কক্সবাজারের নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচনে সহিংসতা হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ মে) সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরুর পর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। পোকখালী, জালালাবাদ, ঈদগাঁওর বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাঁধার সৃষ্টি করে প্রভাবশালী এক প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। এমন খবর পেয়ে মধ্যম পোকখালী কেন্দ্রে গিয়ে হামলার শিকার হন মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী সামসুল আলম।
এরপর উপজেলা জুড়ে কেন্দ্রে কেন্দ্রে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু তালেবের পক্ষে প্রভাব বিস্তার ও বহিরাগত লোকজন কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান নিয়ে নিজের এজেন্ট বের করে দেয়ার প্রতিবাদে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী সেলিম আকবর। এসময় কয়েকশ কর্মী-সমর্থক তার সাথে সড়কে অবস্থান নেয়। ফলে ঘন্টাখানেক সময় মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এতে দূর্ভোগে পড়েন দু'পাশ দিয়ে আসা যানবাহনের যাত্রীরা। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে অবরোধকারিদের তুলে দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
এ ঘটনার ঘন্টাখানেক পর পশ্চিম পোকখালী মালমুরাপাড়া এলাকার কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ কেন্দ্রীক সহিংসতায় একজনকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, স্থানীয় মৌলভী মুহাম্মদ আলম নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে নিহত ছফুর আলমের বাড়িতে আক্রমন চালিয়ে তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়।
নিহত ছফুর আলম (৩৫) পশ্চিম পোকখালীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মালমুরাপাড়ার মৃত নমিউদ্দিনের ছেলে। তিনি ওই কেন্দ্রে মোটরসাইকেল প্রতীকের এজেন্ট ছিলেন। প্রার্থী সামসুল আলমের আত্মীয়ও হন তিনি। কিন্তু টেলিফোন প্রতীকের সমর্থকরা দাবি করেছেন ছফুর আলম তাদের কর্মী।
পোকখালী ইউনিয়নের পশ্চিম পোকখালী ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার জানান, নির্বাচনী সহিংসতায় অন্য প্রার্থীর লোকজন বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় লুটতরাজ চালানো হয়। বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলে ছফুর আলমকে ছুরিকাঘাত করা হয়। তাকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুর খবরে এলাকায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। যেকোন সময় আরো সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন স্থানীয়রা।
অপরদিকে, ঈদগাঁও ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কেন্দ্রে টেলিফোন ও মোটরসাইকেল প্রতীকের কর্মীদের মাঝে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে টেলিফোন প্রতীকের কর্মী ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সোহেল জাহান চৌধুরীর নেতৃত্বে কয়েকশ লোক দরগাহপাড়া এলাকায় গিয়ে মোটরসাইকেল প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের বসত বাড়িতে হামলা চালায়। এ ধরণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
হামলায় ভাদিতলার ইলিয়াসের ছেলে হেলাল উদ্দিন ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন। এসময় বেশ কয়েকজন নারীও আহত হন বলে প্রকাশ পায়।
নির্বাচনী সহিংসতায় ঈদগাঁওতে মৃত্যু ও আহতের বিষয়ে জানতে ঈদগাঁও, পেকুয়া ও চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে, মরদেহ আনা ঈদগাহ মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে র্যাব-১৫ কক্সবাজারের কর্মকর্তা দেবজিত গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনা কেন্দ্রের বাইরের। আমরা নিরাপত্তা জোরদার করছি।
ঈদগাঁও থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, নির্বাচনী সহিংসতায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে, এটি কেন্দ্রের বাইরে। বাকি সংঘর্ষের ঘটনার বিষয়ে কেউ অবহিত করেনি। সাধারণ ভোটাররা বলেন, ঈদগাঁও উপজেলায় যেহেতু প্রথম নির্বাচন সেহেতু আমাদের কামনা ছিল সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্ন নির্বাচন। কিন্তু এভাবে মৃত্যু এবং ঘরবাড়িতে হামলার মতো ঘটনা দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন হবে সেটা কল্পনাও করিনি। একটি কলঙ্কিত ইতিহাসের অংশ হয়েছে ঈদগাঁওর প্রথম উপজেলা নির্বাচন।
ঈদগাঁও, ইসলামপুর, পোকখালী, ইসলামাবাদ ও জালালাবাদ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঈদগাঁও উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৮৮ হাজার ৭৬০। যেখানে পুরুষ ভোটার ৪৮ হাজার ২৪৮ ও মহিলা ভোটার ৪০ হাজার ২১২ জন। উপজেলা নির্বাচনে ৩৬ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ (বুথ) রয়েছে ২৬৮ টি। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।