ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মহেশখালিতে সাংবাদিককে হাত-পা কেটে নেওয়ার হুমকি

মহেশখালিতে সাংবাদিককে হাত-পা কেটে নেওয়ার হুমকি

সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক কালবেলা ও দৈনিক দৈনন্দিনের কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা প্রতিনিধি রকিয়ত উল্লাহকে মুঠোফোনে হুমকির পর ডেকে নিয়ে গিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর ও হাত-পা কেটে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়েছেন মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে 'সুমিতমো' নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি অফিসারের দায়ীত্বে থাকা মশিউর রহমান (৩৯) নামের এক ব্যক্তি।

এই ঘটনার পর নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গত মঙ্গলবার মহেশখালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রকিয়ত উল্লাহ।

জানা গেছে- গত ১৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলার মাতারবাড়িতে স্থানীয় কিছু জমি মালিকের সাথে চুক্তি অনুযায়ী বিলের টাকা না দেওয়ার ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করেন রকিয়ত। সংবাদ প্রকাশের পর তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে ০১৭১৭-০৭৪৪১৭ থেকে কল করে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয়ে একের পর এক হুমকি ও মন্দকথা বলতে থাকেন এক ব্যক্তি। পরবর্তীতে বিষয়টি ভুল বোঝাবোঝির দাবি করেন তিনি। এমতাবস্থায় নুর হোসেন সোহেল নামক ব্যক্তির মাধ্যমে সেটি অবসান করার কথা বলে রকিয়তকে তাদের কর্মচারীদের কোয়াটারে নিয়ে গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের এক পর্যায়ে এলোপাতাড়ী মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে তাকে একটি কালো গাড়িতে তুলে অজ্ঞাত স্থানের দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। এ সময় তাকে বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভেতরে টেকলিন নামের একটি কোম্পানির অফিসের সামনে নিয়ে গিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে আবারও অশ্লিল শব্দ ব্যবহার করে গালিগালাজ শুরু করেন এবং এক পর্যায়ে একটি কক্ষে নিয়ে যান। দীর্ঘ সময় ধরে তাকে ওই কক্ষে আটকে রেখে রকিয়তের হাত-পা কেটে সাগরে ভাসিয়া দেওয়ার হুমকি দেন। এ সময় তিনি নিজেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ দেশের বিভিন্ন বিতর্কিত ধনাঢ্য ব্যক্তির সাথে তার সখ্যতা রয়েছে বলে দাবি করে পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়ারও উপর্যুপোরি হুমকি দেন। এ অবস্থায় শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। ঘটনার পর প্রথমে বদরখালীর একটি হাসপাতাল ও পরে মহেশখালী হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। চিকিৎসকরা তাকে ট্রমা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন। এদিকে এ ঘটনায় নিজের নিরাপত্তা চেয়ে এবং হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সাংবাদিক রকিয়ত নিজে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

উল্লেখ্য, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় দৈনিক দৈনন্দিন পত্রিকায় 'চুক্তির মেয়াদ শেষ, জমিতে নির্মিত অবকাঠামো লুটপাট করতে মরিয়া রানা সিন্ডিকেট' শিরোনাম সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে জমির মালিকের সাথে চুক্তি নবায়ন না করে আইএইচআই কোম্পানি তাদের নির্মিত অবকাঠামোসহ নানা জিনিসপত্র টেকলিন কোম্পানিকে হস্তান্তর করে দেয়। কিন্তু টেকলিন কোম্পানির সেফটি অফিসার রানাসহ একটি সিন্ডিকেট ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে এরই মধ্যে অবকাঠামোগুলো ভেঙে ফেলে মালামাল লুটপাট করতে তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সংবাদে তুলে ধরা হয়।

সংবাদটিতে সাংবাদিকতার নিয়ম মেনে সকল পক্ষের বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছিলো। কিন্ত সংবাদে উল্লেখিত কোম্পানিগুলোর কোন দায়ীত্বপ্রাপ্ত না হয়েও মশিউর রহমান নামের ওই ব্যক্তির ভাড়াটিয়া স্টাইলে হুমকি দিয়ে ক্ষমতাধর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করেন। বিদ্যুৎ প্রকল্পের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছেন- ওই ব্যক্তি ওই পদে বর্তমান নয়, সাবেক পদবীধারী।

এ বিষয়ে মহেশখালী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. ইউনুস বলেন, সংবাদ প্রকাশে কোন অসংগতি থাকলে অভিযুক্তদের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদলিপি পাঠানো কিংবা দেশের প্রচলিত আইনে ব্যাবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সংবাদ প্রকাশের ঘটনায় কোনো ব্যাক্তি ওই সংবাদকর্মীকে হেনস্থা বা আটকিয়ে রাখার কোন সুযোগ নেই। এটা সম্পূর্ণ আইন বিরোধী। আমি ও আমার সংগঠন সুমিতোমো কোম্পানির একজন সিকিউরিটি অফিসার কর্তৃক সাংবাদিকে হুমকি ও আটকিয়ে রাখার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাই । একই সাথে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তাকে অপসারণ করার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় কঠোর মাঠ পর্যায়ে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সুমিতোমো কোম্পানীর সিকিউরিটি অফিসার মশিউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো প্রকার হুমকি দেয়নি বলে জানান। তবে বক্তব্যের এক পর্যায়ে রকিয়ত উল্লাহ'র করা প্রতিবেদনটি সত্য ছিলো বলে স্বীকার করে নেন।

এদিকে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প সুমিতোমো'র কোম্পানীর ইঞ্জিনিয়ার কাজী মহসিন বলেন, এ ধরনের ঘটনার বিষয়ে আমি জানি না। আপনাদের কাছ থেকে শোনলাম। কোন সিকিউরিটি অফিসার আইনগত ব্যাবস্থা না নিয়ে ব্যাক্তিগত কাউকে হেনস্থা বা লাঞ্ছিত করার সুযোগ নেই। ঘটনার বিষয়টি যাচাই-বাছাই ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানতে চাইলে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সুমতোমো কোম্পানীর সিকিউরিটি অফিসার মশিউরের সাথে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কোন সম্পর্ক নেই, তিনি প্রকল্পের কেউ নন। কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের অধীনে অনেক কোম্পানী সাপ্লাই বা বিভিন্ন কাজ করে। হয়তো তাদের কোন কর্মচারী হতে পারে সে। তার দায়ভার আমরা নিবো না। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়ার (থানায় মামলা করার) পরামর্শ দেন তিনি।

মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, সাংবাদিককে হুমকি ও লাঞ্ছিত করার ঘটনায় একটি সাধারন ডায়েরী পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক রকিয়ত উল্লাহ জানান, এ ঘটনার পর থেকে তিনি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় তিনি ও তার পরিবার জীবনের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছেন, মিথ্যা হয়রানি ও গুম হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

মহেশখালি,হুমকি,সাংবাদিক
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত