সেই সার্জেন্ট মাজাহারুলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:১২ | অনলাইন সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
কক্সবাজার শহরের কলাতলী পয়েন্টে অবৈধভাবে পার্কিং করা যাত্রীবাহি বাস থেকে চাঁদা আদায়ের ছবি ধারণ করায় সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় ট্রাফিক সার্জেন্ট মাজাহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে তদন্ত কর্মকর্তা একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
গতকাল রোববার পুলিশ সদর দপ্তরের (ডিসপ্লেন শাখার) এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওই কর্মকর্তা দাবি করেন, কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মিজানুর রহমানের প্রদত্ত প্রতিবেদনে এই ঘটনায় সার্জেন্ট মাজাহারুলের প্রচুর অসংগতির পাশাপাশি সাংবাদিক রাশেদুল মজিদেরও ভুল ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। তবে নানা ভাবে চেষ্টা করেও জেলা পুলিশের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে কপি প্রতিবেদকের হাতে সংরক্ষিত না থাকলেও এক পলক দেখার সুযোগ হয়েছে। এদিকে এঘটনার ১১ দিন পার হলেও বুক ফুলিয়ে কক্সবাজারে আনাচেকানাচে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সেই সার্জেন্ট মাজাহারুল। যার কারনে সাংবাদিক মহল সহ বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
গতকাল দুপুরে নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কক্সবাজারে ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত টিআই পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা মাজাহারুলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করার সত্যাতা নিশ্চিত করে বলেন, এই ঘটনার পর সার্জেন্ট মাজাহারুলকে কক্সবাজার সদর থেকে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে টেকনাফে কর্মরত আছেন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা খারাপ রিপোর্ট দিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
অন্য একটি সূত্র বলছে, সার্জেন্ট মাজাহারুল চট্রগ্রামসহ ভালো জায়গায় পোস্টিং এর জন্য তদবির করছেন।
সুত্র মতে, পেশাগত দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে ছবি তুলতে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মাজহারুলের হাতে গত বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে কক্সবাজার শহরের কলাতলী মোড়ে
লাঞ্ছিত হন দৈনিক সকালের কক্সবাজারের বার্তা সম্পাদক রাশেদুল মজিদ। এসময় সার্জেন্ট মাজহারুল সাংবাদিক রাশেদুল মজিদের মোবাইল ফোন ও পত্রিকার পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় কক্সবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান কে প্রধান করে এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে কক্সবাজার জেলা পুলিশ।
সাংবাদিক রাশেদুল মজিদ জানান, কলাতলী মোড়ে যানজট, অবৈধ পার্কিং এবং ট্রাফিকের একজন পুলিশ কর্মকর্তার অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহকালে তিনি সার্জেন্ট মাজহারুলের হাতে হামলার শিকার হয়েছিল। তিনি তার শাস্তি চান।
ওই সময় কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম ঘটনার বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর পরই সাংবাদিককের ছিনিয়ে নেয়া মোবাইল ফোন ও কার্ডটি উদ্ধার করে ফিরিয়ে দেন।
অভিযোগ প্রকাশ- কক্সবাজার ট্রাফিক বিভাগের অসাধু কিছু কর্মকর্তা এইসব অবৈধ পাকিং থেকে কোটি টাকার বাণিজ্য করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এমনকি ট্রাফিক পুলিশের বাণিজ্যের বিষয় অনেকটা প্রকাশ্যে। পার্কিং ছাড়াও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দালাল নিয়োগ করে মাসিক, ত্রৈমাসিক চাঁদাবাজি করে আসছে ট্রাফিক বিভাগ।
এদিকে এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মাজহারুলের শাস্তির দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, পেশাজীবি সংগঠন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। এছাড়া আমরা কক্সবাজারবাসী নামের একটি সংগঠন এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তার শাস্তির দাবি জানিয়েছিল কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ দ্রুত সময়ের মধ্যে সাংবাদিক রাশেদুল মজিদের উপর হামলাকারী পুলিশ সদস্যের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছিল। এদিকে আরেক বিবৃতিতে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইলেকট্রনিকস মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ।
ঘটনার পর (১ফেব্রুয়ারি) সার্জেন্ট মাজাহারুলের স্ট্যাটাস:
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমতে এখনো টিকে আছি। এই পর্যন্ত ২-৩ হাজার বার অনেকে চাকরী খাইছে, কমপক্ষে ৫০০০ বার হুমকী পাইছি। চিলে কান নিয়া গেছে বলে দয়া করে কেউ দৌড়ায়েন না এবং খুশি হওয়ারও কারন নাই। নিউজ দেখে অনেকে খুশিতে পাগল হয়ে গেছে, অপেক্ষা করেন ভাই নিউজ আসতেছে।
আমার চাকুরীই তো মামলা দেওয়া। তাই সততার সাথে মামলা দিতে গেলে এর থেকে বেশি ঝামেলায়ও পড়তে হয়।