ঝরে পড়া চুলে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা তবে শ্রমিকরা মজুরী পাচ্ছে নগন্য 

প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৪, ১৮:৩১ | অনলাইন সংস্করণ

  বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

দিনাজপুরের চিরিবন্দর উপজেলায় নিজ উদ্যোগে গড়ে উঠেছে শত শত চুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা। এসব কারখানার অধিকাংশই উপজেলার রানীরবন্দর এলাকার বিভিন্ন গ্রামে অবস্থিত। এতে প্রায় ১০ হাজার পরিবারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় পাশাপাশি বদলে গেছে তাদের ভাগ্য। নারী-পুরুষ কাজ করে হচ্ছেন স্বাবলম্বী।

নারী শ্রমিকেরা দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে গুটি চুল বাছাই এবং পরিষ্কারের কাজ করে থাকেন। এতে তারা পেয়ে থাকেন ১০০ টাকা। সেই হিসেবে একজন নারী শ্রমিক মাসে এই কাজ করে আয় করেন ৩ হাজার টাকা। তবে একজন দক্ষ শ্রমিকের বেতন ১৫ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

নারী শ্রমিকেরা বলছেন, বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী এই মজুরি দিয়ে তাদের জীবন চালানো সম্ভব নয়। তবুও উপায় না পেয়ে সংসারের অভাব দূর করতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।

এই গুটি চুল প্রথমে মহিলা শ্রমিকের মাধ্যমে গুটি ছাড়িয়ে আলাদা করে প্রাথমিক পরিষ্কার এবং বাছাই কাজ করা হয়। এরপর এই বাছাই করা চুলগুলো ডিটারজেন্ট পাউডার ও শ্যাম্পু দিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরিষ্কার করা হয়। দ্বিতীয়বারের মতো পরিষ্কার করা এই চুল কারখানার ভেতরে নিয়ে কাটিং মেশিনের মাধ্যমে কাচি করা হয়। কাচি করা চুলগুলোকে একইসঙ্গে রাবার দিয়ে ছোট ছোট গোছায় বেঁধে আলাদা করা হয়। কারখানায় এই ছোট ছোট গোছা করা চুলগুলোকে বলা হয় লাচি।

এবার এই লাচি করা চুল পুনরায় শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করে ধুয়ে বাতাসে শুকানো হয়। শুকিয়ে চুল যখন উজ্জ্বল হয় তখন এগুলোকে শেষবারের মত কাটিং মেশিনে নেওয়া হয় ফিতা দিয়ে মেপে গ্রেডিং করে রেমি তৈরির জন্য। এই রেমি করা চুলই কারখানা থেকে বিক্রির জন্য প্রস্তুত হওয়া চুল। এরপর কারখানা মালিকেরা নিজেরাই ঢাকায় গিয়ে চুল বিক্রি করে থাকেন। রেমি (প্রক্রিয়াজাতকরণ) চুলের দৈর্ঘ্যের উপরই এর মূল্য নির্ভর করে। চুল যত লম্বা হবে বাজার দরও তত বেশি হবে।

চুলের এই দৈর্ঘ্যের উপর ভিত্তি করে এর বাজার মূল্য সর্বনিম্ন ৬ ইঞ্চি চুল ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২২-৩২ ইঞ্চি সাইজের চুল প্রতিকেজি ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২২ ইঞ্চি থেকে ৩২ মাপের লম্বা চুলকে সর্বোচ্চ গ্রেডের চুল বলা হয়।নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলা এই চুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি সৃষ্টি করেছে সম্ভাবনার নতুন ক্ষেত্র। বর্তমানে চীনসহ কিছু দেশ বাংলাদেশে এসে এই খাতে বিনিয়োগও করছে। ফলে ছোট একটি খাত হলেও সেটি ধীরে ধীরে সম্ভাবনা জাগাচ্ছে।

নারী শ্রমিকরা বলেন, আমাদের এলাকায় এখন অনেক চুলের কারখানা। আমরা গরীব মানুষ দিন আনি দিন খাই। বাসায় বসে না থেকে এখানে চুলের কাজ করি। সারাদিন কাজ করে ১০০ টাকা পাই। মাসে ৩০ দিন কাজ করলে তিন হাজার টাকা পাই। বর্তমান বাজারে সবকিছুর দাম বেশি কিন্তু আমাদের মতো নারী শ্রমিকদের মজুরি কম।