মামুনুল হকের রিসোর্টকান্ড
তিন বছরেও শেষ হয়নি নাশকতার ১৬ মামলার তদন্ত
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:৫৬ | অনলাইন সংস্করণ
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে আলোচিত হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হকের রিসোর্ট কান্ডের ৩ বছরেও শেষ হয়নি ১৬টি নাশকতার মামলার তদন্ত। ওই ঘটনায় কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলার বিচার কাজ শেষ পর্যায়ে আসলেও ৩ বছরে নাশকতার ১৬টি মামলার তদন্তকাজ এখনো শেষ করতে পারেনি পুলিশ। এসব মামলায় এখনো চার্জশীট দাখিল না করায় শুরু হয়নি বিচার কাজ। ওই ঘটনার পরে সোনারগাঁও থানায় ৮টি, সিদ্ধিরগঞ্জে ৭টি ও রূপগঞ্জে ১টিসহ মোট ১৬টি মামলা দায়ের হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোদীবিরোধী আন্দোলনের নামে ২০২১ সালের ২৮ মার্চ রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হাটহাজারীতে বেপরোয়া তান্ডব চালায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। ওইদিন হেফাজতের হরতালের নারায়ণগঞ্জ কাঁচপুর, সাইনবোর্ড ও রূপগঞ্জে ব্যাপক নাশকতা করে হেফাজত নেতাকর্মীরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের একাধিক স্পটে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ, যানবাহনে ভাঙচুর, সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনা ঘটে।
এরপর ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল রিসোর্টকান্ডে মামুনুল হকের ধর্ষণ কান্ডে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ওই বছরের ৩ এপ্রিল ‘বিকেল ৫টায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নাম্বার কক্ষে মামুনুল হককে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্নাসহ অবরুদ্ধ করে রাখে উপজেলা যুবলীগের, ছাত্রলীগ সহ স্থানীয় কয়েকজন। সন্ধ্যা ৭টায় মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে খবর পেয়ে স্থানীয় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা রয়েল রিসোর্ট ভাঙচুর করে নারী সহ মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় গাড়ি ভাঙচুর, মহাসড়কে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ, আওয়ামীলীগ অফিস, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতার বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। স্থানীয় এক সাংবাদিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে নির্যাতনের মুখে মামুনুল হকের কাছে ক্ষমা চাওয়াতে বাধ্য করার ঘটনাও ঘটে।
২৮ মার্চ হরতালে নাশকতা এবং ৩ এপ্রিল সোনারগাঁওয়ে রিসোর্টে ধর্ষণ ও নাশকতার ঘটনায় সোনারগাঁও থানায় ৮ টি, সিদ্ধিরগঞ্জে ৭ টি ও রূপগঞ্জে ১ টিসহ মোট ১৬ টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এসব মামলায় বাদী হয়েছে পুলিশ, র্যাব, সাংবাদিক, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পরিবহন মালিকরা। ১৬ মামলায় বেশ কয়েকটিতে মামুনুল হককে প্রধান আসামি করে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত, হেফাজতের আরও কয়েকশ’ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অন্তত ১৫০০ জনকে জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এই ৬টি মামলার মধ্যে তিনটি মামলায় প্রধান আসামি মামুনুল হক।
মাওলানা মামুনুল হককে ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সোনারগাঁও থানায় দায়ের করা ধর্ষণ ও সহিংসতার ৩টি এবং সিদ্ধিগঞ্জ থানায় দায়ের করা নাশকতার ৩টি সহ ৬টি মামলায় ১৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দুই বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা। ১০ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগে মামুনুল হকই একমাত্র আসামি। ইতোমধ্যে মামলাটির বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে। তবে ধর্ষণ মামলার বিচারকাজ শুরু হলেও নাশকতার ঘটনায় দায়েরকৃত ১৬টি মামলার বিচার কাজ এখনো শুরু হয়নি। ওইসব মামলার কোনটিরই এখনো চার্জশীট আদালতে দাখিল করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক জানান, আমার জানামতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত ৭টি মামলার কোনটিরই তদন্ত শেষ হয়নি। সবগুলো মামলার তদন্তকাজ চলমান রয়েছে।