পূণ:নির্বাচন দাবি
কক্সবাজারে তিনটি আসনে ৪ প্রার্থীর ভোট বর্জন
প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:৪৬ | অনলাইন সংস্করণ
এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার
ভোটে কারচুপির অভিযোগ ও এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগে কক্সবাজারের তিনটি আসনে ভোট বর্জন করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীসহ তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাদের মাঝে কয়েকজন চলমান ভোট স্থগিত করে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়ে আবেদন করেছেন। এ বর্জনের মধ্য দিয়েই শেষ হলো কক্সবাজারে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ।
বেলা ২টার দিকে কক্সবাজার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের কার্যালয়ে এসে ভোট স্থগিত চেয়ে আবেদন দেয়ার পর চলমান ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ। হাইকোর্টের আওয়ামী আইনজীবী ফোরামের এ নেতা পূণ:নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ব্যারিস্টার মিজান গণমাধ্যমকে বলেন, কক্সবাজার-৩ আসনে ১৬৭টি কেন্দ্রের মাঝে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর নেতৃত্বে ১৩০টি কেন্দ্র দখল করে ব্যালেটে জোরপূর্বক সিল মারা হয়েছে। বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা রিটানিং কর্মকর্তাকে জানানো হয়। আবেদনে ভোট স্থগিত করে পূণঃনির্বাচনের দাবি জানিয়ে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছি।
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনে ভোটার রয়েছে চার লাখ ৮৯ হাজার ৬১০ জন। ১৬৭টি ভোটকেন্দ্রের মাঝে রামুতে ৬৪টি, কক্সবাজার সদরে ৭৬টি ও নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলায় ৩৬টি।
এ আসনের জাতীয় পার্টির এডভোকেট মোহাম্মদ তারেক (লাঙ্গল)ও বলেছেন, নৌকা প্রতীকের পক্ষে রামু উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে নানা প্রভাব বিস্তারের তথ্য রয়েছে। কিছু কেন্দ্র দখলের খবরও পাচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনকে দ্রুত নজর দেয়ার দাবি জানিয়েছি। শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে রয়েছি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন (হাতঘড়ি) বলেন, আমি ভোটের মাঠে রয়েছি। বিভিন্ন কেন্দ্রে এজেন্ট বের করে দেয়া হচ্ছে। কিছু কর্মীদের মারধরও করা হচ্ছে। প্রভাব বিস্তার লক্ষণীয়।
এ আসনের প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ (ঈগল), জাতীয় পার্টির এডভোকেট মোহাম্মদ তারেক (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন (হাতঘড়ি), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) শামীম আহসান ভুলু (কুড়েঁঘর), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মোহাম্মদ ইব্রাহিম (টেলিভিশন)।
অপরদিকে, ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র থেকে এজেন্টের বের করে দেয়ার অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেছেন কক্সবাজার-৪ (উখিয়া- টেকনাফ) আসনের জাতীয় পার্টির (জাপা) মনোনীত নাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টো। বেলা ১টার দিকে উখিয়ায় তার নিজ অফিসে কক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে তিনি এ ঘোষণা দেন।
ভূট্টো বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়। কিন্তু যেসব কেন্দ্রে আমি ভোট পাব সেসব কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে, উখিয়ার জালিয়াপালং, রত্মপালং ও রাজাপালং ইউনিয়ন থেকে আমার সব এজেন্টকে বের করে দেয়া হয়। বিষয়টি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানো পরও কোনো ব্যবস্থা না নেয়া হয়নি। একই সঙ্গে ব্যাপক অনিয়ম, জাল ভোট প্রদান, কেন্দ্র দখল করা হয়েছে। তাই ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
একই আসনে, একই ভাবে অভিযোগ তুলে বেলা তিনটার দিকে ভোট বর্জন করেছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল বশর।
তিনি দাবি করেছেন, কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতি, জাল ভোট, এজেন্ট বের করে দেয়া ও নজিরবিহীন অনিয়ম, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষপাত করে আমার নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। তাই আমি এই ভোট বর্জন করলাম।
কক্সবাজার-৪ এর সহকারি রিটার্নিং অফিসার ও উখিয়ার ইউএনও তানভির হোসেন জানান, কোন প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে কেউ লিখিত বা মৌখিকভাবে বিষয়টি জানাননি। প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তা কর্মী, ম্যাজিষ্ট্রেট রয়েছে। ভোট ডাকাতি বা অনিয়মের কোন ঘটনা ঘটেনি।
কক্সবাজার-৪ আসনে আওয়ামী লীগের শাহীন আক্তার (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা মো. নুরুল বশর (ঈগল), জাতীয় পার্টির নুরুল আমিন ভুট্টো (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ফরিদুল আলম (আম), তৃণমূল বিএনপির মুজিবুল হক মুজিব (সোনালী আঁশ), ইসলামী ঐক্যজোটের মোহাম্মদ ওসমান গনি চৌধুরী (মিনার), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোহাম্মদ ইসমাইল (ডাব) মাঠে ছিলেন। এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২৬ হাজার ৯৭১ জন এবং মোট কেন্দ্র ১০৪টি।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তারের স্বামী সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি বলেছেন, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হয়েছে। পরাজয় জেনে বর্জনের কথা বলছেন অন্যপ্রার্থীরা।
এদিকে, একই দিন তিনটার দিকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন কক্সবাজারের আলোচিত আসন চকরিয়া-পেকুয়ার (কক্সবাজার-১) স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি জাফর আলম। তিনি দাবি করেছেন মাঠে থাকা প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইবরাহিমের পক্ষে প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোট ডাকাতি হয়েছে। এসব প্রতিরোধ করতে গেলে প্রাণহানি হবার সম্ভাবনা ছিল। এ অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চকরিয়া-পেকুয়ার মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ভবিষ্যতেও তাদের সাথে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এমপি জাফর।
তবে, কল্যাণ পার্টির নির্বাচন সমন্বয়কদের মতে-সুষ্ঠু নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে ভোট শেষ হওয়ার মাত্র ৫০ মিনিট পূর্বে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়া দেউলিয়ত্বের প্রমাণ। কক্সবাজার-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম তাই দেখিয়েছেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানান, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কেন্দ্র দখলের তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেছেন।
কক্সবাজারের জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, সকাল হতেই শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু ভাবে ভোটগ্রহণ চলে নিয়মমতো বিকাল ৪টায় শেষ হয়। এরই মাঝে কয়েক প্রার্থী ভোট স্থগিত চেয়ে লিখিত আবেদন দিয়েছে বলে জেনেছি। ব্যস্ততার কারণে সেসব আবেদন পড়া হয়নি। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে প্রার্থীদের ভোট বর্জনের বিষয়টি প্রশাসনের জানা নেই।