ঘূর্ণিঝড় ‘রেমালে’ মোকাবিলায় প্রস্তুত কক্সবাজার

প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৪, ০৭:২৬ | অনলাইন সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি শনিবার (২৫ মে) রাতে আরও ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমালে’ পরিণত হতে পারে। এর প্রভাবে ৫ থেকে ১০ ফুট জলোচ্ছ্বাসেরও আশঙ্কা রয়েছে। রবিবার বিকেল হতে মধ্যরাত অবধি এটি উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজারে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে তিনফুট পানি বেড়েছে। উপকূলের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছ। 

এ অবস্থায় ‘রেমালে’ মোকাবিলায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগাম প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে ৬৩৮টি আশ্রয় কেন্দ্র। সরকারি বা সায়স্বশাষিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শনিবার বিকেল হতে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। তৈরী রাখা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক ও মেডিকেল টিম। মজুদ রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার। বরাদ্দ রাখা হয়েছে নগদ টাকা। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। 

শনিবারের (২৫ মে) বিকেল পাঁচটায় জেলা প্রশাসনের জাফর আলম সম্মেলনে কক্ষে আয়োজিত জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরি সভায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় দূর্যোগকালীন সময় সাধারণ মানুষের জন্য খাবারের পাশাপাশি সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক।

সভায়, কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারি আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হান্নান জানান, ৭ নম্বর বুলেটিন অনুযায়ি গভীর নিম্নচাপটি শনিবার (২৫ মে) বিকেল পর্যন্ত  চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হতে পারে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার হতে পারে। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। 

তিনি বলেন, শনিবার মধ্যরাতে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তর হতে পারে। এরপর ধীরে ধীরে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে রবিবার বিকেল হতে শুরু হতে মধ্যরাতে সেটি উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তবে এটি কক্সবাজার তেমন আঘাত হানার সম্ভবনা না থাকলেও এসময় প্রচন্ড বৃষ্টিপাত ও সাগরে পানির উচ্চতাও বাড়াতে পারে। ঘটতে পারে পাহাড় ধ্বসও। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলায় ৬৩৮ টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে জরুরি মোকাবিলায় জিআর নগদ দু'লাখ ৭৫ হাজার টাকা, দূর্যোগ মোকাবিলায় ব্যবস্থাপনা তহবিলের ১৮ লাখ ২৩ হাজার ৪৪৮ টাকা, ৪৮৬ মেট্রিক টন চাল মজুদ রাখা হয়েছে। খোলা হয়েছে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এছাড়া দূর্যোগকালীন সময় কাজ করবে ৮ হাজার ৬০০ জন সিপিপি এবং দু'হাজার ২০০ জন রেডক্রিসেন্ট সদস্য। 

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, দুর্যোগ শুরু হলে উপকূলীয় এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে নেওয়ার পূর্ব প্রস্তুতি নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক টীম, রেডক্রিসেন্ট, স্কাউট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে। সন্ধ্যায় মিটিং শেষ করেই সিপিপি ও অন্য স্বেচ্ছাসেবক টীমগুলো সচেতনতা বাড়াতে উপকূলে মাইকিং নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। 

জেলা বোট মালিক সমিতির মোস্তাক আহমদ বলেন, গত ২০ মে হতে সরকারি ভাবে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেকারণে আগে থেকেই মাছ ধরার ট্রলারগুলো তীরে নোঙ্গর করা রয়েছে। ছোটখাট যেসব ট্রলার তীরের আশেপাশে মাছ ধরে তাদেরও সাগরে না যেতে বলা হয়েছে।   

এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া হলেও কক্সবাজার জুড়ে এর কোনো প্রভাব নেই। তবে, সাগরে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুপুরে পানি একটু বেড়েছে। সম্ভাব্য দুর্যোগ বিবেচনায় সৈকতে আসা পর্যটকদের গোসলে নিরুৎসাহিত করছে টুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসন। 

কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তেমন কোন প্রভাব না থাকলেও দূর্ঘটনা এড়াতে পর্যটকদের সাগরে গোসল করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। 

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালে'র প্রভাবে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় সকল ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। উপকূলে থাকা সাইক্লোন শেল্টারে ৫ লাখ মানুষের ধারণক্ষমতা রয়েছে। যেকোনো দুর্যোগে নিজ নিজ অবস্থান হতে সবাই এগিয়ে এলে তা মোকাবিলা সহজ হয়।