কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূল দিয়ে মিয়ানমারে জ্বালানি তেল অকেটন, ডিজেল, ভোজ্য তেল সয়াবিন পাচার আশংকাজনক হারে বেড়েছে। যার সাথে পাচার হচ্ছে পেঁয়াজ, রোশন, চাল, ডাল, মরিচ সহ নানা খাদ্য পণ্যও। গত ১ মাসে নানা উপকূল থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে মিয়ানমারে পাচারকালে ৭৬৩৬ লিটার অকেটন, ১৩৬ লিটার ডিজল ও ৩ হাজার ৭৫২ লিটার সয়াবিন তেল সহ ২৮ পাচারকারিকে আটক করা হয়েছে। এ পরিস্থিতি পাচার রোধে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বিশেষ সভা করেছে।
বুধবার জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় জ্বালানি ও ভোজ্য তেল বিক্রিকারি প্রতিষ্ঠানকে সাপ্তহিক তালিকা তৈরি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে জমা প্রদান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজরধারী বৃদ্ধি সহ নানা সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরানের সভাপতিত্বে সভায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোষ্টগার্ড, জেলার ৩৫ টি পাম্প, ৩০ টি প্যাক পয়েন্ট ও ৮ টি বার্জ মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, অনুষ্ঠিত সভায় জ্বালানি ও ভোজ্য তেল বিক্রিকারি প্রতিষ্ঠানকে সাপ্তাহিক তালিকা তৈরি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে জমা প্রদান। কে ক্রয় করছেন, কত পরিমাণ ক্রয় করছেন, কতদিন পর ক্রয় করছেন তালিকায় তা উল্লেখ থাকবে। যে তালিকাটি উপজেলা প্রশাসন জেলা প্রশাসন বরাবরে পাঠাবেন। তালিকায় কোন প্রকার অসঙ্গতি থাকলে তার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপকূল পয়েন্টে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজরধারী বৃদ্ধি সহ নানা সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে।
এদিকে, বুধবার বিকাল ৪ টায় টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ অভিযান পরিচালনা করে ২৫টি ড্রামে মোট ১৪১৫ লিটার অকটেন, ৪০ কেজি পেঁয়াজ, ৩১ কেজি রসুন, ৩৬ কেজি আদা উদ্ধার সহ পাচারকারী চক্রের ২ সদস্যকে আটক করেছে র্যাব-১৫। আটক ২ জন হলেন, টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ মারে পাড়ার আমান উল্লাহর ছেলে ফয়েজ উল্লাহ (২২) ও একই এলাকার আবদুল গফুরের ছেলে আব্দুল্লাহ (২০)।
র্যাব ১৫ এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী জানিয়েছেন, কক্সবাজার জেলার সমুদ্রের বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহার করে কতিপয় চোরাকারবারী জ্বালানী তৈল অকটেনসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অবৈধভাবে চোরাচাইপথে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচারের খবর পেয়ে র্যাব অভিযান চালায়। অভিযানে বিকাল ৪ টার দিকে শাহপরীর দ্বীপ মাঝের পাড়া এলাকার ডাঙ্গরপাড়া-মাঝেরপাড়া সড়কের পশ্চিম পাশে র্যাবের আভিযানিক দলের উপস্থিতি বুঝতে পেরে তিনজন ব্যক্তি তাদের হেফাজতে থাকা অকটেন ভর্তি প্লাস্টিকের ড্রামসহ অন্যান্য জিনিসপত্র রেখে পালানোর চেষ্টাকালে দুইজনকে আটক করা হয়। অপরজন পালিয়ে যায়। যেখানে ২৫টি ড্রামে ১৪১৫ লিটার অকটেন, ৪০ কেজি পেঁয়াজ, ৩১ কেজি রসুন, ৩৬ কেজি আদা উদ্ধার এবং ৩টি সীমসহ ১টি বাটন ও ০১টি স্মার্ট ফোন উদ্ধার করা হয়।
তিনি জানান, এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করে আটকদের টেকনাফ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের সমুদ্র উপক‚ল থেকে দেড় হাজার লিটার জ্বালানি তেল অকটেন সহ মো. হারুন নামে এক পাচারকারীকে আটক করেছে পুলিশ।
গত ২৫ ডিসেম্বর কোস্টগার্ড সদস্যরা অভিযান চালিয়ে টেকনাফের লম্বরি ঘাট থেকে ১৫ বস্তা শুকনা মরিচ, ৪০ বস্তা পেঁয়াজ, এক বস্তা তামাক পাতা, ৩ বস্তা আয়োডিন যুক্ত লবণ, এক হাজার ৮২১ লিটার অকটেন, ৩ হাজার ৭৫২ লিটার সয়াবিন তেল, ১৩৬ লিটার ডিজেলসহ ১৯ জন পাচারকারীকে আটক করে। এছাড়া গত ১৩ জানুয়ারী কক্সবাজারের দরিয়ানগর এলাকা দিয়ে পাচারকালে ৬৯টি ড্রামভর্তি দুই হাজার ৯০০ লিটার অকটেন জব্দ করেছে র্যাব। এ পাচারের দায়ে ৬ জনকে আটক করা হয়।