অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থায় ত্রুটি, কক্সবাজারে লংবীচ সহ তিন হোটেলকে জরিমানা
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৪, ১৯:১১ | অনলাইন সংস্করণ
এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার
অগ্নি প্রতিরোধক দরজার বিপরীতে কাঠের দরজা, অকেজো স্মোক ডিটেক্টর, নেই পর্যাপ্ত ফায়ার এক্সটিনগুইশার, ফ্লোরের আয়তন অনুসারে নেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। এমনকি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের চূড়ান্ত সনদটিও নেই কক্সবাজারের অধিকাংশ হোটেলে-রেস্তোরাঁয়।রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজের রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ আগুনের পর সারাদেশে নড়েচড়ে বসেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সারাদেশের মতো মঙ্গলবার কক্সবাজারে হোটেলে ও রেস্তোরাঁগুলোতে অভিযানে নেমেছে জেলা প্রশাসন। এসময় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহারসহ নানান ত্রুটি পাওয়ায় কক্সবাজারের তারকামানের হোটেল লং বীচ সহ তিন প্রতিষ্টাকে ১ লাখ ৭০ হাজার জরিমানা করেছে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে তারকামানের হোটেল লং বীচকে ১ লাখ ,সী প্যালেসকে ৫০ হাজার ও কাচ্চি ডাইন রেস্তোরাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (এনজিও সেল, জিসিও- মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া) দায়িত্বরত নওশেদ ইবনে হালিম অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, 'কক্সবাজার হোটেল ও রেস্তোরাঁ গুলোর ভবন সেফটি-সিকিউরিটি আছে কিনা সেটা দেখতে অভিযান শুরু হয়েছে। এর মধ্যে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহারসহ নানান ত্রুটি পাওয়ায় কক্সবাজারের তারকা হোটেল লং বীচসহ তিন প্রতিষ্টানকে জরিমানা করা হয়েছে। তিনি এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে দাবি করেন।
অভিযোগ উঠেছে, কক্সবাজারের যে কয়টি তারকামানের হোটেলে দেশীয় পর্যটকের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি বিদেশি পর্যটক অবস্থান করে লংবীচ তাদের একটি। কিন্তু এই হোটেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অনিয়মের কারণে ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে পর্যটকরা অবস্থান করেছে এই হোটেলে। বাইরে তারকামানের দাবী করে বেড়ালেও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাই ত্রুটিপূর্ণ এই হোটেল।
এদিকে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি খবর পেয়ে সোমবার হোটেলটিতে তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে যায় চ্যানেল ২৪। এসময় প্রশ্ন শুনেই ইন্টারভিউ দেওয়ার আগে হোটেলটির লবিতে চ্যানেল ২৪ এর সাংবাদিক আজিম নিহাদকে নাজেহাল করে ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায় হোটেলটির বিক্রয় বিভাগের কর্মকর্তা সরওয়ার। এক পর্যায়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে হোটেল থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয় তাদের। এই ঘটনা নিয়ে সোমবার রাত থেকে সোশাল মিডিয়ায় সাংবাদিক মহলের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয় এবং নিন্দার ঝড় শুরু হয়।
কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সিনিয়র স্টেশন অফিসার দোলন আচার্য্য সাংবাদিকদের বলেন, কক্সবাজার শহরের ৫ শতাধিক হোটেলের মধ্যে হাতেগুনা ৭ থেকে ১০ টি হোটেল অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেছে। বাকি হোটেলগুলোর বাস্তবায়ন করার আগ্রহও নেই। এমনকি অনেক তারকা হোটেলের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাও অসম্পূর্ণ বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
সূত্র মতে, কক্সবাজারে হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ, রিসোর্ট রয়েছে মোট ৪৯৮টি। এ ছাড়া রেস্তোরাঁ রয়েছে চার শতাধিক। এর মধ্যে জেলা প্রশাসনের নিবন্ধন রয়েছে মাত্র ১৫০টি আবাসিক হোটেল এবং ৬৯টি রেস্তোরাঁর। এমন হোটেল-রেস্তোরাঁও আছে, যেগুলো আসলে নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য নয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকা হিসেবে কক্সবাজারে বিপুল সংখ্যক হোটেল-রেস্তোরাঁ নিবন্ধনের বাইরে থাকায় সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।