রংপুর চিড়িয়াখানার পশুপাখিরা তীব্র শীতে জবুথবু

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:০৯ | অনলাইন সংস্করণ

  রংপুর ব্যুরো

হাড়কাঁপানো ঠান্ডা ও হিম হাওয়ার ছোবলের দোসর ঘন কুয়াশা। কয়েক দিন ধরে রংপুরসহ গোটা উত্তরবঙ্গে মৃদু শৈত্যপ্রবাহে কারণে সূর্যের দেখা নেই। ঘন কুয়াশা আর প্রচন্ড শীতে নাকাল মানুষ। তীব্র ঠান্ডায় রংপুর চিড়িয়াখানার পশুপাখিরাও জবুথবু হয়ে পড়েছে।

মারাত্মক শীতের প্রকোপে এ চিড়িয়াখানার হরিণ, ঘোড়া, ময়ূর, বাঘ, বানর, সিংহসহ সব পশুপাখিকে কষ্ট পেতে দেখা গেছে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তীব্র ঠান্ডার মধ্যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এ প্রাণীগুলোকে নিয়মিত ভিটামিন খাওয়ানো হচ্ছে।তীব্র শীতে জবুথবু প্রাণিগুলোকে দেখে খুব বেশি আনন্দ পাওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন কয়েকজন দর্শনার্থী।

রংপুর চিড়িয়াখানায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি খাঁচার ভেতরে পশু-পাখিরা গুটিসুটি মেরে বসে আছে। শীত থেকে বাঁচতে অধিকাংশ পাখি তাদের পাখার ভিতরে মুখ লুকিয়ে রেখেছে। খাঁচার ভেতরে দেখা গেছে শীতে কাতর সিংহ ও বাঘকে। তীব্র ঠান্ডার কারণে শুয়ে-বসে সময় কাটাচ্ছে ওরা। তবে ভোরের সময় সিংহ ও বাঘগুলো গর্জন করে উঠে।

অন্যদিকে লাফালাফি না করে বানরসহ অন্যান্য প্রাণীরা খাঁচার কোনায় চুপিসারে বসে আছে। একই অবস্থা ঘোড়াগুলোর। এদের খাঁচার একপাশে টিনের তৈরি সেডে খড় বিছানো হয়েছে, সেখানে কিছু ঘোড়া থাকলেও বাকি ঘোড়াগুলোকে মাটিতেই শুয়ে থাকতে দেখা গেছে। চঞ্চল হনুমানগুলোও মাথা লুকিয়ে উষ্ণতা খোঁজার চেষ্টা করছে।
উটপাখির মতো দেখতে বড় ক্যাসোয়ারি শীতে নিথর হয়ে বসে আছে। ময়ূর পেখম তোলা বন্ধ রেখে মাথা লুকিয়ে রেখেছে পালকে ভিতর। হরিণগুলো দলবদ্ধ হয়ে থাকলেও শীতের কারণে এদের শরীরে দুরন্তপনা নেই। চিড়িয়াখানার বেশিরভাগ প্রাণীই নিদারুণ শীতে কষ্ট পাচ্ছে।

শীতে চিড়িয়াখানার প্রাণিদের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা.আম্বর আলী তালুকদার বলেন, শীতে প্রাণিদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সব সময়ের জন্য চিকিৎসা সেবা, অসুস্থ হলে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। যে সব প্রাণী একেবারে শীত সহ্য করতে পারে না, তাদের প্রতিটি খাঁচার চারদিকে চট দিয়ে ঘিরে রাখা হয়, যেন বাতাস না ঢুকতে পারে। ঘরগুলো পরিস্কার রাখা হচ্ছে সবসময়। এছাড়াও বিভিন্ন খাঁচার ভেতর খড় দেওয়া হয়েছে যেন প্রাণীরা সেখানে বসে শরীর গরম করতে পারে। সেইসঙ্গে পশু-পাখিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন খাওয়ানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকটি প্রাণীকে প্রয়োজন মতো খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত চিড়িয়াখানার সব প্রাণীই সুস্থ আছে। আমরা তদারকি বাড়িয়ে দিয়েছি।

রংপুর চিড়িয়াখানা জ্যু অফিসার ডা. শাহাদত হোসেন বলেন, প্রতিদিনই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাসহ সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যাতে কোনো প্রাণী অসুস্থ না হয়। ঘরগুলো পরিষ্কার রাখা হয় এবং পানি বদলে দেওয়া হয় প্রতিদিন।

এদিকে শীতের কারণে দর্শনার্থীর সংখ্যা একেবারে কম। তীব্র শীতে জবুথবু প্রাণীগুলোকে দেখে খুব বেশি আনন্দ পাওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন কয়েকজন দর্শনার্থী।

উল্লেখ্য, ২১. ৫১ একর জমিতে ১৯৮৯ সালে সাধারণ মানুষকে বিনোদন দিতে রাজধানীর বাইরে প্রতিষ্ঠিত হয় রংপুর চিড়িয়াখানা। ১৯৯২ সালে উন্মুক্ত করা হলে সে সময় এটিতে ২৩ প্রজাতির প্রাণি ছিল। ২০১৮ সালে ২৬ প্রজাতির ২১৫টি প্রাণী থাকলেও বর্তমানে রংপুর চিড়িয়াখানায় ১৬১টি প্রাণি রয়েছে। সেখানে প্রতিনিয়ত প্রাণীর সংখ্যা কমছে।