ফসলি জমি ও লবণ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশংকা

কুতুবদিয়ায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ইউপি চেয়ারম্যানের খাল ভরাট

প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৪, ১৬:১৮ | অনলাইন সংস্করণ

  এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার

কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে উত্তর ধূরুং ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হালিমের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে খাল দখল করে মাটি ভরাটের অভিযোগ উঠেছে। খোদ চেয়ারম্যান উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়ে খালটি  ভরাটের কাজ করছেন বলে দাবি করেন তিনি। 

গতকাল শনিবার সকালে কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম খাল ভরাটের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, একটি পরিত্যক্ত জায়গায় চেয়ারম্যান নিজ খরচে ভরাট করে সিএনজি স্টেশন করছে। বিধিমতে তা করা যায় কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান। এক পর্যায়ে প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত খাল ভরাটের ছবি তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়। পরে দ্বিতীয় দফা তাঁকে ফোন করা হলে  ফোন রিসিভ করেনি তিনি।

স্থানীয় সূত্র মতে, কুতুবদিয়া উপজেলার ধূরুং বাজারের উত্তর পাশে তিন রাস্তার সংযোগ স্থলে আজম সড়কের কালবার্ট সংলগ্ন এলাকায় রাস্তার পশ্চিমে খালের পূর্ব পাশের বিশাল একটা অংশ দখল করে রেখেছেন উত্তর ধুরুং ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল হালিম সিকদার। গত কয়েকদিন ধরে  দুটি স্ক্যাবেটর দিয়ে মাটি কেটে দিনরাত খাল ভরাট করছেন। তাঁর দেখানো পথে অন্যরাও যে যার মতো দখল করে রেখেছেন খালটি। এর আগেও তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে মেনেজ করে খালসহ সরকারি খাস জমি দখল করেছেন। দখলকৃত সেইসব জায়গায় গড়ে তুলেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তর ধূরুং ও দক্ষিণ ধূরুং ইউনিয়নের সিমান্তবর্তী খালটি, পশ্চিমে উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের আমিরার পাড়া, দক্ষিণ ধূরুং অলি পাড়া থেকে প্রদিপ পাড়া হয়ে পিলটকাটা খালে সংযুক্ত হয়েছে। একসময় খালটি খরস্রোতা ছিল। নৌকা দিয়ে লবণ সহ বিভিন্ন মালামাল আনা-নেওয়া করা হতো এই খাল দিয়ে। এখন খালটি দখল-বেদখলে মৃত প্রায়। বাজারের ময়লা পানি আর দখল দূষণের  ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুতুবদিয়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, উত্তর ধুরুং ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল হালিমের বিরুদ্ধে খাল দখলের অভিযোগটি সত্য। আমরা কুতুবদিয়া বাপার নেতৃবৃন্দরা তার সাথে কথা বলে সেখান থেকে সরে আসতে বলেছি। তিনি স্থানীয় প্রশাসনের প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছে। খাল দখল থেকে সরে না আসলে আমরা বাপা কুতুবদিয়ার নেতৃবৃন্দরা এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে কঠোর আন্দোলনে যাবো। 

স্থানীয়রা আরো বলেন, প্রতিনিয়ত কুতুবদিয়ার সব জায়গায় প্রভাবশালীদের দ্বারা খালসহ সরকারি জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় পানি নিষ্কাশন বিঘ্নিত হয়ে জ্বলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মানুষের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি ডুবে যাবে, লবণ উৎপাদন ব্যাহত হবে। গুরুত্বপূর্ণ খালগুলোর দখলদারিত্ব বন্ধ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

খাল দখলের বিষয়ে উত্তর ধুরুং ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল হালিম সিকদার সাংবদিকদের বলেন, আমি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়ে খালে মাটি ভরাট করছি। নিজের পকেটের টাকা খরচ যাত্রী ছাউনি তৈরি করবো। সেখানে একটি সীমানা গেইট থাকবে। উপজেলা সিটিজেন পার্কের মতো করে সৌন্দর্য বৃদ্ধির করবো। পরে প্রকল্প দিয়ে সেই খরচ মিঠিয়ে নেয়ার কথা জানান তিনি। 

এ প্রসঙ্গে জানতে শুক্র, শনিবার কয়েকদফা কুতুবদিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) জর্জ মিত্র চাকমা সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব  হয়নি। এমনকি প্রতিবেদকের পরিচয় নিশ্চিত করে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে এসএম দিলেও ছাড়া দেননি।

খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ

আইনে যা বলে

জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সব পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইনের (২০০০) ৫ ধারা অনুযায়ী, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। এ ছাড়া এ ধরনের জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর করা যাবে না। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ।

জলাধার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, কেউ আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে অনধিক ৫ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে। শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি আইন অমান্যকারীর নিজ খরচে সেটা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার বিধানও রয়েছে। জলাশয় ভরাট বন্ধের দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে খাল ভরাটকাজ চললেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো উপজেলা প্রশাসন তাঁকে সহযোগিতা করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে।