দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৯ আসনে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এর কাছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডা. মো: এনামুর রহমান ২৮ হাজার ৫১ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাভারের সাবেক সংসদ সদস্য ঈগল প্রতীকের তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদকে ৮২১০ ভোটে পরাজিত করে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষিত হয়েছেন।
রোববার (৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টার পরে সাভার উপজেলা পরিষদের সভা কক্ষ বিজয়-৭১ এ সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ঢাকা-১৯ এর সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ চূড়ান্ত বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী- মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ট্রাক প্রতীক নিয়ে মোট ৮৪,৪১২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী অপর দুই হেভিওয়েট প্রার্থী যথাক্রমে ঈগল প্রতীকের তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ ৭৬,২০২ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় এবং নৌকা প্রতীকের ডা. মো: এনামুর রহমান ৫৬,৩৬১ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৯ আসনে উপরে উল্লেখিত তিনজন ছাড়াও আরও সাতজন প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। নির্বাচনে তাদের ভিতর আম প্রতীক নিয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মোঃ ইসরাফিল হোসেন সাভারী ৫৬৫ ভোট, একতারা প্রতীকের বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মোঃ জুলহাস ১৬৯ ভোট, মাছ প্রতীক নিয়ে গণ ফ্রন্টের নুরুল আমিন পেয়েছেন ১১৩ ভোট, নোঙ্গর প্রতীকের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এর মোঃ সাইফুল ইসলাম মেম্বার ১৪০ ভোট, কাঁঠাল প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির আইরিন পারভীন পেয়েছেন ১৩৩ ভোট, সোনালী আঁশ প্রতীক নিয়ে তৃণমূল বিএনপি'র মাহাবুবুল হাসান ২৮০ ভোট এবং ডাব প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ কংগ্রেস এর প্রার্থী মিলন কুমার ভঞ্জ পেয়েছেন মোট ১৮৪ ভোট। তবে এই সাতজন সবাই জামানত হারিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ঢাকা-১৯ আসনে মোট ভোটার ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৪১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৪৬৮ জন ও নারী ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৯৩৫। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার সংখ্যা ১৩ জন। এদের ভিতর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২ লাখ ২২ হাজার ৬৫০ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তবে ৪,০৯১টি ভোট বাতিল হওয়ায় বৈধ ভোটের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৯টি। মোট ২৯২টি কেন্দ্রের ভিতর সবগুলোরই ফলাফল ঘোষিত হওয়ায় বন্ধ ঘোষিত কোনো ভোটকেন্দ্র নেই।
প্রসঙ্গত আরও উল্লেখ্য, এবারই ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন। এবারই কোনো প্রতিমন্ত্রীর আসনে একজন ইউপি চেয়ারম্যান এমপি হলেন। এছাড়া, মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
এই আসনে এর আগের এগারো জন সংসদ সদস্য হলেন- মোহাম্মদ আনোয়ার জং তালুকদার (প্রথম জাতীয় সংসদ সদস্য, ১৯৭৩ সাল, ঢাকা-১২ আসন), দেওয়ান মোহাম্মদ ইদ্রিস (দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ সদস্য, ১৯৭৯ সাল, ঢাকা-১২ আসন), সামসুদ্দোহা খান মজলিশ (তৃতীয় জাতীয় সংসদ সদস্য, ১৯৮৬ সাল, ঢাকা-১২ আসন), আশরাফ উদ্দিন খান ইমু (চতুর্থ জাতীয় সংসদ সদস্য, ১৯৮৮ সাল, ঢাকা-১২ আসন), নিয়ামত উল্লাহ সাবু (পঞ্চম জাতীয় সংসদ সদস্য, ১৯৯১ সাল, ঢাকা-১২ আসন), নিয়ামত উল্লাহ সাবু (ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ সদস্য, ১৯৯৬ সাল, ঢাকা-১২ আসন), ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন (সপ্তম জাতীয় সংসদ সদস্য, ১৯৯৬ সাল, ঢাকা-১২ আসন), ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন (অষ্টম জাতীয় সংসদ সদস্য, ২০০১ সাল, ঢাকা-১২ আসন), তালুকদার মোহাম্মদ তৌহিদ জং মুরাদ (নবম জাতীয় সংসদ সদস্য, ২০০৮ সাল, ঢাকা-১৯ আসন), ডা. মো: এনামুর রহমান (দশম জাতীয় সংসদ সদস্য, ২০১৪ সাল, ঢাকা-১৯ আসন) এবং ডা. মো: এনামুর রহমান (একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য, ২০১৮ সাল, ঢাকা-১৯ আসন)। সর্বশেষ ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৯ আসন (সাভার-আশুলিয়া) থেকে দ্বাদশ সংসদ সদস্য হিসেবে বেসরকারি ভাবে বিজয়ী হলেন মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
সাভার উপজেলা পরিষদের সভা কক্ষ বিজয়-৭১ এ ফলাফল ঘোষণার সময় বিজয়ী প্রার্থী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীব, আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: আশরাফুল ইসলাম, সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা, সাভার উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ সাজ্জাদ হোসেন প্রমুখসহ সাভারের বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ উপস্থিত ছিলেন।
