নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে র্যাব। অর্থ লেনদেনকে কেন্দ্র করে বিরোধে যুবক মোঃ রানাকে রাজধানীর শ্যামপুর থানাধীন জুরাইন এলাকায় নিজ বাড়িতে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে দুই সহোদর মোঃ সাব্বির হোসন (২০) ও তার ভাই সাজ্জাদ হোসেন (২৩)। পরে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা মডেল থানাধীন সিএসআরএম ডেইরী ফার্মের সামনে রাস্তার উপর সাদা প্লাস্টিকের বস্তার ভিতর রশি দিয়ে হাত, পা বাঁধা ও কম্বল দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় লাশটি ফেলে রেখে যায়। ঘটনার প্রায় ৭০ দিন পরে ক্লু-লেস ওই হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে র্যাব। ১৯ ফেব্রæয়ারি র্যাব-১১, সিপিসি-১ এবং র্যাব-১০, সিপিএসসি এর যৌথ অভিযানে প্রধান আসামী মোঃ সাব্বির হোসেনকে শ্যামপুর থানাধীন জুরাইন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত সাব্বির শ্যামপুর ব্রীজ এলাকার খোকন মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া আব্দুর রাজ্জাকের পুত্র।
১৯ ফেব্রæয়ারি বিকেলে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর সকালে ফতুল্লা মডেল থানাধীন সিএসআরএম ডেইরী ফার্মের সামনে রাস্তার উপর সাদা প্লাস্টিকের বস্তার ভিতর রশি দিয়ে হাত, পা বাঁধা ও কম্বল দিয়ে মোড়ানো অর্ধগলিত অবস্থায় একটি লাশ পাওয়া যায়। ভিকটিমের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং সংবাদপত্রে প্রচারের মাধ্যমে ভিকটিমের ছবি ও পরিহিত পোশাক দেখে নিহতের পরিবার ভিকটিম মোঃ রানাকে (২৮) শনাক্ত করে। নিহত রানা শ্যামপুর ব্রীজ এলাকার মৃত আব্দুল করিমের পুত্র। এ পাশবিক ও নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনাটি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামী সাব্বির (২০) এবং ভিকটিম রানা (২৮) পূর্ব পরিচিত এবং একই এলাকার বাসিন্দা। আসামী সাব্বির (২০) ও সাব্বিরের ভাই সাজ্জাদ (২৩) এবং ভিকটিম রানা (২৮) তাদের নিজেদের মধ্যে টাকা-পয়সা লেনদেন সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য আসামী সাব্বির (২০) এর বাসায় একত্রে মিলিত হয়। টাকা লেনদেন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা কাটা-কাটির একপর্যায়ে আসামী সাব্বির এবং তার ভাই সাজ্জাদ সুইচ গিয়ার দিয়ে ভিকটিম রানার বুকে আঘাত করলে ভিকটিম রানা মাটিতে পড়ে যায়। পরবর্তীতে আসামীরা ভিকটিম রানার মৃত্যু নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আরও একাধিক বার ছুরিকাঘাত করে। মৃত্যু নিশ্চিত হলে আসামী সাব্বির এবং তার ভাই সাজ্জাদ ভিকটিম রানার হাত, পা রশি দিয়ে বেঁধে কম্বল মুড়িয়ে বস্তাবন্দি করে ২-৩ দিন আসামী সাব্বিরের রুমে লুকিয়ে রাখে।
গত ৯ ডিসেম্বর ভোরে আসামী সাব্বির এবং তার ভাই সাজ্জাদ ফতুল্লা মডেল থানাধীন মুন্সিবাগ সাকিনস্থ সিএসআরএম ডেইরী ফার্মের সামনে বস্তাবন্দি লাশ ফেলে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা রুজু হলে আসামীরা আতœগোপনে চলে যায়। উল্লেখ্য, গ্রেফতারকৃত আসামী সাব্বির (২০) এর বিরুদ্ধে ডিএমপি কদমতলী থানায় একটি ছিনতাই এর মামলা চলমান রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।