রংপুরে মাছ উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা

প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৪, ২০:০০ | অনলাইন সংস্করণ

  রংপুর ব্যুরো

রংপুর জেলায় মাছের বার্ষিক চাহিদা রয়েছে ৬৩ হাজার টন। এর বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ৬২ হাজার টন। ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার টন। তবে ঘাটতি মেটাতে বা উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে মৎস্য অধিদপ্তরের হাতে নতুন করে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নেই। রাজস্ব খাত থেকে মাঠ পর্যায়ে কিছু কাজ চললেও প্রায় এক বছর ধরে মৎস্য কর্মকর্তারা কার্যত দাপ্তরিক কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছেন। ফলে মাছ উৎপাদনে পিছিয়ে থাকা রংপুর জেলায় দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রংপুর মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট পুকুর রয়েছে ৪২ হাজার ৩৩৯টি। যার আয়তন ৮ হাজার ৪৪৯ দশমিক ৭৫ হেক্টর। এর মধ্যে ১০২টি সরকারি পুকুরের আতয়ন ৮৬ দশমিক ৭৫ হেক্টর। এর বাইরে পুকুর রয়েছে ৪২ হাজার ২৩৭টি। যার আয়তন ৮ হাজার ৩৬৩ হেক্টর। এছাড়া ৬৯৭ দশমিক ৫৯ হেক্টর আয়তনের সরকারি বিল রয়েছে ১৩৭টি। এর বাইরে ১ হাজার ৩১৬ দশমিক ১ হেক্টর আয়তনের বিল রয়েছে আরো ১২২টি। সরকারি প্লাবন ভূমি রয়েছে ১৯টি। বেসরকারি প্লাবন ভূমি রয়েছে ১৯৯টি। জেলায় ১১টি খাল এবং নদী আছে ছয়টি। এছাড়া বাণিজ্যিক খামার রয়েছে ৮৯৪টি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২০১৫-২৩ সাল পর্যন্ত নয় বছরে বিভিন্ন মেয়াদে পাঁচটি প্রকল্প চালু ছিল। এতে প্রতি বছরে কমপক্ষে পাঁচ হাজার মাছচাষি ও উদ্যোক্তারা সুফল পেয়েছেন। ২০১৫-২২ সাল পর্যন্ত জেলায়  চালু ছিল রংপুর বিভাগীয় মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প। ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প চালু ছিল ২০১৫-২২ সাল পর্যন্ত। জাতীয় কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প (এনএটিপি-২) চলেছে ২০১৬-২৩ সাল পর্যন্ত। ব্রুড ব্যাংক স্থাপন প্রকল্প ২০১৬-১৭ সাল পর্যন্ত এবং ২০১৬-২১ সাল পর্যন্ত চলেছে জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য আবাসস্থল উন্নয়ন প্রকল্প। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে জলাশয় সংস্কার, অভয়াশ্রম স্থাপন, কমিউনিটি বেজড মৎস্য চাষ, আয়বর্ধক উপকরণ বিতরণ, সরকারি খামার উন্নয়নে উপকরণ সরবরাহ, সংস্কারমূলক হ্যাচারি স্থাপন, প্রদর্শনী, মাঠ দিবস এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়ে। যা মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করেছে। মূলত ২০২২ সালে চারটি প্রকল্প শেষ হয়েছে। শুধু এনএটিপি-২  প্রকল্প শেষ হয়েছে ২০২৩ সালের জুনে।

রংপুরের মাটি বেলে ও বেলে দোআঁশ হওয়ায় পুকুর, খাল ও বিলের পানির ধারণক্ষমতা কম। ফলে প্রতিকূলতার মধ্যে চাষীদের মাছ উৎপাদন করতে হয়। তাই মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলো মাছ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মিঠাপকুর উপজেলার বালারহাট এলাকার মাছচাষি মোখলেসার রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলাম। দেশে এসে ২০১৮ সাল থেকে মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। ৩ একর ৩৭ শতক জমিতে পাঁচটি পুকুরে কার্প, ক্যাট ফিশ এবং দেশীয় প্রজাতির পাবদা ও গুলসাসহ বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ করছি।’

মাছ চাষের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, ‘এ অঞ্চলের মাটি পানি ধরে রাখতে পারে না। এজন্য পুকুরে স্যালো মেশিন দিয়ে প্রতিদিন পানি দিতে হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কৃষিকাজে সেচের জন্য বিদ্যুতের প্রতি ইউনিট বিল নেয়া হচ্ছে ৪ টাকা। যেখানে ২০ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অথচ মাছ চাষের জন্য সেচ দিতে চাষীদের প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে ১৩ টাকা।’

মাছের খাবারের দামও বেড়েছে উল্লেখ করে মোখলেসার রহমান বলেন, ‘প্রতি কেজি মাছ উৎপাদনে শুধু খাবার লাগছে ৯৩ টাকা। এছাড়া অন্যান্য উপকরণ যোগ করলে প্রতি কেজি মাছ উৎপাদন করতে প্রায় ১৫০ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। কিন্তু উৎপাদিত মাছের সেই অনুপাতে দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। কিছুদিন আগে স্থানীয় মৎস্য অফিস থেকে প্রকল্পের মাধ্যমে আমার পুকুরে দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রদর্শনী দিয়েছিল। এজন্য ৩০ হাজার টাকা দেয়ার কথাও  হয়েছে। অবশ্য এখনো তা পাইনি।’

প্রকল্প না থাকলে চাষিদের মাঝে নতুন প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয় না বলে মনে করেন রংপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান মানিক। তিনি বলেন, ‘এখানকার মাটির পানি ধারণক্ষমতা কম, তাই চাষিদের প্রতিকূলতার মধ্যে মাছ চাষ করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর প্রয়োজন।’

মো. বদরুজ্জামান মানিক বলেন, ‘কোন জেলায় বিশেষ কোন মাছ চাষ খুবই ভালো হচ্ছে, তা যদি রংপুর জেলার চাষিদের নিয়ে দেখানো হয়, তাহলে অনেকে মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবে। কিন্তু প্রকল্প না থাকলে তা সম্ভব নয়। এছাড়া প্রকল্পের মাধ্যমে অনেককে একযোগে সহায়তা করাও সম্ভব।’