কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। এতে করে অনেকটাই দুশ্চিন্তামুক্ত বোরো চাষিরা। হাওরের বোরো ফসলকে উজানের ঢলে সৃষ্ট আগাম বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে এসব বাঁধ বেশ কয়েক বছর ধরে কার্যকর ভুমিকা পালন করে আসছে। চলতি বছর নির্ধারিত মেয়াদেই বাঁধের কাজ শেষ হবে, এমনটিই আশা করছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। চলমান বাঁধের কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে তদারকিতে থাকা জেলা প্রশাসন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জেলার শতভাগ হাওর অধ্যুষিত উপজেলা ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামসহ জেলার হাওর অধ্যুষিত মোট ৯টি উপজেলায় ১২৪ টি বাঁধের কাজই ১২৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বেশিরভাগ বাঁধের মাটি ভরাটের কাজ রয়েছে শেষ পর্যায়ে।
চলতি মৌসুমে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪১ কিলোমিটার বাঁধ মেরামতের কাজ বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২০২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর শুরু হয়েছে এসব বাঁধের কাজ। শেষ হওয়ার নির্ধারিত মেয়াদ হলো ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী।
২০১৭ সালে উজানের পাহাড়ি ঢল আর টানা বর্ষণে বোরো ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার পর, ২০১৮ সাল থেকে হাওরের কৃষকদের বোরো ধান ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। চলতি বছর সঠিক সময়ে বাঁধ মেরামত হচ্ছে তাই স্বস্তিতে রয়েছেন হাওরের বোরো চাষিরা।
জেলার ইটনা উপজেলার জিউলের হাওরের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ঁএ বাঁধ হওয়াতে আমরা আগাম বন্যার ভয় থেকে নিশ্চিন্ত আছি। কোন সমস্যা নাই। আমরা কৃষকেরা ধান কেটে এ বাঁধের উপর দিয়ে চলে যাবো বাড়িতে। এ বছর মাঘ মাসের প্রথম থেকে বাঁধ দেওয়া হচ্ছে তাই বন্যায় ফসল ক্ষতি করতে পারবেনা, বোরো জমির জন্য খুব উপকার হয়েছে।"
মিঠামইন হাওরের কৃষক সিদ্দিক মিয়া বলেন, "এই হাওরে ১৫ একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছি আমি। এই বাঁধ হওয়াতে আমাদের ক্ষতি বা সমস্যা হবেনা। এ বছর বাঁধ মজবুত হচ্ছে, আমরা কৃষকেরা খুব আনন্দিত। ফসল নিয়ে আমাদের কোন টেনশন নাই।"
কিশোরগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, "উজানের ঢলে সৃষ্ট আগাম বন্যার কবল থেকে হাওরের বোরো ধান রক্ষা করার জন্য প্রতি বছরের মতো এ বছরও ডুবন্ত বাঁধ মেরামত করা হচ্ছে। চলতি বছর ১৪১ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত হচ্ছে। কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আশাকরছি যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এই কাজ শেষ হবে। সম্পুর্ন কাজ শেষ হলে কৃষকেরা নির্বিঘ্নে তাদের পাঁকা ধান ঘরে তোলতে পারবেন।"
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদ বলেন, "এ পর্যন্ত বাঁধের গ্রায় অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১২৪ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) নিয়ে আমাদের উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ কাজ করছেন। এটা বাস্তবায়নে মূল কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। শুরু থেকে এ পর্যন্ত যতটুকু কাজ হওয়ার কথা সে বিষয়ে আমরা সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছি। আর সামনে যে সময় আছে তার মধ্যে বাকিটা করতে সমর্থ হবো।"
চলতি মৌসুমে কিশোরগঞ্জ জেলায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওরেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর।