দুবাই বন্দরে পৌঁছল এমভি আবদুল্লাহ
প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫২ | অনলাইন সংস্করণ
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদল্লাহ অবশেষে দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছে গেছে। জাহাজের ক্যাপ্টেন রোববার (২১ এপ্রিল) বিকেলে এমভি আবদুল্লাহ’র পরিচালনা প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডকে সর্বশেষ বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন। জাহাজটি এখন জেটিতে ভেড়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমতির অপেক্ষায় আছে। জাহাজটি দুবাই বন্দরে ভেড়ার পর উৎকণ্ঠার অবসান হলো। দুই নাবিক কয়েক দিনের মধ্যে বিমানে চট্টগ্রামে ফিরবেন। বাকি নাবিকরা দেশে আসবেন ওই জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে।
এস আর শিপিং লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করীম বলেন, জাহাজটি নিরাপদে দুবাই বন্দরে পৌঁছে গেছে। এখন আমাদের মতো নাবিকরাও স্বস্তির মধ্যে আছেন। সর্বশেষ পরিস্থিতি অনুযায়ী এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি দুবাইয়ের স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটা এবং বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে চারটায় আল হারামিয়া বন্দরে পৌঁছেছে। জাহাজ দুবাই বন্দরের ব্রাভো অ্যাকাংরেজে অবস্থান নিয়েছে। এখন জাহাজটি আল হামরিয়া বন্দর কন্ট্রোলের পরবর্তী ইনস্ট্রাকশনের জন্য অপেক্ষা করছে। তারা কখন জেটিতে বার্থিং নেবে তা জানতেই এখন অপেক্ষা করছে। রোববার রাতে অথবা সোমবার সকালে বার্থিং নেয়া হতে পারে। সর্বশেষ বার্তায় জাহাজের ক্যাপ্টেন জানিয়েছেন, দুবাইয়ের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার পর তারা আল হামরিয়া বন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে বার্থিংয়ের সময়সহ অনুমতি পাবেন বলে আশা করছেন।
জাহাজের মালিকপক্ষ চট্টগ্রামের কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম বলেন, জাহাজটিকে আল হামরিয়া বন্দরে চার-পাঁচদিন অবস্থান করতে হবে। জাহাজে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কার্গো আছে। কয়লাগুলো দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরে খালাস করা হবে। এরপর জাহাজটি আবার চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেবে। তবে কবে নাগাদ রওনা দেবে, সেটি বার্থিংয়ের পর নির্ধারণ হবে।
এস আর শিপিংয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমালিয়ার সীমানা পার হওয়ার পর জাহাজটি এখন সর্বোচ্চ ১২ নটিক্যাল মাইল গতিতে এগিয়ে আল হারামিয়া বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছে। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাতে পারে।
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি গত ১২ মার্চ বেলা ১২টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ওই জাহাজের ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়। জাহাজটি কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারামিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। দীর্ঘ এক মাস সোমালিয়া উপকুলে জিম্মি থাকার পর ১৪ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় ভোর রাতে জাহাজটি দস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হয়। এরপর দুবাই বন্দরের দিকে রওয়ানা দেয়।
জাহাজের ২৩ নাবিকেরা হলেন, জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুরুদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।
এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরবসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল কেএসআরএম গ্রুপের এস আর শিপিং লিমিটেডের আরেকটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তবে এবার মাত্র ৩৩ দিনেই এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটিকে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করা হয়েছে।
এস আর শিপিংয়ের কর্মকর্তারা জানান, ২৩ নাবিকের মধ্যে ২১ জন এমভি আবদুল্লাহহ জাহাজেই চট্টগ্রাম বন্দরে ফিরবেন। দুই নাবিক দুবাই বিমানবন্দরে নেমে যাবেন। তাদের সেখান থেকে বিমানে ফেরার কথা রয়েছে। মালিক পক্ষ জানিয়েছে এখন আর কোন সমস্যা নেই। দুবাই বন্দরে কয়লা খালাসের পরই দেশে ফিরবে অর্থাৎ জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে ফিরে আসবে।