সুবিধাবঞ্চিত মানুষের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন জেসমিন প্রেমা
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:০২ | অনলাইন সংস্করণ
উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ভিন্ন ভিন্ন পেশাজীবীরা। দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির দিনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ১৫৪৯ জন।
তার মধ্যে রয়েছেন দলীয় বিভিন্ন পদে দায়িত্ব প্রাপ্ত মহিলা নেত্রী, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, সামাজিক ও এনজিও ব্যক্তিত্ব। সংরক্ষিত নারী আসনে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সেক্টরে অবদান রাখা ও গুণী নারীদের অগ্রাধিকার প্রদান করবে বলে আশা যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় মনোনয়ন নেওয়া অনেকের নামই আলোচনায় রয়েছেন। তেমনই একজন চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করা সামাজিক ও এনজিও ব্যক্তিত্ব জেসমিন প্রেমা। যিনি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে মাঠ পর্যায়ে নারী জাগরণ, নারীর অধিকার আদায়, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও নারীকে কর্মমুখী করার লক্ষ্যে অবিচল কাজ করে যাচ্ছেন।
জেসমিন প্রেমা একজন সফল উদ্যোক্তা এবং সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) একটি অলাভজনক, বেসরকারি এবং অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী নারী-প্রধান উন্নয়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে স্কাসের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে নিয়ে দেশজুড়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
জেসমিন প্রেমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন। তরুণ বয়স থেকেই বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে পত্রপত্রিকায় লেখালেখির পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে নিয়মিত জড়িত ছিলেন। তার শৈশব থেকেই সামাজিক পরিবর্তনের জন্য কাজ করার এবং তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করার প্রবল ইচ্ছা ছিল। কীভাবে মানুষের উন্নয়ন করা যায়, আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন করা যায়, বঞ্চিত নারী ও শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায় ইত্যাদি নিয়ে তিনি চিন্তাভাবনা করেছিলেন। শৈশবের সেই চিন্তাই তাকে স্কাস নামে একটি উন্নয়ন সংস্থার বর্তমান প্রধান হতে অনুপ্রাণিত করেছিল। সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) এর চেয়ারম্যান হওয়ার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সম্মানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।
জেসমিন প্রেমার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং দক্ষ নেতৃত্বে সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবায় বিভিন্ন প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে দরিদ্র, প্রান্তিক এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি করতে সক্ষম হয়। এইছাড়াও ইপিআই, পুষ্টি, নিঃসন্তান নারী সুরক্ষা; নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন এবং হাইজিন; এইচআইভি/এইডস, ম্যালেরিয়া এবং টিবি নিয়ন্ত্রণ; শিশু, কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা; খাদ্য নিরাপত্তা; পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা; শিশু সুরক্ষা এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা (GBV), জৈব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ; জীবিকা প্রাথমিক পুনরুদ্ধার এবং দুর্যোগ সম্প্রদায়ের জন্য আশ্রয়, জীবিকা এবং জীবন দক্ষতা শিক্ষা, আইজিএ এবং প্রান্তিক গোষ্ঠীর জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ; নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন কর্মসূচি; স্বল্প খরচে আবাসন, পশুসম্পদ, সামাজিক বনায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন, অধিকার, ন্যায়বিচার ও সুশাসন কর্মসূচি; নিরাপদ অভিবাসন প্রকল্প, জরুরি প্রতিক্রিয়া, রোহিঙ্গা সংকটের প্রতিক্রিয়া এবং বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা এবং ওকালতি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক কাজ করে সমাজ পরিবর্তনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন।
জেসমিন প্রেমা বর্তমানে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিভিন্ন নেটওয়ার্কিংয়ের ফোরামের সাথেও সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ কান্ট্রি কোঅর্ডিনেশন মেকানিজম (BCCM), গ্লোবাল ফান্ড,ফেডারেশন অব এনজিওস ইন বাংলাদেশ (এফএনবি), বাংলাদেশের এসটিআই/এইডস নেট, বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ-বিএমএসপি,নারীদের জন্য (FWBW) ফোরাম, জনসংখ্যা শিক্ষার জন্য ক্যাম্পেইন (CAMPE),তথ্য, প্রতিক্রিয়া, প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমগুলির জন্য নেটওয়ার্কিং (NIRAPAD), ন্যাশনাল ফোরাম অফ অর্গানাইজেশনস ওয়ার্কিং উইথ দ্য ডিজেবলড (NFOWD), স্বেচ্ছাসেবী স্বাস্থ্য সেবা সমিতি (VHSS), ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ফর মাইগ্রেন্টস রাইটস বাংলাদেশ (NAMR,B), বাংলাদেশ আন্তঃধর্মীয় শান্তি ও বিচার পরিষদ (BICPAJ), জনস্বাস্থ্য আন্দোলন (পিএইচএম) সহ বিভিন্ন ফোরামে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এইছাড়াও নারী জাগরণের নেত্রী জেসমিন প্রেমা সামাজিক কাজের জন্য মোহনদাস গান্ধী পুরস্কার,ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার,সমোদর কর্তৃক সামাজিক কাজের জন্য বিশেষ পুরস্কার, এশিয়া চিন্নমুল মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশন কর্তৃক বিশেষ পুরস্কার, ঢাকা মিডিয়া ক্লাব লিমিটেড কর্তৃক সামাজিক কাজের জন্য বিশেষ পুরস্কার ও ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস সোসাইটি কর্তৃক মানবাধিকার পুরস্কার অর্জন করেছেন।
সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন সংগ্রহ জমা প্রদান প্রসঙ্গে জেসমিন প্রেমা বলেন, ৯৩ সাল থেকে বিভিন্ন ভোলান্টিয়ার সংস্থার সাথে কাজ করি। স্কাসের মাধ্যমে এই সরকারের এবং দলের হয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জায়গায় সেমিনারে আন্তর্জাতিক মানুষদের কাছে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। আমি সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা স্কাস এর মাধ্যমে পঁয়তাল্লিশ লাখ মানুষকে সেবা দিয়েছি। এই সেবাটা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী এবং শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুবিধাবঞ্চিত নারী এবং শিশুর জন্য ছিল।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, মানবতার মা উখিয়াতে রোহিঙ্গাদেরকে ২০১৭ সালে আশ্রয় দেয়। বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে যখন তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়, উনি তাদেরকে বুকে তুলে নেয়। তারপর থেকে কক্সবাজারে আমি কাজ করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনর স্বপ্নের প্রকল্প আশ্রয়ণ প্রকল্প ভাসানচরে রোহিঙ্গাদেরকে অস্থায়ীভাবে রাখার ব্যবস্থা করার জন্য যখনঅ চেষ্টা করছিলেন তখন আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিভিন্ন এনজিও, আইএনজিওরা এটার বিরুদ্ধে ছিল। সেই সময় একমাত্র নারী প্রধান সংস্থা হিসেবে ভাসানচরে গিয়েছি।
৯০ এর দশকে কাজ করেছি সম্প্রদায় সম্প্রীতি পরিষদেও যেখানে আসতেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি দলের হয়ে দৈনিক আজকের কাগজ সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ফিচার লিখার কাজ করেছি। ১৯৯৫ সালে আওয়ামী লীগ বিরোধী দল থাকাকালীন অসহযোগ আন্দোলনে কাজ করেছি। দল যখন ক্ষমতায় আসে ওইসময় বন্যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পার্টি অফিসে রুটি বানিয়ে বন্যা কবলিতদের মাঝে বিতরণ করতাম। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন দলের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে গিয়ে নির্যাতিত হয়েছি।
বিগত ৩০ বছর ধরে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি নিঃস্বার্থভাবে নীরবে,প্রধানমন্ত্রীর যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাংলাদেশ বাস্তবায়নে। আমি মনে করি ভালো কাজের মূল্যায়ন হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নারী নেতৃত্ব আরো এগিয়ে আসবে এবং ভালো কাজের সংখ্যা বাড়বে।
তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য কোয়ালিটি কাজ দরকার, দলের মধ্যে সে কোয়ালিটির মানুষ ও কর্মী দরকার। যারা দল সরকার ও দেশের জন্য নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে যাবে। যদি দল আমাকে মূল্যায়ন করে তাহলে আরো ব্যাপকভাবে কাজ করার সুযোগ পাবো। আমি দেশবাসী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট দোয়া চাই। ভালো কাজের মূল্যায়ন প্রধানমন্ত্রী সবসময় করেছেন ভবিষ্যতেও করবেন। দেশ ও দশের কল্যাণে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছি, ভবিষ্যতেও তার ব্যত্যয় হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। আমরা তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাবো।