মোটা অংকের টাকা দিয়েও হয়নি এমপিও, সিরাজগঞ্জে হার্টএ্যাটাকে শিক্ষিকার মৃত্যু

প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:২৫ | অনলাইন সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ

এমপিওভুক্তির জন্য মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়েও নাম না থাকায় সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে হার্টএ্যাটা করে রোকেয়া বেগম (৪৭) নামে এক স্কুল শিক্ষিকার মৃত্যুর অভিযোগ ওঠেছে। তিনি ওই উপজেলার গোদাগাড়ী চকপাড়া গাড়াবের বহুমুখী হাই স্কুলের ইংরেজি শিক্ষিকা। অবশেষে এ ঘটনায় আগামী ৩ দিনের মধ্যে ওই শিক্ষিকার পরিবারকে ৪ লাখ টাকা ফেরত দিতে হবে এবং তদন্ত সাপেক্ষে শিক্ষা বিভাগে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পাশ্ববর্তী বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভুদমারি গ্রামের শিক্ষক আব্দুল করিম বাদশার স্ত্রী রোকেয়া ২০০৪ সালে এই স্কুলে ইংরেজী শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। তার যোগদানের আগে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি উন্নয়নের নামে রোকেয়া ও তার স্বামীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেয়া হয় এবং পরে তাকে সমাজ বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে দেখানো হয়। ২০২২ সালের জুনে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভ’ক্তি হয় এবং এ এমপিওভ’ক্তিতে তার নাম থাকার জন্যও টাকা নেয়া হয়। এমপিওভ’ক্তির পর  শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতা আসলেও ওই শিক্ষিকার বেতন ভাতা আসেনি। পরবর্তীতে ওই শিক্ষিকা রোকেয়া রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডসহ অনান্যস্থানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার নাম এমপিওভুক্তি হয়নি। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম নাকি ব্যবস্থাও নিচ্ছিলেন। কিন্তু ২০২৩ সালেও তার বেতন ভাতা আসেনি। এ কারণে মানসিকভাবে তিনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। গত মাসের ২৯ জানুয়ারী তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ ফেবুয়ারী ভোর রাতে তিনি মারা যান। পরদিন স্বজনরা টাকা ফেরতের দাবিতে শিক্ষিকার লাশ নিয়ে ওই বিদ্যালয় মাঠে বিক্ষোভ করেছেন। ওই স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক উন্নয়নের নামে দফায় দফায় প্রায় ১০ লাখ টাকা নেয়া হয়। এমপিওভুক্তে তার নাম না থাকায় ও টাকা ফেরত না পাওয়ায় হার্ট এ্যাটাক করে রোকেয়ার মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে এ প্রতিবেদক ওই স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে না পেলেও কথা হয় সহকারী প্রধান শিক্ষিকা মিনারা জান্নাত ও শরীর চর্চা শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকের সাথে।

তারা এসব তথ্যের আংশিক স্বীকার করে বলেন, ওইদিন স্কুলে শিক্ষিকার লাশ নিয়ে স্বজনরা বিক্ষোভকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পুলিশ কর্মকর্তারা স্কুলে আসেন এবং তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার এক আলোচনায় ৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা তাকে ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেন ওই স্কুল ম্যানেজিং কমিটিকে। এ নির্দেশ মোতাবেক আগামী ৩ দিনের মধ্যে এ টাকা ফেরত দিবে কমিটি।

এ বিষয়ে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম ও সভাপতি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ বাবলুকে একাধিক ফোন দিলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। কাজিপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মজিদ এসব তথ্য স্বীকার করেছেন এবং এ ঘটনায় থানায় একটি জিডি করার কথাও বলেন তিনি।

কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহরাব হোসেন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, এ বিষয়ে ওই স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে এবং আগামী তিনদিনের মধ্যে প্রায় ৪ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার সময় দেয়া হয়েছে এবং এ ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে শিক্ষা বিভাগে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।