নারায়ণগঞ্জে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে আহত ২০
প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪১ | অনলাইন সংস্করণ
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় বিসিক শিল্পনগরীতে রোববার ২১ এপ্রিল বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন গুলিবদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে।
গুলিবিদ্ধদের মধ্যে শ্রমিক আব্দুর রাজ্জাক (৩৩) ও চাঁদনী খাতুনকে (২৪) আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকী আহত ও গুলিবিদ্ধদের কয়েকজনকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ও নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়া শ্রমিকদের হামলায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। তবে তাৎক্ষনিক তাদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার (২১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শ্রমিকরা বিসিকের শাসনগাঁও এলাকায় ঢাকা মুন্সীগঞ্জ সড়কে বৈদ্যুতিক খুটি, বাঁশ ও কাঠ ফেলে অবরোধের মাধ্যমে বিক্ষোভ শুরু করে। ক্রোনী গ্রæপের রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেডের কয়েকশ' শ্রমিক। এতে সড়কটিকে অন্তত দুই কিলোমিটার যানজট দেখা দেয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদেরকে সড়ক থেকে সড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ জলকামান দিয়ে পানি ছুড়ে লাঠিচার্জ করলে শ্রমিকরাও পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশও পাল্টা টিয়ারসেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে। সংঘর্ষে কয়েকজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে।
কারখানাটির সুইং অপারেটর মো. মাসুদ বলেন, এপ্রিলের ৮ তারিখ কারখানা বন্ধের সময় মোবাইলে বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিয়েও কথা রাখেননি মালিকপক্ষ। গত ৮ মাস যাবৎ বেতন নিয়ে এভাবে গড়িমসি করছে মালিকপক্ষ। বেতনের দাবিতে রাস্তায় না নামলে বেতন পাচ্ছেন না শ্রমিকরা। ঈদের দিনও বারবার মোবাইল চেক করছি। এই মনে হয় বেতন ঢুকলো এই আশায়। কিন্তু কোনো বেতন আসেনি। আপনারা ভাবতেও পারবেন না ঈদের সময় বেতন না পেলে কীভাবে শ্রমিকরা দিন কাটায়। আমাদের এবার ঈদে কোনো আনন্দ ছিল না। অন্তত অর্ধেক বেতন দিলেও হতো।
নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশ-৪ এর পরিদর্শক (ইনটেলিজেন্স) সেলিম বাদশা জানান, শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন বকেয়া ছিল ঈদের আগে। বোনাসও একসাথে দেয়ার কথা ছিল। ঈদের আগে বোনাস দিলেও মার্চ মাসের বেতন দিতে পারেনি মালিকপক্ষ। তবে মালিকপক্ষ কথা বলে ঠিক করে নিয়েছিল শ্রমিকদের সাথে। আজ কাজে যোগ দিয়েই তারা বেতন চায়। বেতন বৃহস্পতিবার দিতে চাচ্ছিল মালিকপক্ষ। এ নিয়ে কথা চলার মাঝেই শ্রমিকরা সড়কে নেমে পড়ে। মালিকপক্ষ পরবর্তীতে মঙ্গলবার বেতন দিতে রাজি হলেও শ্রমিকরা তা মানেনি। তারা আজই বেতন চায়। এদিকে সড়ক অবরোধ করে থাকা শ্রমিকদের সরে যেতে বললে তারা পুলিশের উপর ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে আমাদের কয়েকজন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ উপায়ন্তর না পেয়ে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় কয়েকজন শ্রমিকও আহত হয়েছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে মালিক শ্রমিক সমঝোতার চেষ্টা করছেন।
ক্রোনী গ্রুপের রপ্তানিমুখী এ পোশাক কারখানাটিতে অন্তত ৭ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছে বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আযম মিয়া বলেন, শ্রমিকদের হামলায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। তবে তাৎক্ষনিক আহতদের নাম পরিচয় জানাতে পারছিনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও টিয়ারসেল ছোড়া হয়েছে।
ক্রোনী গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ইনতিসার আহমেদ জানান, আমরা ২০ তারিখ কারখানা খুলেছি, ২২ তারিখ বেতন দেয়ার কথা ছিল। সকালে শ্রমিকরা এসে আজই বেতন চায়। পরে তারা সড়ক অবরোধ ও কারখানায় ভাংচুর চালায়। ঈদের আগেই তাদের সাথে ২২ তারিখ বেতন দেয়া হবে বলে কথা হয়েছিল।