শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার ৫০ শয্যার একটি হাসপাতালে চলছে বিদ্যুৎহীন চিকিৎসা সেবা। সেই সাথে বিদ্যুৎ নেই পাশের ২০ শয্যার আই কেয়ার সেন্টারেও। এতে দুর্ভোগে পড়েছে রোগী, চিকিৎসক ও নার্সরা। এছাড়া বন্ধ রাখা হয়েছে রাত্রীকালিন জরুরী বিভাগে রোগী দেখা। ভর্তি রোগীকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে অন্য কোন হাসপাতালে। এছাড়া ১৪ দিন ধরে বন্ধ আছে সব ধরনের পরীক্ষা নীরিক্ষার কাজ। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় সেবা প্রার্থীরা। তবে শীগ্রই এ সমস্যার স্কমাধান হবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আশুলিয়ার জিরানী বাজারস্থ বাংলাদেশ কোরয়িা মৈত্রী হাসপাতালের দুটি ইউনিট ও আবাসিকে বিদ্যুৎ নেই মার্চের ১৪ তারিখ থেকে। যেখানে আবসিকসহ প্রতিদিন ২০০-২৫০ কেভি বিদ্যুৎ এর প্রয়োজন হয়। তবে বর্তমানে বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় এই হাসপাতালে প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে স্বল্প আয়ের মানুষদের গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ।
হাসপাতালের রোগী ,চিকিৎসক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালটির বিদ্যুৎ সরবরাহ দেখভাল করে ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১। গত ১৪ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকেলে বজ্রপাতের সময় হঠাৎ করেই সংযোগের তার পুড়ে যায়। এতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, প্যাথলজি, এক্সরে কক্ষ, অস্ত্রোপচার কক্ষ (ওটি) এবং নতুন ও পুরাতন দুটি ভবনের সব কক্ষে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে জরুরী বিভাগ সন্ধ্যার পর থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালটিতে ২০১৯ সালে ৮০ কেভির অত্যাধুনিক শক্তিশালী জেনারেটর স্থাপন করা হয়। কিন্তু জ্বালানি তেল কেনার অর্থ বরাদ্দ নিয়ে জটিলতা থাকায় জেনারেটরটি মাঝে মধ্যে জরুরী প্রয়োজনে স্বল্প সময়ের জন্য চালু করা হয়। জেনারেটরটি চালু করলে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৬-৭ লিটার জ্বালানি তেলের প্রয়োজন হয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বুধবার ( ২৭ মার্চ) সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, পুরোনো ও নতুন ভবনে বিকল্প ব্যবস্থায় কক্ষের বাতি জ্বলছে। তবে নতুন ভবনের মেডিসিন ও গাইনি বিভাগ পুরোপুরি অন্ধকার। বিদ্যুৎ বিহীন হয়ে পড়েছে জরুরি বিভাগও। অন্ধকারের সঙ্গে ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে চিকিৎসক ও রোগীরা। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একটি দলকে হাসপাতাল ছেড়ে বাইরে অবস্থান করতে দেখা যায়। মুঠোফোন ও মোমবাতির আলোয় রোগীদের দেখভাল করছেন অনেকে।
হাসপাতালটির টিকিট মাস্টার মোকছেদ জানান, গত ১৪ তারিখ থেকে বিদ্যুৎ নাই্। গরমে ও অন্ধকারে রোগীদের টিকিট দিতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় কোন পরীক্ষা এখানে করা যাচ্ছে না। শুধু তাই নয় দিনে ও রাতে মোবাইল ফোনের আলো ও টর্চ জ্বেলে শৌচাগারে যেতে হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা তুহিন নামের একজন জানান, গত কয়েকদিন আগেও হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। তখন বিদ্যুৎ না থাকায় বাহিরে পরীক্ষা করতে হয়েছে। গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত টাকা। এখনও বিদ্যুৎ না আসায় শত শত রোগীকে বাহিরে পরীক্ষা করতে হচ্ছে। এছাড়া অতিরিক্ত খরচ দিয়ে অন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে।
মোমের আলোতে রোগী দেখছিলেন হাসপাতালের ডা. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত ১৪ দিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় মোমের আলো, মোবাইল ফোনের টর্চ লাগিয়ে রোগী দেখতে হচ্ছে। সেই সাথে প্রচন্ড গরম ও মশার উৎপাত রয়েছে। আমরা কৃর্তপক্ষকে জানিয়েছি এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
বিদ্যুতের তার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মুক্তা কন্সট্রাক্শনের নির্বাহী পরিচালক মনিরুল ইসলাম উজ্জল বলেন, ঘটনার পর বিষয়টি আমাদের জানিয়েছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ। কিন্তু মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা পুনরায় তার সরবরাহরে উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি দ্রুত তার পৌছে দেওয়া হবে।
এব্যাপারে বাংলাদেশ কোরিয়া মৈত্রী হাসপাতালের চীপ মেডিক্যাল অফিসার ডা: সুরজিৎ দত্ত মুঠোফোনে আলোকিত বাংলাদেশকে জানান, বজ্রপাতে বিদ্যুতের তার পুড়ে যাওয়ার পর থেকে তিনটি ভবনে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে গেছে। এর পর থেকে বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করা হলে পূর্বের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ক্যাবল দিতে রাজি হয়েছে। আশা করি দুই তিন দিনের ভিতর পুনরায় সংযোগ দেওয়া হবে।
তিনি জানান, এখনও সরকারি খাতে প্রতিষ্ঠানটি সংযুক্ত হয়নি তাই অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সঠিক সময়ে অনেক কিছুর অর্থ ব্যবহার করা যায় না। এতে করে মাঝে মধ্যে কোন কিছুর প্রয়োজনে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়।
উল্লেখ্য, কইকা (কোরিয়া)র উদ্যোগে ৩০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বতর্মানে এটি সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এইচএনপিএসপি প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। ৪জন ডাক্তার ছাড়াও এখানে মোট ১৭জন কর্তকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এদের মধ্যে এবার বিভিন্ন পর্যায়ের ২০জন কর্মচারীকে আউটসোর্সিংয়ে কোজ করেন।