ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বদ্ধপরিকর শ্রীপুর তুলা গবেষণা খামার

উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বদ্ধপরিকর শ্রীপুর তুলা গবেষণা খামার

তুলা এবং বস্ত্র উৎপাদনে বাংলাদেশের গৌরবময় ঐতিহ্য রয়েছে। তুলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের সভ্যতা ও অর্থনীতি। এটি আমাদের দ্বিতীয় মৌলিক চাহিদা বস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বস্ত্রখাতের অবদান অপরিসীম। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ ভাগ অর্জিত হয় বস্ত্রখাত থেকে যার প্রধান কাঁচামাল তুলা।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বস্ত্রকলের কাঁচামাল যোগানের উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের ১৪ই ডিসেম্বর তুলা উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সাল থেকে বাংলাদেশে তুলা চাষ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৬ সাল থেকে মাঠ পর্যায়ে তুলা সম্প্রসারণ কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু কাঙ্খিত উচ্চ ফলন লাভে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা হয়। সে প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে তুলা ফসলের গবেষণা ও সম্প্রসারণে ১৯৮৪ সাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে গাজীপুরের শ্রীপুর তুলা গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও বীজ বর্ধন খামার।

দেশে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে পাঁচটি গবেষণাকেন্দ্রের মধ্যে এটি একটি। প্রতিষ্ঠানটি তুলা কৃষকদের সহায়তায় উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বদ্ধপরিকর। আধুনিক ও স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি জেনেটিক্স ও প্ল্যান্ট ব্রিডিং এগ্রোনমি, সয়েল সাইন্স, এন্টোমলজি, প্যাথলজি বিভাগের আওতায় লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি তুলা ফসলের তুলনামূলক স্বল্পমেয়াদী সিডিবি তুলা এমওয়ানসহ প্রায় ৯টি জাত অত্র খামার হতে উদ্ভাবিত। এছাড়াও তুলা উৎপাদন সংক্রান্ত আধুনিক কলাকৌশল, সুষম সার ব্যবহার, পরিবেশ বান্ধব বালাই ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে চলমানা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শ্রীপুর পৌরসভার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে পুরাতন বাজার এলাকায় ১৯৮৪ সালে ১২৭.৫ হেক্টর জমি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘তুলা গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও বীজ বর্ধন খামার।’ গবেষণা কেন্দ্রটিতে তিন ক্যাটাগরির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার পদসহ মোট ৩৯ জনবল থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ১৭ জন। গবেষণাগারে আছে বহুমুখী সংকট। গবেষণা পরিচালনার জন্য কেন্দ্রটিতে পাঁচজন গবেষক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছে মাত্র দুইজন। শ্রীপুর তুলা উন্নয়ন ও বীজ বর্ধন খামারের কটন এগ্রোনোমিস্ট কৃষিবিদ মো. আব্দুল ওয়াহাব জানান, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় শ্রীপুর তুলা গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও বীজ বর্ধন খামারের গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

বর্তমানে জনবল ও বিজ্ঞানী সংকট থাকা সত্ত্বেও উচ্চফলনশীল, বালাইসহনশীল জাত উদ্ভাবন, হাইব্রিড বীজ উৎপাদন, তুলার স্বল্পমেয়াদী জাত উদ্ভাবন, উন্নত মসলিন তুলার জাত নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় তুলার বিধ্বংসী পোকা বোলওযার্ম প্রতিরোধী ২টি বিটি তুলার জাতের প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে যা ২য় জিএমও ফসল হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বিটি তুলা বোলওয়ার্ম প্রতিরোধী হওয়ায় রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের হার কম হবে যা এক দিকে পরিবেশবান্ধব অপর দিকে তুলার উৎপাদন খরচ কমাবে। এছাড়াও হেক্টর প্রতি বিটি তুলার গড় ফলন ৪-৪.৫ টন। বিটি তুলাচাষে বোলওয়ার্ম নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে উৎপাদন ব্যয় ১২- ১৫% কমবে এবং উৎপাদন ১৫ -২০% বাড়বে। বিটি তুলাচাষে পরিবেশগতও কৃষকের স্বাস্থ্যগত কোন ঝুঁকি নেই। ফলন ও আঁশের গুনগতমান ভালো হওয়ায় তুলার উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং তুলা চাষ করে কৃষকরা ও অধিকতর লাভবান হবেন। কৃষক পর্যায়ে উফসী জাতের বীজ সরবরাহের নিমিত্তে বীজ উৎপাদনের কাজ চলমান রয়েছে। গবেষণা কার্যক্রম ছাড়াও প্রশিক্ষণ সেবার মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি থেকে সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে জিনিং সুবিধা প্রদান করা হয়।

উন্নত,তুলা,শ্রীপুর
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত