্রুত পালিয়ে যায়। ধারণা করছি এলোকই বিহারে আগুন দিয়ে পালিয়েছে।

রামু প্রেস ক্লাবের সভাপতি নীতিশ বড়ুয়া এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, রামু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জল উদাহরণ। এ সম্প্রীতি নষ্ট করতে ২০১২ সালে রামুসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার বৌদ্ধ বিহারগুলোতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। সে ক্ষত কাটিয়ে সকল সম্প্রদায় মিলেমিশে রয়েছি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুর্বৃত্তরা নতুন করে সম্প্রীতি নষ্টে নাশকতা সৃষ্টির অপচেষ্ঠা করেছে।

জাতীয় হিন্দু মহাজোট কক্সবাজারের সভাপতি বুলবুল তালুকদার বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে এটি পরিকল্পিত নাশকতা বলে মনে করছি। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান কোন কমেন্ট না করে এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে অনুরোধ করেন। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলামকে কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনায় কারা জড়িত বা নাশকতা কিনা সবকিছু খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তদন্তের পর বলা যাবে আসল ঘটনা কি ? যে-ই এ ঘটনায় জড়িত থাকুক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সকল সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করতে চাই- চাইলে-ই কাউকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে দেয়া হবেনা।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর উত্তম বড়ুয়া নামে ফেসবুক আইডিতে কোরআন অবমাননার ছবি ছড়ানোর গুজব রটিয়ে রামু বৌদ্ধ পল্লীতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। হামলায় রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৯টি মামলা করা হয়। পরে একটি মামলা প্রত্যাহার করা হলেও ১৮টি মামলায় ৯৯৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। স্বাক্ষীর অভাবে এসব মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি বলে জানিয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম।

রামু,বৌদ্ধ বিহারে,আগুন
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত