ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চাপে পড়েছে জলদস্যুরা

চাপে পড়েছে জলদস্যুরা

ভারত মহাসাগরে ২৩ নাবিকসহ জিম্মি হওয়া জাহাজ 'এমভি আব্দুল্লাহ' উদ্ধারে তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। এমনটি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শনিবার জিম্মি এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ থেকে পাঁচ থেকে সাত নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ। আবার জিম্মি জাহাজ থেকে স্থলভাগে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। বিবিসি সোমালির তথ্যমতে এমনটি খবর পাওয়া গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে জলে ও স্থলে দুই দিক থেকে জলদস্যুদের ওপর দৃশ্যত চাপ বাড়ছে বলে মনে করেন অভিজ্ঞ নাবিকেরা। এই চাপে জিম্মিদের মুক্ত করতে জলদস্যুরা দ্রুত সমাধানে আসতে পারে বলে ধারণা করছেন কেউ কেউ।

এদিকে, জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিক ক্রু বেশির ভাগ সময় জাহাজটির ব্রিজেই অবস্থান করছেন। বাংলাদেশি এই জাহাজটির পাশে ইইউর যুদ্ধ জাহাজ অবস্থান নেওয়ার খবরে শঙ্কায় পড়েছে জলদস্যুরা। তাই নাবিকদের ব্রিজেই রাখছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

জাহাজটি জিম্মি করা সোমালিয়ার জলদস্যুরা মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে কিনা তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। গত বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুরে ফোনে যোগাযোগ করে মালিক পক্ষের সঙ্গে। শনিবার চার দিন পার হলেও আর কোনো সাড়া মেলেনি। তবে মালিক পক্ষ বলছে, একেবারে যোগাযোগ হয়নি বিষয়টি সে রকম নয়। যোগাযোগ আছে বিভিন্ন মাধ্যমে। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে জানা যায়, জাহাজের ২৩ নাবিক ক্রু এখনও ব্রিজেই অবস্থান করছেন। মাঝে মাঝে কেবিনে থাকতে দিলেও বেশির ভাগ সময় থাকছেন ব্রিজে। তবে নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত আছে বলে মালিক পক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা এই ঘটনার শুরু থেকে খোঁজখবর রাখছেন। জানতে চাইলে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন জানান, এটা ঠিক, জলদস্যুদের ওপর একটা চাপ তৈরি হয়েছে। সাধারণত এ ধরনের চাপ তৈরি হলে সমাধানও তাড়াতাড়ি হয়। যদিও জলে-স্থলে এই চাপ দস্যুরা কীভাবে নিচ্ছে, তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম জানান, পান্টল্যান্ড পুলিশ কী করছে, তা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিষয়ে আমাদের জানা নেই। আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীকে কোনো অভিযানের সম্মতিও দিইনি আমরা। আমরা শুধু আমাদের নাবিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছি।

এদিকে, জলদস্যুরা বিচ্ছিন্নভাবে নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে। শুক্রবার রাতেও এক নাবিক পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন।

শিপিং সেক্টরের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের যুদ্ধ জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর কাছে অবস্থান নেওয়ায় একটি চাপ তৈরি হয়েছে। এতে হয়তো জিম্মিদশা থেকে নাবিকদের মুক্তির প্রক্রিয়া দ্রুত হতে পারে। তবে এটার নেতিবাচক দিকও আছে। এ ধরনের চাপ তৈরির কারণে আলোচনার পরিবেশ তৈরির সুযোগ বাধাগ্রস্ত হবে। বাস্তবে এখন তাই হচ্ছে। তবে মালিক পক্ষ এবং নৌবাণিজ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়া এম আবদুল্লাহ জাহাজে কেন অভিযান চালানোর সুযোগ নেই।

জাহাজটি জিম্মি করার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে নজরে রাখে। তবে বৃহস্পতিবার রাতে সংস্থাটি এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে জানায়, সোমালিয়া এলাকায় তারা যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে। ওই পোস্টে যুক্ত করা ভিডিও চিত্র ও স্থিরচিত্রে যুদ্ধজাহাজ থেকে একটি হেলিকপ্টার জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজের ওপর দিয়ে উড়ে যেতে দেখা যায়।

একটি ছবিতে দেখা যায়, ইইউ নৌবাহিনীর দুজন সদস্য যুদ্ধজাহাজটি থেকে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের দিকে নজর রাখছেন। ইইউ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করলেও কোনো অভিযানের বিষয়ে জানায়নি। এর আগে তারা জাহাজটি উদ্ধারে অভিযানের কথা জানালেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্মতি দেওয়া হয়নি। ভারত মহাসাগর থেকে ১২ মার্চ ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ার দস্যুরা। জাহাজটি এখন সোমালিয়ার গদভজিরান জেলার জেফল উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল (১ নটিক্যাল মাইল= ১ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার) দূরে নোঙর করে রেখেছে দস্যুরা। জাহাজটি ছিনতাইয়ের ৯ দিনের মাথায় দস্যুরা মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। জিম্মি জাহাজ ও নাবিকদের মুক্ত করা নিয়ে আলোচনা চলছে।

জলদস্যু,চাপ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত