ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রংপুরে শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ ৪৩

রংপুরে শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ ৪৩

রংপুর অঞ্চলেও জেঁকে বসেছে শীত। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে আগুন পোহাতে গিয়ে ঘটেছে অগ্নিদগ্ধের ঘটনা। দগ্ধ হয়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক)হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৩ জন। অগ্নিদগ্ধের শিকার প্রায় সবাই নারী ও শিশু।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাষ্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১১ জন দগ্ধ রোগী। এরমধ্যে বুধবার দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি আছে দগ্ধ ৫ জন। এছাড়াও হাসপাতালের ৬ নম্বর সার্জারি ওয়ার্ড, ১৮ নম্বর শিশু ওয়ার্ড ও ১৬ নম্বর নারী ওয়ার্ডে আরো ভর্তি রয়েছেন ২৬ দগ্ধ রোগী। চিকিৎসাধীন ৪৩ দগ্ধ রোগীর মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু যাদের সবাই শীত থেকে বাঁচতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় খড়কুটা ও রান্নার চুলার আগুনে শীত নিবারণ করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ভর্তি হওয়া অপর পাঁচজন হলেন- কুড়িগ্রাম সদরের সাজু মিয়ার স্ত্রী ববিতা বেগম (৩৫), কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ির আশরাফুল আলমের মেয়ে আয়শা সিদ্দিকা (৬), রংপুর নগরীর মুন্সিপাড়া এলাকার আলেয়া বেগম (৬৫), লালমনিরহাটের হাতিবান্ধার সবুজ চন্দ্র রায়ের স্ত্রী পলি রানী (৩০) ও নীলফামারীর ডিমলার মমিনুর ইসলামের স্ত্রী খাদিজা বেগম (৪০)। এর মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত নার্স।

বার্ন ও প্লাষ্টিক সার্জারি ইউনিটের ইনচার্জ ফারুক হোসেন জানান, বর্তমানে ভর্তি হওয়া অধিকাংশ রোগীই আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হওয়া। এই ইউনিটে ১২টি বিছানা রয়েছে। এরমধ্যে ১১ জন ভর্তি রয়েছে। এদের অনেকের শরীরের ৪০ থেকে ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন দগ্ধ শিশু আয়শা সিদ্দিকা হাউমাউ করে কেঁদে বলছেন, মা কবে সুস্থ হবো, কবে বাড়ি যাবো।

আয়শার মা শাহানা বেগম বলেন, চুলায় ভাত রান্না করার সময়, আমি ঘরে গেলে মেয়ে আগুন পোহাতে চুলার পাশে বসে। এসময় অসাবধানতাবশত তার জামায় আগুন ধরে যায়। কোমর থেকে পা পর্যন্ত সম্পূর্ণ পুড়ে যায় তার। বিকেলে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে বুধবার সকালে ভর্তি হয়েছেন আলেয়া বেগম। স্বজনেরা জানান, আগুন পোহানোর সময় হঠাৎ তার শাড়ীতে আগুন ধরে দগ্ধ হন তিনি। শরীরের প্রায় ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

বেডে শুয়ে অসহ্য যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছিলেন বার্ন ইউনিটে পলি রানী। সঙ্গে থাকা তার শাশুড়ি আরতি রানী জানান, ‘অভাবের সংসারে শীত নিবারণের তেমন কিছু নাই। ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে আগুন পোহাচ্ছিলেন পলি রানী। এসময় কাপড়ে আগুন ধরে তার শরীরের নিচের অংশ পুড়ে যায়। তার প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়। রমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের ১০ দিনে ৫৫ জন দগ্ধ রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। যাদের বেশিরভাগই শীত নিবারণ করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধের শিকার হয়েছেন। চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ১৮ জনকে।

বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. শাহ মো. আল মুকিত জানান, শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামাঞ্চলের মানুষ খড়কুটায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন। আর অসাবধানতার কারণে অগ্নিদগ্ধের শিকার হচ্ছেন তারা।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রমেক বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার মো: শাহীন শাহ জানান রংপুরের বাইরে বিশেষ করে দিনাজপুর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁওয়ে এই অগ্নিদগ্ধের ঘটনা বেশি ঘটছে।

আগুনে শীত নিবারণ করতে গিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজন দগ্ধ নারী ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতি শীত মৌসুমে এরকম অগ্নিদগ্ধের ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন রমেক হাসপাতালে ৪৩ জন অগুনে দগ্ধ নারী ওশিশু ভর্তি হয়েছে ।

রংপুর,দগ্ধ,শীত
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত