দেবহাটায় কয়েকদিনের তীব্র শীতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:৩৩ | অনলাইন সংস্করণ
দেবহাটা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ঘন কুয়াশার সাথে সাথে তীব্র শীতের প্রকোপে জবুথবু হয়ে পড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের মানুষ। সেই সাথে নষ্ট হচ্ছে মাঠের ফসল। দরিদ্ররা শীতবস্ত্রের অভাবে নিদারুন কষ্টে দিনানিপাত করছেন। সেই সাথে ঠান্ডায় কাহিল হয়ে শিশু ও বয়স্করা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ঠান্ডায় ব্যাহত হয়ে পড়েছে উপজেলার সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, তীব্র কনকনে শীতে উপজেলায় শিশু ও বয়স্করা শীতবাহিত রোগ ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, কাশি, অ্যাজমা, জ্বর, কোল্ড অ্যালার্জি, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এর মধ্যে শীতকালীন রোগে অনেকে আক্রান্ত হয়ে দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং চিকিৎসারত আছেন অনেকে। গত ১১ জানুয়ারী থেকে ১৭ জানুয়ারী পর্যন্ত শীতকালীন ডায়রিয়া রোগে ০৭ জন শিশু ও বয়স্ক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। ৬ জন চিকিৎসা নিয়ে চলে গিয়েছেন আর একজন চিকিৎসাধীন আছেন।
আবহাওয়া বিভাগ বলছে, চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সাতক্ষীরা জেলায় শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। যা চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ ও চতুর্থ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সাথে বাড়তে পারে তীব্র শীত ও কুয়াশা।
স্থানীয়রা জানান, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে হিমেল হাওয়ার কারণে বাড়তি শীত অনুভূত হচ্ছে। এতে করে বাজারঘাট সন্ধ্যার আগেই মানুষ শূন্য হয়ে পড়ছে। খেটে খাওয়া শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের মানুষ কাজে যেতে পারছেন না। সেই সাথে অনেক দরিদ্র মানুষ শীতের কাপড়ের অভাবে কষ্টে আছেন।
ভ্যানচালক আলাউদ্দিন, মোসলেম, পুটলু বলেন, গত কয়েকদিন তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। শীতের কারণে হাট বাজার জনশূন্য থাকায় আয় রোজগার নেই বললেই চলে।
কৃষক নুর ইসলাম, আব্দুল মাজেদ জানান, ঘন কুয়াশায় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ফসল নষ্ট হচ্ছে। আমাদের ধানের চারা ও ধানের পাতা পচে গিয়েছে। সেই সাথে পচন ধরছে জমিতে লাগানো ফুলকপি, পাতা কপি, লাউ, কদুসহ বিভিন্ন ফসলের। শীতের তীব্র প্রকোপ থাকায় কোন প্রতিকার মিলছে না। তাই চিন্তিত তারা।
দেবহাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরীফ মোহাম্মদ তিতুমীর জানান, প্রথমত আমরা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সকল সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেছি। বীজতলায় রাতে মেশিনের গরম পানি দিয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে বলা হয়েছে। তীব্র শীত ও কুয়াশায় ফসলের যাতে কোনো ধরনের ক্ষতি না হয় সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রতিটি ইউনিয়ন মাঠ কর্মকর্তারা কৃষকদের সহযোগিতা করছেন। পাতা ঝরে যাওয়া রোধ, সবজি ও ফসলের পোকা আক্রমণ ঠেকাতে কৃষককে নানা রকমের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডাঃ এসএম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়া এড়াতে বাড়িতে শিশু ও বৃদ্ধদের বিশেষ যত্ন নেওয়ার ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
এদিকে, অসহনীয় ঠান্ডার হাত থেকে শীতার্ত এই মানুষগুলোকে রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে বিত্তবান সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।