মিয়ানমারের সংঘাত
ওপারে গোলাগুলি-বিস্ফোরণের বিকট শব্দ, আতঙ্ক এপারে
অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তৎপর বিজিবি
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩৫ | অনলাইন সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের পরিস্থিতির কারণে নতুন করে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।
এদিকে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির (এএ) চলমান সংঘাত ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ওপার থেকে ভেসে আসা গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আতঙ্কে রয়েছে সীমান্তে বসবাসরত বাংলাদেশিরা। তবে মিয়ানমার সংঘাতের কারণে সে দেশের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তের বাসিন্দারা নিজ বাড়িতে অবস্থান করলেও তাদের আতঙ্ক কাটেনি। তবে চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
সীমান্তের একাধিক সূত্রে জানা যায়, রাখাইন রাজ্যের দু'টি গ্রাম হাস্যুরাতা ও নাখ্যংদিয়া থেকে মর্টার শেলের বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে। নতুন করে ওই এলাকায়ও সংঘাত ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মংডু শহরের উত্তরে নাকফুরা, বলিবাজার এবং দক্ষিণে হাস্যুরাতা ও নাইক্ষ্যংদিয়ায় আরাকান আর্মি ও সে দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘাত হয়। সীমান্তের এসব এলাকায় মঙ্গলবার রাতে অর্ধশতাধিক বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসছে । বিশেষ করে সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ সদরের কেরুনতলী, বরইতলী ও জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া ও খানকার ডেইল, সাবরাংয়ের লেজির পাড়া, আচারবনীয়া, নয়াপাড়া ও শাহপরীরদ্বীপ, হোয়াইক্যংয়ের খারাংখালী, ঝিমংখালী, হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার, ওয়াব্রাং, পুরানবাজার, ফুলের ডেইল, চৌধুরীপাড়াসহ অন্তত ২৫টি গ্রামে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যায়।
টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী জাফর আহমদ বলেন, মিয়ানমারের গোলাগুলি এক ভয়ানক বিষয়। তাদের আন্তঃকোন্দল দিন দিন বেড়ে আমাদের উপর প্রভাব পড়তেছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমাদের জীবনে সমস্যা ঘটতে পারে।
নাফনদীর নিকটবর্তী সাবরাং বাজার পাড়ার বাসিন্দা মো. ইব্রাহিম বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ মিয়ানমারের গোলাগুলির শব্দে ঘুমাতে পারিনি। প্রতি মুহুর্তে আতঙ্কে ছিলাম। গত রাত থেকে মুটামুটি একটু কমছে গোলাগুলি শব্দ।
শাহপরীরদ্বীপের বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, শাহপরীরদ্বীপ থেকে মিয়ানমারের দূরত্ব খুব বেশি নয়। মিয়ানমারে আরাকান আর্মি ও জান্তা বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে। তাদের গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণে আমাদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে ।
সাবরাং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছিদ্দিক আহমদ বলেন, এতদিন মিয়ানমারে সংঘাত চললেও তা সাবরাংয়ের মানুষ তেমন উপলব্ধি করতে পারেনি। গেল মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ভোর রাত পর্যন্ত থেমে থেমে প্রায় অর্ধশতাধিক মর্টার শেলের বিস্ফোরণ শুনতে পায় মানুষ। যা জনমনে ভীতি সৃষ্টি করে প্রতিনিয়ত।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতে এপারের সীমান্তের বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটান। রোহিঙ্গা আসার পর থেকে নাফনদী বন্ধ থাকলেও সীমান্তের বেড়িবাঁধের কাছে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বহু মানুষের চিংড়ি ও কাঁকড়া ঘেরসহ চাষাবাদের জমি ও ক্ষেত রয়েছে। ওপারে সংঘাত চলায় ঘের ও ক্ষেতে যেতে ভয় পান চাষিরা। চলতি সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিন রাত থেকে ভোর পর্যন্ত থেমে থেমে মর্টারশেলের বিস্ফোরণসহ গুলি ফায়ারের শব্দ এপারে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।