রংপুরে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর আমৃত্যু কারাদণ্ড

প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৩৯ | অনলাইন সংস্করণ

  রংপুর ব্যুরো

রংপুরের পীরগাছায় যৌতুক না দেওয়ায় স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে স্বামী জসীম উদ্দিন ভুট্টুকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত।

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক রোকনুজ্জামান এ রায় প্রধান করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলো। পরে তাদের পুলিশি পাহারায় আদালতের হাজত খানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

সেই সাথে হত্যাকান্ডে সহযোগীতা করা, লাশ গুম করা ও তথ্য গোপন করার অপরাধে প্রধান আসামির বাবাসহ অপর ৫ আসামিকে ৭ বছর করে সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।

দন্ডাদেশ প্রাপ্তরা হলেন- অভিযুক্তের বাবা বেলাল হোসেন, মা কুলসুম বেগম, বিপ্লব সরকার, নুর উদ্দিন ও খাজির উদ্দিন।

মামলার বিবরণে জানা যায, ১২ বছর আগে পার্শ্ববর্তী কিশামত ছাওলা গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে জছিম উদ্দিন ওরফে ভুট্টুর সাথে তার বড় মেয়ে আয়েশা বেগম বিউটির বিয়ে হয়। বিয়ের সময় নগদ ৪০ হাজার টাকা এবং দেড় ভরি সোনার গহনা, একটি নতুন বাই সাইকেল ও একটি বাছুর জামাতা জসিম উদ্দিকে দেওয়া করা হয়। ১২ বছরের সংসারে এই দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় দুই কন্যা জেসমিন ও জুই। এর পরেও মাঝে মাঝে আসামি জসিম উদ্দিন আবারো যৌতুক দাবি করে আসছিলো, যৌতুক দিতে অস্বীকার করলে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ৩১ মে তারিখে আসামি কৌশলে তার দুই মেয়ে জেসমিন ও জুইকে নানার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

পরদিন বিউটিকে বাবার বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে আসার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এ নিয়ে কথাকাটাকাটি হলে এক পর্যায়ে তাকে অমানুষিক নির্যাতন করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পুরো ঘটনা ধামা চাপা দেওয়ার জন্য বিউটির লাশ গোপনে তাদের বাড়ির অদুরে একটি পাট খেতে পুতে রাখে। সেখান থেকে দুর্গন্ত বের হলে আশে পাশের লোকজন সেখানে গিয়ে একটি লাশ মাটি চাপা দেওয়া অবস্থায় দেখতে পায়। পরে পীরগাছা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পাট খেত থেকে বিউটি বেগমের লাশ উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় নিহত বিউটি বেগমের বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক বাদী হয়ে আসামি জসিম উদ্দিনসহ ৭ জনের নামে পীরগাছা থানায় হত্যা মামলা মামলা দায়ের করে।
পুলিশ তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জসীট দাখিল করে। মামলায় ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষে বিজ্ঞ বিচারক আসামি জসিম উদ্দিনকে দোষি সাব্যস্থকরে আমৃত্যু কারাদন্ড এবং লাশ গুম করতে সহায়তা ও তথ্য গোপন করার অভিযোগে তার বাবা বেলাল হোসেন সহ ৫ আসামির প্রত্যেককে ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ প্রদান করেন। মামলার অপর আসামি বিলকিছ বেগমকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত।

সরকার পক্ষের বিশেষ পিপি জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন বলেন যৌতুক না দেওয়ায় নৃশংস হত্যাকান্ডটি ঘটায়। সে কারণে স্বামীর আমৃত্যু কারাদন্ড এবং তথ্য গোপন করায় ৫ জনকে ৭ বছর কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ রায়ে তারা সন্তোষ্টি প্রকাশ করছেন।

অপরদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী আব্দুল হক প্রামানিক এডভোকেট জানান, তারা ন্যায্য বিচার পাননি এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল দায়ের করবেন।