ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ ফিরিয়ে আনতে দস্যুদের সঙ্গে মালিকপক্ষের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তবে মুক্তিপণ নিয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। মুক্তিপণ নিয়ে দরকষাকষি চলছে। তবে কত টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে সে বিষয়ে মালিকদের পক্ষ থেকে কোনও তথ্য নিশ্চিত করা হয়নি। ২৩ নাবিকসহ জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে ছাড়িয়ে আনতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জাহাজের মালিক পক্ষ।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন সাখাওয়াত হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, জাহাজের সব নাবিক সুস্থ আছেন। বৃহস্পতিবারও (২১ মার্চ) পরিবারের সঙ্গে জাহাজের একাধিক নাবিক যোগাযোগ করেছেন। নাবিকদের বিষয়ে জাহাজ মালিকের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে।
সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজের ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান বাংলা জানান, জাহাজটি আগের অবস্থানে আছে। অর্থাৎ তীর থেকে মাত্র দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নিয়ে নোঙর করেছে দস্যুরা। তবে জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারে জলদস্যুদের ওপর যৌথভাবে চাপ বাড়িয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতীয় নৌবাহিনী।
তিনি আরও বলেন, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে অভিযান পরিচালনা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজ মালিককে প্রস্তাব দিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতীয় নৌবাহিনী। তবে এ প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজ মালিক সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি ছাড়া বিদেশি সংস্থাগুলো বাংলাদেশি জাহাজে অভিযান পরিচালনা করতে পারবে না।
ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান আরও বলেন, সোমালিয়ার দস্যুদের ভাষা সোমালি এবং আরবি। এখন জাহাজ মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করছে দস্যুদের ভাড়া করা দোভাষী। সে ইংরেজি জানা লোক। সমঝোতার বিষয়টি সময় সাপেক্ষ বিষয়। সমঝোতা হওয়ার পর টাকা পাঠানো হবে। এরপর মুক্তি দেওয়া হবে।
জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে ২৩ নাবিকসহ জিম্মি করার ৯ দিনের মাথায় বুধবার (২০ মার্চ) দুপুরে দস্যুরা যোগাযোগ করে জাহাজ মালিকের সঙ্গে। দস্যুদের পক্ষে ইংরেজি জানা লোক এ যোগাযোগ করে।
কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, জাহাজের সব নাবিক সুস্থ আছেন। দস্যুদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনও সমঝোতা হয়নি। তবে যোগাযোগ আছে। আমরা সব নাবিককে সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছি।
এদিকে, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে জিম্মি ২৩ নাবিককে নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন স্বজনরা। কবে বন্দিদশা থেকে তারা ছাড়া পেয়ে ফিরে আসবে সেদিকে চেয়ে আছেন স্বজনরা।
জিম্মি অয়েলার মোহাম্মদ শামসুদ্দিনের ভগ্নিপতি বদরুল ইসলাম জানান, আমার শ্যালক শামসুদ্দিনের সঙ্গে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার কথা হয়েছে। একই সঙ্গে কয়েক সেকেন্ডের একটা অডিও ভয়েস পাঠিয়েছে। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করেছেন। তবে তিনি সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে। তারাও জানতে পেরেছে জলদস্যুদের পক্ষ থেকে জাহাজ মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার বিষয়টি। তিনি আরও বলেন, জলদস্যুরা জাহাজে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থানে আছে। আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর জাহাজ কিংবা বিমান কাছে এলে সব নাবিকদের জাহাজের ব্রিজে (জাহাজ চালানোর কক্ষ) তুলে নিয়ে যায়। সেখানে নাবিকদের অস্ত্রের মুখে রাখা হয়।
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি কবির গ্রুপের এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। এসআর শিপিং সূত্র জানিয়েছে, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আছে। গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে এসব কয়লা নিয়ে যাত্রা শুরু করে জাহাজটি।
মার্চে সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরের জলদস্যুর কবলে পড়ে জাহাজটি।
সূত্র জানায়, জাহাজে জাহাজটি আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে সোমালিয়ার অফকোস্টে ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দুরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জাহাজটিতে মোট ২৩ বাংলাদেশি নাবিক আছেন। ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লার মূল্য প্রায় ৮০ কোটি টাকা বা ৬৬ লাখ ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ডলার কয়লার দাম ১১০ থেকে ১২০ ডলারে ওঠানামা করছে। এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরবসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।