ভারত মহাসাগরে জিম্মি হওয়া বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজ 'এমভি আব্দুল্লাহ' ও ২৩ নাবিকদের ঈদের আগে মুক্তি মিলছে না। যদিও বেশ কিছুদিন ধরে নাবিকদের ঈদের আগে মুক্তি মিলবে এমন খবর প্রচার হয়েছিল, কিন্তু মালিকপক্ষের (কবির গ্রুপ) দেওয়া তথ্যমতে এ বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, সোমালিয়ান জলদস্যুদের কাছ থেকে এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে দরকষাকষি প্রায় শেষ। এখন নাবিকদের কীভাবে ফিরিয়ে আনা হবে, জাহাজটি সেখান থেকে কীভাবে দুবাইয়ের উদ্দেশে যাবে এবং মুক্তিপণের টাকা কোন প্রক্রিয়ায় জলদস্যুদের কাছে পৌঁছানো হবে, সেটাই এখন চ্যালেঞ্জ। এখন মূলত এসব বিষয় নিয়েই আলোচনা চলছে।
বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও মুক্তিপণের টাকার নিশ্চয়তাসহ নানা বিষয় সামনে চলে আসছে। ফলে ঈদের আগে যে নাবিকরা মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরতে পারবেন না, সেটা এক প্রকার ধরে নেওয়া যায়। গত ১২ মার্চ জিম্মির পর ১৯ মার্চ সর্বপ্রথম দস্যুরা যোগাযোগ করে মালিকপক্ষের সঙ্গে। পরবর্তী সময়ে দফায় দফায় যোগাযোগ হলেও জাহাজের মালিক কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেনি। বর্তমানে নাবিকদের মুক্তি ও তাদের অগ্রগতির বিষয়ে মালিকপক্ষের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলামের জানান, আমরা ঈদের আগে নাবিকদের মুুক্তির বিষয়ে চেষ্টা করে আসছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ঈদের আগে সম্ভব নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে হয়তো ঈদের পর মুক্তি হতে পারে। তবে দস্যুরা নাবিকদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করছে এবং ওখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে জানিয়ে সরকারের নৌবাণিজ্য অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ। এ বিষয়ে তিনি জানান, জিম্মিদের মুক্তির জন্য জলদস্যুদের সঙ্গে মুক্তিপণের বিষয়ে প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এখন শুধু কোন প্রক্রিয়ায় তাদের টাকা দেওয়া হবে, নাবিকদের কীভাবে মুক্তি দেওয়া হবে ও জাহাজটি কীভাবে সেখান থেকে আনা হবে এসব ব্যবস্থাপনার কাজ বাকি রয়েছে। এগুলো ঈদের আগে এই স্বল্প সময়ে সম্ভব নয় বলে কৌশলগত কারণে ঈদের আগে নাবিকদের ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না ।
তিনি আরও জানান, আগে জলদস্যুদের একজন মিডিয়া থাকত। এখন আন্তর্জাতিক চাপের কারণে সেই মিডিয়া অনেক ক্ষেত্রেই নেই। তাই এসব টাকা দস্যুদের কাছে পৌঁছানোর প্রক্রিয়াটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জের। আর এ টাকা তো দেশ থেকে যাবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী জানান, এখানে চ্যালেঞ্জের কিছু নেই। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি প্রাথমিকভাবে মুক্তিপণের টাকা দেবে। পরবর্তীকালে মালিকপক্ষ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে বসে এ টাকা অ্যাডজাস্ট করবে।
তিনি আরও বলেন, দস্যুদের কাছ থেকে জাহাজ ও জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে মুক্তিপণ দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। আন্তর্জাতিকভাবে যদি কেউ এর বিরোধিতা করে তাহলে সে দায়িত্ব নিয়ে নাবিকদের উদ্ধার করে নিয়ে আসুক। গত মাসে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটির মালিক কেএসআরএম গ্রুপ। বিগত ২০১০ সালে কবির গ্রুপের মালিকাধীন এমভি জাহান মনি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। সে সময় ১০০ দিন জিম্মি থাকার পর ২৫ নাবিক ও এক নাবিকের স্ত্রী মুক্তি পান। এটি রেসকিউ করার সময় আশপাশে অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর পানিরোধী দুটি স্যুটকেসে টাকা পানিতে ফেলা হয়। স্পিডবোট দিয়ে দস্যুরা টাকা জাহাজে এনে গণনার পর বুঝে পাওয়ার সংকেত দিলে আমাদের মুক্তি দেওয়া হয়। তবে মুক্তির পর অর্থাৎ জলদস্যুরা চলে যাওয়ার পর জিম্মি থাকা নাবিকরাই জাহাজটি চালিয়ে পরবর্তী বন্দরে নিয়ে আসেন।
এ বিষয়ে ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, যেহেতু জিম্মি নাবিকরা একটি ট্রমার মধ্যে থাকবেন, তাই তাদের পরবর্তী বন্দরে নামিয়ে নতুন আরেকটি টিম জাহাজ চালিয়ে দুবাই নিয়ে যেতে পারে। যেহেতু জাহাজে থাকা কয়লাগুলো দুবাই খালাস হওয়ার কথা রয়েছে। তাহলে নাবিকদের মুক্তি কবে হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেন, ঈদের পরপরই মুক্তি প্রায় চূড়ান্ত। আর এখন নাবিকদের সঙ্গে দস্যুদের আচরণও ভালো। নাবিকদের কেবিনে থাকতে দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে একটি ভালো বোঝাপড়া হয়েছে উভয়পক্ষের মধ্যে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে প্রায় ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি। মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাচ্ছিল জাহাজটি। ছিনতাইয়ের পর সোমালিয়ার উত্তর-পূর্ব উপকূলের গ্যারাকাদে নিয়ে যাওয়া হয় এমভি আবদুল্লাহকে। এখনো একই এলাকায় অবস্থান করছে জাহাজটি। জাহাজ থেকে নাবিকদের উদ্ধারে ব্রিটিশ রয়েল নেভি এবং ভারতীয় নৌবাহিনী অভিযান চালানোর অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেও জাহাজ মালিক ও বাংলাদেশ সরকার অভিযানের অনুমোদন দেয়নি।