ঢাকা ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নিজের তৈরি প্রযুক্তিতে লিফট তৈরি করেন নিজেই

নিজের তৈরি প্রযুক্তিতে লিফট তৈরি করেন নিজেই

নিজস্ব প্রযুক্তিতে লিফট বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ঈশ্বরদীর আমজাদ হোসেন। নেই উচ্চতর ডিগ্রি। বুয়েট কিংবা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন না করেই ঈশ্বরদীর আমজাদ হোসেনের বানানো লিফট বিদ্যুৎ না থাকলেও স্বয়ংক্রীয়ভাবে আইপিএসে চলে। পেশায় তিনি ইলেকট্রিক টেকনিশিয়ান। নিজের তিনতলা ভবনে উঠানামার জন্য তিনি এ লিফট তৈরি করেছেন। এখন পরীক্ষামূলকভাবে তিনি লিফট ব্যবহার করছেন।

আমজাদ হোসেন উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর গ্রামের মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে।

ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কের ডাকবাংলোর সামনে দিয়ে চলাচলের পথে অনেক পথচারীকে আমজাদ হোসেনের লিফটের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। এ লিফট দেখে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন। নিজস্ব প্রযুক্তিতে লিফট বানানোর অনুভূতি বর্ণনা করে আমজাদ হোসেন (৬০) বলেন, আমি পেশায় একজন ইলেকট্রিক টেকনিশিয়ান। পাবনা ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট থেকে দুই বছরের ইলেকট্রিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রায় ৪০ বছর ধরে এখন আইপিএস, চার্জার লাইট, বৈদ্যুতিক মটর, ব্যাটারির চার্জার, ফ্রিজের ভল্টেজ স্টেবেলাইজারসহ বিভিন্ন ইলেকট্রিক সামগ্রী তৈরি করছি। এক সময় আমি টিভি ও ফ্যান মেরামতের কাজও করেছি। তিন বছর আগে ঈশ্বরদী পৌর শহরের ডাকবাংলোর সামনে এক শতক জমিতে ইলেকট্রিক সামগ্রী বেচাকেনার জন্য একটি তিনতলা একটি ভবন নির্মাণ করি। এখানকার দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলায় উঠানামার জন্য ভবনের পেছনে দিয়ে একটি সিঁড়ি রয়েছে। এ সিঁড়ি দিয়ে ক্রেতাদের দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলায় ওঠানামা করতে অসুবিধা হয়। এ ছাড়াও দোকানের মালামাল ওঠানো ও নামাতে বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। এ সমস্যা দূর করতে একটি লিফট তৈরির পরিকল্পনা করলাম। তবে শুরুতে বিষয়টি এত সহজ ছিল না। প্রায় তিন মাস এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে লিফট তৈরির জন্য একটি কন্ট্রোল বক্স, ১ টন ওজন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি গিয়ার বক্স, ১ কিলোওয়ার্টের আইপিএস, এক হর্সের মটর তৈরি করি। এরপর স্টিলের ওয়ারের, মেটাল স্টাকচার ও কেবিনের জন্য একরিলিকা গ্যাস দিয়ে তৈরি শুরু করি লিফট। প্রায় তিন মাস প্রচেষ্টার পর দোকানের সামনে তিনতলায় ওঠানামার জন্য একটি লিফট তৈরি করি। আমার ব্যবসায়িক ভবনটি চারতলায় উন্নীত করা যাবে। এজন্য লিফটে চারতলা পর্যন্ত ওঠানামার জন্য লিফট তৈরি করি। এখন লিফটে পরীক্ষামূলকভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলাতে চলাচল করছি।

তিনি বলেন, এ লিফটে উঠে একটি সুইচ চাপলে দ্বিতীয় তলায় উঠা যাবে। সেখানে নামার প্রয়োজন না হলে আরেকটি সুইচ টিপে তৃতীয় তলায় ওঠা যাবে। একইভাবে আবার তৃতীয় তলা থেকে নিচে নামতে হবে। একসঙ্গে তিনজনের বেশি মানুষ এ লিফটে যাতায়াত করতে পারবে না। একইসঙ্গে এক টন ওজনের মালামাল ওঠানামা করানো যাবে। বিদ্যুৎ না থাকলে লিফট চালাতে জেনারেটের প্রয়োজন হয় কিন্তু আমার এ লিফট আইপিএস দিয়ে চালানো যাবে। এ লিফটে যেসব ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়েছে সবই আমার নিজের তৈরি। লিফটে ব্যবহৃত একটি কন্ট্রোল তৈরি করতে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়। এটি আমি খুবই স্বল্প খরচে তৈরি করেছি। চারতলা ভবনের একটি লিফট সংযুক্ত করতে কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়। সেখানে আমার মাত্র খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা।

লিফট দেখতে আসা পথচারী আসমত আলী বলেন, সড়কের পাশে এমন লিফট দেখে কৌতূহল হলো তাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি। আমার মতো অনেকেই তো দেখছে। শুনেছি এটি তিনি নিজেই তৈরি করেছেন। এ বিষয়টি আমার কাছে খুবই আশ্চর্য লাগছে।

আমজাদ হোসেন আরও বলেন, এ লিফট আমি নিজের ব্যবহারের জন্য তৈরি করে পরীক্ষামূলকভাবে চালাচ্ছি। এটি নিরাপদ ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। এটিকে কীভাবে আরও আধুনিক করা যায় সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি। আমার উদ্ভাবিত এ লিফট তৈরির বিষয়টি সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের জানাব। পাশাপাশি ইলেকট্রিক প্রকৌশলীদের পরামর্শ নিব। স্বল্প খরচে নির্মিত এ লিফট যদি তিন ও চারতলা ভবনে ব্যবহারের জন্য বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করার অনুমতি সরকার আমাকে দেয় তাহলে যারা এ লিফট ব্যবহার করবে তারা নিরাপদ ও সাশ্রয়ী মূল্যে এটি ব্যবহার করতে পারবে।

প্রযুক্তি,লিফট
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত