ফরিদগঞ্জে নারী বিউটিশিয়ানকে গলা ও পায়ের রগ কেটে হত্যা

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:২৬ | অনলাইন সংস্করণ

  চাঁদপুর প্রতিনিধি

চাঁদপুর জেলাধীন ফরিদগঞ্জ উপজেলায় মমতাজ বেগম রিক্ত(৩৫) নামের এক নারী বিউটিশিয়ানকে গলাকেটে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে।

এ নারী বিউটিশিয়ানকে হত্যার পর কম্বল পেঁচিয়ে ঘরের ভেতর টয়লেটে রেখে দিয়ে পালিয়ে যায় দূর্বৃত্তরা। সংবাদ পেয়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করেছে।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের চরমান্দারি এলাকার বেপারি বাড়িতে নিহত রিক্তার নিজ বসতঘরে ঘটনাটি ঘটেছে। 

নিহত মমতাজ বেগম রিক্তা উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের চরমান্দারি এলাকার বেপারি বাড়ির মৃত এমদাদ উল্লাহ্র মেয়ে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রিক্তা স্থানীয় গৃদকালিন্দিয়া বাজারের বধূবরণ বিউটি পার্লারের স্বত্বাধিকারী। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রিক্তা নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাড়ি ফেরেন। তার স্বামী প্রবাসী এবং তার কোন সন্তান না থাকায় মৃত বোনের একমাত্র ছেলে বাপ্পিকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি।

বাপ্পি গৃদকালিন্দিয়া বাজারে একটি মোবাইল দোকানে মোবাইল মেরামতের কাজ করেন। রাত ৮টার দিকে তিনি বাড়ি ফিরে তার খালা রিক্তাকে ঘরে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে ঘরের মেঝেতে রক্ত দেখে বাড়ির লোকজনকে বিষয়টি জানান এবং বাড়ির লোকজনসহ ঘরে প্রবেশ করে।

পরে রিক্তার চাচাতো ভাই মাহফুজুর রহমানের মেয়ে ঐশী আক্তার তার মা ও বাপ্পিসহ ঘরে প্রবেশ করে বহু খোঁজাখুঁজি করার পর টয়লেটের ভেতরে কম্বল মোড়ানো অবস্থায় রক্তাক্ত মৃত দেহ দেখতে পায়। এ ঘটনা ঐশী তার বাবা মাহফুজুর রহমানকে জানালে তিনি জাতীয় জরুরি সেবা (৯৯৯) ফোন করে পুলিশকে অবহিত করেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ রিক্তার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে।

রিক্তার বোনের ছেলে বাপ্পি জানান, আমার জন্মের পর মা মারা যায়, এরপর এই খালার কাছেই বড় হয়েছি। আজ সন্ধ্যা ৬টার সময় খালামনিকে দেখেছি বাজার থেকে পুরি নিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছে। আমি রাত ৮টার সময় বাজার থেকে বাড়িতে এসে দেখি ঘরের দরজা বন্ধ। খালাকে অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে দরজার লক মোড়া দিলেই দরজা খুলে যায়। এসময় বিদ্যুৎ ছিল না। ঘরে ঢুকে দেখি ঘরের মেঝেতে খালার বোরখায় রক্ত মাখা। আমি চিৎকার করে পাশের ঘরের মাহফুজ মামার স্ত্রী লাকি মামানিকে ডেকে আনি। পরে ওই মামানি ও তার মেয়ে ঐশীসহ ঘরে ভেতরে খুঁজে না পেয়ে টয়লেটের দরজা খুলে দেখি খালা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

একই বাড়ির মাহফুজুর রহমান জুয়েল জানান, এই ঘটনা দেখেই আমি জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশকে জানাই। রিক্তা আমার চাচাতো বোন। আমার জেঠা ও জেঠি মারা যাওয়ার পর থেকেই বাবার বাড়িতে থাকে। তিনি আরো জানান, গত প্রায় দশ বছর পূর্বে চট্টগ্রামে রিক্তার বিয়ে হয়েছে। রিক্তার স্বামী রাকিবুল হাসান দুবাই প্রবাসী। গত দুই মাস পূর্বেও সে ছুটি কাটিয়ে গেছে। রিক্তার কোন সন্তান নেই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য হুমায়ূন কবির জানান, রিক্তা সম্পর্কে আমার চাচাতো বোন। রাত ৮টা ৫৭ মিনিটের সময় একই বাড়ির ইসমাইল মাস্টার ফোন করে জানিয়েছেন রিক্তাকে কারা যেন কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমি এই ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে এসেছি।

তিনি আরো জানান, আমি এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত হত্যাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাই।

রিক্তার মামা মো. আমিনুর রহিম পাটওয়ারী জানান, আমার বাড়ি রায়পুর উপজেলার কাঞ্চনপুর এলাকার আলা বক্স পাটওয়ারী বাড়ি। আমার ভাগ্নী রিক্তা খুন হওয়ার ঘটনা শুনে এখানে এসেছি। আজ থেকে ১০-১২ দিন পূর্বে রিক্তা আমার বাড়িতে গিয়ে বলেছে তার ভাই মালেক ও তার ছেলে মেহেদী হাসান এবং ভাবী শিউলি রিক্তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। আর এখন রিক্তাকে তার ঘরেই খুন করেছে। আমি আমার ভাগ্নির খুনের বিচার চাই।

এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার তদন্ত (ওসি) প্রদীপ মন্ডল জানান, খুনের বিষয়ে মাহফুজুর রহমান নামক ব্যক্তি জাতীয় জরুরি সেবা (৯৯৯) ফোন করে। তাৎক্ষণিক আমরা ঘটনাস্থলে এসে মমতাজ বেগম রিক্তার লাশ উদ্ধার করেছি। এটি একটি হত্যাকাণ্ড এবং এ বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব হত্যাকারীদেরকে আটক করে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।