চট্টগ্রাম বন্দরের পথে 'এমভি আব্দুল্লাহ'
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৫ | অনলাইন সংস্করণ
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
বাংলাদেশী জাহাজ 'এমভি আব্দুল্লাহ' ও জিম্মি ২৩ নাবিকের মুক্তির পর রোববার (২১ এপ্রিল) বিকেলে জাহাজটি দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছায়। শনিবার (২৭ এপ্রিল) স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নতুন ট্রিপের পণ্য লোড করতে ইউএইর মিনা সাকার (Mina Saqr) বন্দরে যায় 'এমভি আব্দুল্লাহ'। এদিন সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা খালাস শেষ হওয়ার পর দেশের উদ্দেশে রওয়ানা দেওয়ার সময় চূড়ান্ত করে এমভি আবদুল্লাহ।
রোববার (২৮ এপ্রিল) যে কোন সময় জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাহাজটির মালিক পক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের গণমাধ্যম উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।
তিনি জানান, গত ২২ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে জাহাজটি দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের জেটিতে ভিড়েছিল। কয়লা খালাস শেষে জাহাজটিতে নতুন পার্টির পণ্য লোড করার জন্য মিনা সাকার বন্দরে গেছে। আশা করা হচ্ছে রোববার জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। ২৩ নাবিকই জাহাজে দেশে ফিরবেন। মে মাসের মাঝামাঝিতে জাহাজটি দেশে ফিরবে।
জাহাজের মালিকপক্ষ চট্টগ্রামের কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম জানান, কয়লা খালাস শেষ হয়েছে। একইসঙ্গে নতুন কার্গো লোড করা হয়েছে। রোববার দিনের যেকোনো সময়ে জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওয়ানা দেবে। মে মাসের মাঝামাঝিতে জাহাজটি এসে পৌঁছবে বলে আমরা আশা করছি। ২৩ জন নাবিকের সবাই জাহাজে করেই আসবেন।
নাবিকেরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুরুদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।
প্রসঙ্গত, মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ সোমালিয়ার দস্যুরা ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি জিম্মি করেছিল। দেশটির উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগর থেকে জাহাজটি জিম্মি করেছিল সশস্ত্র জলদস্যুরা। গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা ৮ মিনিটে মুক্তিপণ পরিশোধের পর গত জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ থেকে ৬৫ জন জলদস্যু জাহাজটি থেকে বোটে নেমে যায়। এ সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুইটি যুদ্ধ জাহাজের পাহারায় এমভি আবদুল্লাহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পার হয়।
বাড়তি সতর্কতা হিসেবে তখন জাহাজের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া, ডেকে হাই প্রেসার ফায়ার হোস বসানো হয়, যাতে জলদস্যুরা ফের হামলা করলে উচ্চচাপে পানি ছিটানো যায়। জলদস্যুরা নেমে যাবার পরই জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়।
ইউরোপিয় ইউনিয়নের দু’টি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রিত উপকূল থেকে সোমালিয়ার সীমানা পার করে দেয় জাহাজটি ২১ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে চারটায় আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছে। পরদিন সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় নোঙ্গর করে জেটিতে।
এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরবসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল কেএসআরএম গ্রুপের এস আর শিপিং লিমিটেডের আরেকটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তবে এবার মাত্র ৩৩ দিনেই সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবল থেকে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটিকে মুক্ত করা হয়েছে। সরকার ও মালিক পক্ষের এমন জোরালো তৎপরতায় নাবিকদের দ্রুত উদ্ধার সম্ভব হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।