ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কক্সবাজারে আওয়ামী লীগ সভাপতি-সম্পাদকের পরাজয়

কক্সবাজারে আওয়ামী লীগ সভাপতি-সম্পাদকের পরাজয়

অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও মুজিবুর রহমান কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপালন করছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন রয়েছে নয় উপজেলা, চার পৌরসভা ও এক সাংগঠনিক উপজেলা। এসব সাংগঠনিক উপজেলায় কমিটি গঠনসহ চারটি সংসদীয় আসনে প্রার্থী মনোনয়ন হয়েছে এ দু'জনের স্বাক্ষরে। সরকার দলীয় সংগঠনের জেলার প্রধান হিসেবে ক্ষমতাধর হিসেবেই পরিচিত তারা।

এত ক্ষমতার পরও লোভে পড়ে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছেন এ দুজন। জেলা সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী কুতুবদিয়া এবং মুজিবুর রহমান কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে বুধবার শেষ হওয়া চলতি সময়ের প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুজনই করুণ ভাবে হেরেছেন।

দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকলেও সাংগঠনিক কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং তৃণমূলকে সংগঠিত করতে সময় দেননি তারা। ফলে নিজস্ব বলয়ের নেতাকর্মী ছাড়া তৃণমূলদের সাথে তাদের যোগাযোগ ছিল না বললেই চলে। সাথে রয়েছে কমিটি গঠন এবং পদবীর বিপরীতে অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ। আবার দুঃসময়ের ত্যাগী এবং পরীক্ষিতদের অবমূল্যায়নও এর সাথে যুক্ত। দলের নেতাকর্মীদের সাথে বাড়তে থাকা এ দুরত্বের কারণেই জেলা আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতার লজ্জাজনক পরাজয় বলে উল্লেখ করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

কক্সবাজার সদর উপজেলা :

কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ৮২ টি ভোট কেন্দ্রে মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার ৩৪ হাজার ৯৭৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৬ হাজার ৫৫ ভোট। ২ জনের ভোটের ব্যবধান ৮ হাজার ৯১৯ ভোট। নির্বাচন থেকে সরে গিয়েও দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে কায়সারুল হক জুয়েল পেয়েছেন ২ হাজার ১২৬ ভোট।

এছাড়া কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদে ফুটবল প্রতীক নিয়ে ৩৬ হাজার ৫৪২ ভোট পেয়ে রোমেনা আক্তার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কলস প্রতীক নিয়ে চম্পা উদ্দিন পেয়েছেন ২৬ হাজার ৫১৪ ভোট। এর আগে রশিদ মিয়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ৮২ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ২ লক্ষ ২২ হাজার ৯৯৬ জন ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ১৯ হাজার ২৯৪ জন। মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৩ হাজার ৭০২ জন। ভোট কাস্ট হয়েছে ৬৩ হাজার ৩৭৩ টি। বৈধ ভোট ৬৩ হাজার ১৫৫ টি। বাতিল হয়েছে ২১৮ টি। মোট ভোটারের তুলনায় কাস্টিং ভোটের হার শতকরা ২৮ দশমিক ৪৪ ভাগ।

মহেশখালী উপজেলা :

মহেশখালী উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ৮৬ টি ভোট কেন্দ্রে দোয়াতকলম প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আলহাজ্ব মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন ৭৮৯৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী টুপি প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ পেয়েছেন ৭০৭৮ ভোট। দু'জনের ভোটের ব্যবধান ৭১৮ ভোট।

মহেশখালী উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে মটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে মুহাম্মদ গোলাম কুদ্দুস চৌধুরী পেয়েছেন ৫৪৭ ভোট, চিংড়ি মাছ প্রতীকের আবদুল্লাহ আল নিশান পেয়েছেন ৩৭৯ ভোট এবং আনারস প্রতীক নিয়ে মোহাম্মদ শরীফ বাদশা পেয়েছেন ১৪৫ ভোট।

এছাড়া, মহেশখালী উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে বই প্রতীক নিয়ে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ আবু ছালেহ এবং কলস প্রতীক নিয়ে মনোয়ারা বেগম মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

মহেশখালী উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ৮৬ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ২ লক্ষ ৫৭ হাজার ৪৫৮ জন ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে, পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৮৯০ জন। মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ১৯ হাজার ৫৬৮ জন। মহেশখালীতে ভোট কাস্ট হয়েছে ১৬০৭২ টি। বৈধ ভোট ১৬০৪৫ টি। বাতিল হয়েছে ২৭টি। মোট ভোটারের তুলনায় কাস্টিং ভোটের হার শতকরা ৬ দশমিক ২৪ ভাগ।

কুতুবদিয়া উপজেলা :

কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ৩৭ টি ভোট কেন্দ্রে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোহাম্মদ হানিফ বিন কাশেম ২৭ হাজার ৩৪৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আছহাব উদ্দিন আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫ হাজার ৫২২ ভোট। ২ জনের ভোটের ব্যবধান ২১ হাজার ৮৭২ ভোট। চেয়ারম্যান পদে মটর সাইকেল প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোঃ ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ৩ হাজার ৭৪৬ ভোট হয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী মোহাম্মদ হানিফ বিন কাশেম অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীর ভ্রাতুষ্পুত্র।

এছাড়া, কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে উড়োজাহাজ প্রতীক নিয়ে সাংবাদিক আকবর খান পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান এবং কলস প্রতীক নিয়ে হাসিনা আক্তার বিউটি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ৩৭ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ৯৭ হাজার ১৭০ জন ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে, পুরুষ ভোটার ৫১ হাজার ৫৬৯ জন। মহিলা ভোটার ৪৫ হাজার ৬০১ জন। কুতুদিয়ায় ভোট কাস্ট হয়েছে ৩৬৭৬২ টি। বৈধ ভোট ৩৬৬৬২ টি। বাতিল হয়েছে ১০০টি। মোট ভোটারের তুলনায় কাস্টিং ভোটের হার শতকরা ৩৭ দশমিক ৮৩ ভাগ।

কক্সবাজার,পরাজয়
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত