ভয়াবহ পাহাড় কাটা, দখল, বালি বাণিজ্য দেখে বিস্মিত তদন্তকারী কর্মকর্তা

প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৫৯ | অনলাইন সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের পানেরছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রতন লাল মহত এর অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার ঘোষ তদন্ত কাজ শুরু করেন। তিনি এসময় অভিযোগকারীর বক্তব্য শুনেন এবং লিখিত জবানবন্দি গ্রহণ করেন। পরে জব্দকৃত ডাম্প ট্রাক ছেড়ে দেয়ার স্থান এবং পাহাড় কাটার একাধিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। 

এসময় পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ, সাংবাদিক ও পরিবেশকর্মী সিরাজুল ইসলাম, কক্সবাজার সচেতন নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব মোরশেদ আলম, পানেরছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রতন লাল মহতসহ বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। 

অভিযোগকারী কক্সবাজার সচেতন নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব মোরশেদ আলম বলেন, 'পাহাড় কর্তনের মাটি ভর্তি দুটি ডাম্প ট্রাক জব্দ করার পর অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ছেড়ে দেয়া এবং পাহাড় কাটার বেশ কয়েকটি ঘটনা নিয়ে ৯ মাস আগে রেঞ্জ কর্মকর্তা রতন লাল মহত এর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর অভিযোগটির তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ করার পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ায় অনেক আলামত নষ্ট হয়ে গেছে। এরপরও তদন্ত কর্মকর্তাকে লিখিত জবানবন্দি এবং ঘটনাস্থল সমূহ সরেজমিন দেখানো হয়েছে।

তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার ঘোষ বলেন, 'রেঞ্জ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা বিষয়ে অভিযোগের তদন্ত চলছে। এর অংশ হিসেবে আজ (বৃহস্পতিবার) মাঠ পর্যায়ে সরেজমিন তদন্ত করি। তদন্ত প্রতিবেদন দ্রুত বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বরাবর দাখিল করা হবে বলে সংযোগ বিছিন্ন করে দেন। দ্বিতীয় দফা পুনরায় কল করা হলে তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেনি।

পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, 'পানেরছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রতন লাল মহত এর অনিয়ম-দুর্নীতি এবং দায়িত্ব অবহেলার কারণে পানেরছড়া রেঞ্জে বনজ সম্পদ উজাড় এবং পাহাড় কাটা অব্যাহত রয়েছে। আশা করি অভিযোগটি দক্ষতার সাথে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে ২০২৩ সালের ২ মে কক্সবাজার সচেতন নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব মোরশেদ আলম পানেরছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রতন লাল মহত ও বন বিট কর্মকর্তা সোহেল রানার বিরুদ্ধে কক্সবাজার দক্ষিণ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এতে ২০২৩ সালের ৬ এপ্রিল দক্ষিণ মিঠাছড়ির  পানেরছড়ায় ছালামত উল্লাহর পয়েন্টে পাহাড় কেটে বালি পাচারের সময় ছালামত উল্লাহ'র মালিকানাধীন ডাম্প ট্রাক এবং ২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল পানেরছড়া ক্যান্টনমেন্টের উত্তর পাশে আদর্শগ্রাম এলাকায় জনৈক ফরিদ ও রাজা মিয়া মেম্বারের অবৈধ পয়েন্ট থেকে পাহাড় কেটে বালি উত্তোলন করে পাচারের সময় সালাহউদ্দিনের মালিকানাধীন ডাম্প ট্রাক জব্দ করে অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া পানেরছড়ায় আবু তাহের, ছালামত উল্লাহ, কামরুল হাসান, ফরিদ কোম্পানি, রাজা মিয়া মেম্বার, সালাউদ্দিন, আমিন, মনজুর আলম, চাইল্লাতলীতে জসিম উদ্দিন, মফিজ আলম, ফিরোজ, আবদুল মান্নান, আবদুল্লাহ, শফিকুর রহমান, মনির আহমদ, মাহমুদুল হক, শাহাবুদ্দিন, আবদুর রশিদ প্রকাশ মলই রশিদ, পানেরছড়ার বাবুল, নজরুল, চাইল্লাতলীর ইসলাম, আবছার, বদি আলম, রহিমুল্লাহ, নুর মোহাম্মদ, কালা খোন্দকার পাড়ার নুরুল ইসলাম, নুরুল হক, বশর, নুরুল আবছার, আমানুল হক, মুন্না, হাড়িরমাথার বেলাল, আজিম, কাইম্মারঘোনার বাবুল, সাদরপাড়ার মোহাম্মদ আলম প্রকাশ মাতআলম, গোস্ত রশিদ, মলই, ভাইপুত নজরুল, লালু, বিসিক এলাকার মন্নান, ছোবহান, শাহজাহান, ওয়াজেদ আলী সহ অন্তত  ৫০ জনের বিরুদ্ধে পাহাড় কর্তন করে ডাম্প ট্রাক যোগে মাটি ও বালি পাচারের অভিযোগ আনা হয়।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার এসিএফ মহোদয় রেঞ্জ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তে এসেছিলেন। স্যার' তদন্ত শেষে রেঞ্জ কর্মকর্তার বিলাসী খাবারে অংশ নেন। খাবারের তালিকায় কি কি রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রেজুখালের ছোট মাছ, পাহাড়ী মোরগ, সবজিসহ ১২ আইটেম।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও)  মো. সারওয়ার আলম পানেরছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের সত্যাতা নিশ্চিত করে বলেন, যার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে, তার আয়োজিত খাবারে অংশ নেয়া ভালো হয়নি। প্রয়োজনে তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হবে।

প্রসঙ্গত ঃ পানেরছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তার নানা অপকর্ম নিয়ে ইতিমধ্যে দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশে সচিত্র একাধিকবার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।