ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দিনাজপুরে মাছ চাষে স্বাবলম্বী সাদেকা বানু

দিনাজপুরে মাছ চাষে স্বাবলম্বী সাদেকা বানু

দিনাজপুরে মাছের পোনা চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন নারী উদ্যোক্তা সাদেকা বানু। ছোট পরিসরে শুরু করলেও বর্তমানে তিনি ৩১ একর জমিতে ২২টি পুকুরে জি-থ্রি রুইসহ বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা উৎপাদন করে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার সাথে স্বামীও কাজ করছেন। প্রায় ২০টি পরিবারে করে দিয়েছেন,কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। তার সফলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকে মৎস্য চাষে ঝুকছেন। নারী উদ্যোক্তা সাদেকা বানুর এখন বাৎসরিক আয় প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা।

২০১৫ সালে নিজ গ্রাম দিনাজপুর দক্ষিণ কোতয়ালীর মালিগ্রামে দু’টি পুকুর লিজ নিয়ে তিনি রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভারকার্প, সাদাপুটি, তেলাপিয়া পোনা উৎপাদন শুরু করেন। প্রথম বছরেই সাফল্যের মুখ দেখেন তিনি। পরের বছর গ্রামের আরও তিনটি পুকুর লিজ নিয়ে মাছের পোনা উৎপাদনের বিস্তৃত বাড়ান। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি নারী উদ্যোক্তা সাদেকা বানুকে। বর্তমানে নিজ গ্রামসহ পার্শবতী এলাকা বড়গ্রাম ও কমলপুরে ৩১ একার জমিতে ২২টি পুকুরে জি-থ্রি রুইসহ বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা উৎপাদন করছেন তিনি।

সাদেকা বানু জানায়, ‘আমার পেছনে ফিরে তাকানোর সময় শেষ। এখন আরো এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। আল্লাহ রহমতে অনেক দূর এগিয়ে গেছি। এখন আমার আমার সুখের সংসার। এই মাছের পোনা চাষ ও বিক্রি করে দুইটি মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলেকে পড়া-লেখা করাচ্ছি। তাকে মানুষের মতো মানুষ করার স্বপ্ন আমার। এজন্য এখনো হাল ধরে আছি। দুইটি পুকুর থেকে আমার এখন ২২টি পুকুর। ৩১ একার জমিতে এই ২২টি পুকুরের মধ্যে তিনটি পুকুরে গত বছর থেকে জি-থ্রি রুই মাছের পোনা উৎপাদন করছি। এতে অনেক সাফল্য এসেছে।

তিনি আরও বলেন, জি-থ্রি পোনা মাছের চাহিদাও অনেক। আমি হিসেব করে দেখেছি, সব খরচ বাদ দিয়ে আমার এখন বাৎসরিক আয় থাকে প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা। ভাবছি, আরো কিছু পুকুরে এই জাতের মাছের পোনা উৎপাদন করবো।

স্বামী বেলাল হোসেনও অন্যপেশা ছেড়ে স্ত্রী’কে সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। পুকুরগুলো তত্ত্বাবধানে কাজ করছেন তিনি। গত বছর থেকে পরীক্ষামূলক ৩টি পুকুরে ওয়ার্ল্ডফিশ উদ্ভাবিত ‘তৃতীয় প্রজন্ম’ বা জি-৩ রুই এর পোনা উৎপাদন শুরু করা হয়েছে । এতেও ব্যাপব সাফল্য পেয়েছেন তিনি। প্রচলিত রুই মাছের চেয়ে শতকরা প্রাায় ৩০ ভাগ বেশি বৃদ্ধি পায় জি-৩ রুই এর।তাই, জি-৩ রুই পোনার ব্যাপক চাহিদা থাকায় পোনা মাছ বিক্রেতারা তার পুকুরে ঝুকতে থাকে। ইতোমধ্যে তার পুকুরের পাছের পোনা জেলা ছাড়িয়ে সারাদেশে সরবরাহ শুরু হয়েছে।

সরজমিনে গিয়ে পুকুর পাড়ে কথা হয় পোনা মাছ নিতে আসা অনেকের সঙ্গে । বাই-সাইকেলের পেছনে বড় সিলভারের হাড়ি বেখে তার ভেতরে পোনা মাছ নিয়ে হাড়ির মুখে লাল-সাদা কাপড় পেচিয়ে তারা ছুঁটে চলেন গ্রাম থেকে গঞ্জে পোনা মাছ সরবরাহে। তাদের এমনি একজন পোনা মাছ ব্যবসায়ীরা।

তারা জানান, ‘এখন জি-৩ রুই এর পোনার অনেক চাহিদা। বিত্রি করে লাভও ভালো। তাই এই পোনা নিয়ে দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে করা হচ্ছে। সপ্তাহে ৩/৪দিন ব্যবসা করি। এতে যা লাভ পাই,তাদেই সংসার চলে।’নারী উদ্যোক্তা সাদেকা বানুকে এবিষয়ে প্রথম থেকেই সহায়তা করে আসছে,মহিলা বহুমূখী শিক্ষা কেন্দ্র-এমবিএসকে ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন। মাছের পোনা উদ্যোক্তা তৈরিতে মহিলাদের দিয়ে সমিতির মাধ্যমে কাজ করছে,প্রতিষ্ঠান দু’টি। শ্যামলী মহিলা সমিতি নামে এমন একটি সংগঠনের সদস্য সাদেকা বানু। যার সদস্য সংখ্যা ১৯৪০ জন।মহিলা বহুমূখী শিক্ষা কেন্দ্র-এমবিএসকের মৎস্য কর্মকর্তা মো.রায়হান আলী জানান,‘সাদেকা বানু তাদের একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। দীর্ঘ ৭/৮ বছর ধরে তাকে সহায়তা করছি আমরা।তিনি বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা উৎপাদন করলেও গত বছরেই প্রথম আমরা তাকে পরীক্ষামূলকভাবে এককেজি ‘তৃতীয় প্রজন্ম’ বা জি-৩ রুই এর রেনু দেই পোনা উৎপাদনের জন্য। তারপর তিনি আরো দুইকেজি আরো ‘তৃতীয় প্রজন্ম’ বা জি-৩ রুই এর রেনু ক্রয় করে পুকুরে পোনা উৎপাদনে নামে। এতে তিনি ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন। তার পোনা এখন জেলা ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও যাচ্ছে মাছ চাষের জন্য। আমরা খুকই গর্বিত। আমাদের উদ্যোক্তার সাফল্যে।’তাকে সব রকম সহযোগিতা দিচ্ছে.দিনাজপুর জেলা মৎস্য বিভাগ।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.আশরাফুজ্জামান জানান, ওয়ার্ল্ডফিশ উদ্ভাবিত ‘তৃতীয় প্রজন্ম’ বা জি-৩ রুই এর পোনা উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন,নারী উদ্যোক্তা সাদেকা বানু। তার সাফল্যে এখন অনেকে অনুপ্রাণিত। আমরা সবরকম প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে তাকে সহযোগিতা করছি। অন্যরাও চাইলে এ সহায়তা পাবে। আমরা চাই নারীরা আরো এগিয়ে আসুক এধরনের কার্যক্রমে। এসব কাজে তাদের সাফল্য পাবার বেশি সুযোগ থাকে।’নারী উদ্যোক্তা সাদেকা বানুর সাফল্য এখন অনেকের অনুপ্রেরণা। তার সাফল্য দেখে অনেকে এখন মৎস্য চাষে ঝুঁকছেন। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে ছুঁটে আসছেন তার মাছের খামার দেখার জন্য।

দিনাজপুর,স্বাবলম্বী,মাছ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত