এবার দুটি এস্কেভেটর (খননযন্ত্র) লাগিয়ে আস্ত একটি বিশাল পাহাড় কেটে নিচ্ছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। কক্সবাজার শহরের কলাতলী বাইপাস সড়কের কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আবাসিক ফ্ল্যাট উন্নয়ন প্রকল্প-১ এলাকায় গত দুই দিন ধরে পাহাড় কাটার এ কর্মযজ্ঞ চলছে।
শনিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কক্সবাজার শহরের কলাতলী বাইপাস সড়কের কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়নাধীন আবাসিক ফ্ল্যাট উন্নয়ন প্রকল্প-১ এলাকায় নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের পূর্ব পাশে বিশাল আকৃতির পাহাড়। বিভিন্ন গাছপালা ও ঘন জঙ্গলে ভরপুর পাহাড়ে লাগানো হয়েছে দুটি এস্কেভেটর (খননযন্ত্র)। এস্কেভেটর দুটির সাহায্যে পাহাড়ের মাটি কেটে তা ট্রাকে তুলে দেয়া হচ্ছে। আর সেই মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রধান সড়কের পাশের খালি নিচু জমিতে। কাজ তদারকি করছেন বিভিন্ন পর্যায়ের ১০/১২ জন শ্রমিক ও কর্মচারি। তবে পাহাড় কাটার বিষয়ে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মচারী জানান, পাহাড়টির একাংশের মালিক কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। কাজ বাকি থাকায় মালিকদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদ রয়েছে। পাহাড়ের একাংশ কেটে সেখানে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় পাহাড় কাটার কাজ চলছে বলে তিনি জানান।
পাহাড় কাটার বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রিশাদ উন নবী পাহাড় কাটার কথা স্বীকার করে বলেন, 'আসলে আমাদের জমির মধ্যে ভবনের পেছনে একটা টিলা জাতীয় পড়ে গেছে। সেখানে আমাদের ফ্ল্যাট প্রকল্পের সাব স্টেশন সহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। যার কারণে দ্রুত কাজ চলছে।'
সূত্র জানিয়েছে, ফ্ল্যাট প্রকল্প শুরুর সময় পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন শর্তে পরিবেশ ছাড়পত্র পেয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেসময় পরিবেশ ছাড়পত্রের শর্ত লঙ্ঘন করে পাহাড়ের কিছু অংশ এস্কেভেটর দিয়ে কেটে নেয়া হয়। তখন পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একাধিকবার পরিদর্শন করা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আর ওই কেটে নেয়া অংশে দুটি ভবনের একাংশ গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে ভবন দুটির পূর্ব পাশে লাগোয়া পাহাড়টি কেটে নেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, 'উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কোথায় ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে তা আমার জানা নেই। আপনি তথ্য দিলে সেখানে ছাড়পত্রের শর্ত লঙ্ঘন করা হচ্ছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া আপনি নিউজ করেন, তখন নিউজের সুত্র ধরে আমরা পদক্ষেপ নেবো।'
এদিকে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মতো একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের পক্ষে পাহাড় কাটার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল। সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, 'কক্সবাজারে এমনিতেই ব্যক্তি পর্যায়ে উদ্বেগজনক হারে পাহাড় কাটার ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে এভাবে পাহাড় কাটা শুরু হলে কক্সবাজারে পাহাড় বলতে কিছু থাকবেনা।'
দ্রুত পাহাড় কাটা বন্ধ করে কর্তনকৃত পাহাড় পুনরায় ফিরিয়ে দিয়ে কক্সবাজারের প্রাণ প্রকৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি।