জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে বাঁশের বেড়া দিয়ে ২০টি পরিবারের চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে মো. শহিদুল্লাহ ওরফে শাহেদ পুলিশ নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো এই রাস্তায় দেয়া হয়েছে কাঁটাজাতীয় গাছের ডাল ও কোদাল দিয়ে কেটে ফেলা হয় রাস্তা। আবার সেই রাস্তাতেই লাগানো হয়েছে সুপারি গাছসহ বিভিন্ন জাতের গাছের নতুন চারা। এতে গত ১৫ দিন ধরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে ২০ পরিবারের প্রায় দুই'শ মানুষ। ওই বিশ পরিবারের প্রায় ত্রিশ শিক্ষার্থী পোহাচ্ছেন সীমাহীন দুর্ভোগ। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের মৃগালী গ্রামের বড় বাড়িতে। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা( ইউএনও) বরাবর ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর পক্ষে লিখিত অভিযোগ করেছেন মো. হোসেনুর রহমান হোসেন।
শুক্রবার সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, চলাচলের রাস্তার দুই পাশে বাঁশের বেড়া দেওয়া। বেড়ার পাশেই সুপারিগাছ সহ বিভিন্ন জাতের চারা গাছ লাগানো। রাস্তাটির মাঝামাঝি কেটে করা হয়েছে বিশালাকৃতির একটি গভীর গর্ত। সরানো হয়েছে গর্তের মাটি।
অভিযুক্ত শাহেদ পুলিশের সহোদর ছোট ভাই আব্দুল জব্বার বলেন,' আমরা ছোটবেলা থেকেই এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে আসছি। কিন্তু আমার বড় ভাই বেআইনিভাবে এবং জুলুম করে দীর্ঘদিনের পুরোনো রাস্তাটিতে বেড়া দিয়ে ও মাটি কেটে মানুষগুলোর চলাচলের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি অনেকবার এই অন্যায় কাজটি করতে নিষেধ করেছি,কিন্তু সে কারো কথাই মানে না।'
ভুক্তভোগী পরিবারের মো. ইসলাম উদ্দিন(৫৩) বলেন, এটি আমাদের প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো রাস্তা। বাপ-দাদারা আমাদের চলাচলের এজন্য এই রাস্তা এজমালি করে রেখে গেছেন। রাস্তাটি দিয়ে আমরা প্রায় দুই'শ জন লোক চলাচল করি। এখন রাস্তায় বেড়া দিয়ে ও মাটি কেটে বন্ধ করায় আমাদের চলাচলে খুব কষ্ট হচ্ছে।
মোছা: তাসলিমা আক্তার নাদিরা(৩০) বলেন, 'বাড়ি থেকে বের হতে চাইলে ফসলি জমি, কাঁদা মাটি পেরিয়ে রাস্তার ওপাশে যেতে হয়। কিংবা অনেক দূর দিয়ে ঘুরে সড়কে ওঠতে হয়। তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে গেলে মারধর করতে আসে এবং প্রাণে মারার হুমকি দেয়। একজন লোক অসুস্থ হলে যে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাব এই উপায় নাই। আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুল- মাদ্রাসায় যেতে পারছে না। তাদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটেছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
মহেশপুর নুরানী মাদ্রাসার ছাত্র নূর মোহাম্মদ(৮) ও মহেশপুর দাখিল মাদ্রাসার ছাত্রী ইসরাত জাহান অনন্যা(১৩) জানায়,' আমাদের রাস্তায় বেরিগেড ও কেটে ফেলার দেওয়ার কারণে আমরা মাদ্রাসায় যেতে পারিনা। কয়েকদিন আগে একবার লাফ দিয়ে রাস্তার গর্ত পার হতে গিয়ে পায়ে ব্যাথা পেয়েছি। আমরা আমাদের রাস্তা দিয়ে স্কুলে যেতে চাই। অভিযুক্ত মো. শহিদুল্লাহ বলেন,' এটি আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি। আমার রাস্তায় আমি বেড়া দিয়েছি এবং গাছ লাগিয়েছি। তাদের জন্য বিকল্প রাস্তা আছে। তারপরও তারা যদি বসে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করতে চাইলে আমি রাজি আছি।
ইউপি চেয়ারম্যান জুবের আলম কবির রূপক বলেন, ' বিষয়টি জানার পর যাঁরা বেড়া দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে করেছে তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছি। কিন্তু তারা কিছুই জানায়নি। পরে আমি বিষয়টি মৌখিকভাবে ইউএনওকে অবহিত করেছি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, ' আমি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। । স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মৌখিকভাবে জানিয়েছিল। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বিষয়টি সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।