কক্সবাজার শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাদশাঘোনা এলাকা। নৌবাহিনীর সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে ১০/১২ জন শ্রমিক প্রকাশ্যে কেটে নিচ্ছে একটি বিশাল আকৃতির সরকারি পাহাড়। কেউ শাবল দিয়ে পাহাড় কাটছেন, কেউ পাহাড়ের মাটি পরিবহন করছেন। ইতিমধ্যেই কাটা হয়েছে পাহাড়টির আনুমানিক এক লক্ষ ৯০ হাজার ঘনফুট মাটি।
পাহাড় কাটায় ব্যস্ত শ্রমিক মো. হোছন ও কবির বলেন, 'রবি আলম মাঝি আমাদের এখানে পাহাড় কাটায় লাগিয়েছেন। তিনি একটু আগে কাজ দেখে গেছেন। দুই মাস ধরে আমরা রবি আলমের পক্ষ থেকে এখানে মাটি কাটার কাজ করছি।' পাশেই পাহাড় কেটে নির্মানাধীন ভবনের শ্রমিক হাসান বলেন, 'পরিবেশ অধিদপ্তর, এসি ল্যান্ডসহ সবার সাথে কথা বলেই এখানে পাহাড় কাটা ও ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। জায়গার মালিক মেঘা সব কিছু ম্যানেজ করেছেন। জানতে চাইলে রবি আলম বলেন, 'মেঘার ওখানে আমি কয়েকদিন মাটি কাটার কাজে লোক দিয়েছিলাম। এখন আমি সেখানে নেই। ওই মহিলার কাজকর্ম ভালো নয়। তার বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে করেন, আমরাতো শ্রমিক।'
অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মাঙাই বম প্রকাশ মেঘা ফোন ধরেন নি। পরবর্তীতে মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোন সাড়া দেননি।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বান্দরবান মৌজার লালমোহনবাগান এলাকার চমশিম বমের মেয়ে মাঙাই বম প্রকাশ মেঘা গত দুই বছর ধরে বাদশাঘোনা এলাকায় একের পর এক কয়েকজন দখলদারের কাছ থেকে আনুমানিক ২০ শতক সরকারি পাহাড় কিনে নেন। এরপর থেকে তিনি সেখানে শীর্ষ পাহাড় কর্তনকারি মোহাজেরপাড়া এলাকার ফকির মোহাম্মদের পুত্র রবি আলমকে দিয়ে পাহাড় কাটা শুরু করেন। পাহাড় কাটতে গিয়ে তিনি সেখানে নৌবাহিনীর সীমানা প্রাচীরের বেইজ ভেঙে প্রাচীর ঘেঁষে পাহাড়ের মাটি কেটে নেন। এতে সীমানা প্রাচীরটি ঝুঁকিতে পড়েছে। যেকোনো সময় এটি ধসে পড়লে আশপাশের বসতি উচ্ছেদ সহ নানা আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, নৌবাহিনীর মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীর ঝুঁকিতে ফেলে প্রকাশ্যে একটি বিশাল সরকারি পাহাড় কেটে নেয়া হচ্ছে গত কয়েক মাস ধরে। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অভিযোগ করলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। হয়নি কোন নিয়মিত মামলা, হয়নি উচ্ছেদ, এমনকি পাহাড় কাটা বন্ধেও কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এলাকাবাসী আরও জানান, এটি যেন "আইন সবার জন্য সমান নয়" এমন অবস্থা। টাকা ওয়ালা এবং প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যে আইনের লঙ্ঘন করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়না।অথচ এর আশপাশে অন্য কেউ সামান্য এক কোদাল পাহাড়ের মাটি নিলেও সাংবাদিক থেকে শুরু করে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট লোকজন দৌড়ে গিয়ে হইচই শুরু করে দেয়।
স্থানীয় বাদশাঘোনা জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোবারক হোসাইন বলেন, 'প্রকাশ্যে দিনের বেলায় পাহাড় কাটা হচ্ছে। এভাবে পাহাড় কাটলে পুরো এলাকা ঝুঁকিতে পড়বে। এসি ল্যান্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তর গিয়ে কাজ বন্ধ এবং নিয়মিত মামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর দিনই অন্তত ৩০ জন শ্রমিক দিয়ে পাহাড় কাটা ও ভবন নির্মাণের কাজ অব্যাহত রাখা হয়। মামলাও করা হয়নি।এছাড়া একটি সরকারি বাহিনীর সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে পাহাড় কাটা হচ্ছে। পাহাড়খেকোদের সাহস কতো তা তো বুঝতে বাকি থাকে না।'
জানতে চাইলে পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, 'প্রকাশ্যে নির্বিচারে পাহাড় কাটার বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে। এরপরও পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকা রহস্যজনক। এছাড়া এতোবড় পাহাড় কাটার ঘটনায় নিয়মিত মামলা না হওয়া এবং অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, 'ছবি দেন, ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী বলেন, এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে মামলা দায়েরের জন্য বলা হয়েছিল। আপনি পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করেন। এরপরও কিছু না হলে আমি বিষয়টি দেখবো।