চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে সাবেক স্ত্রীকে হত্যার দায়ে এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ রায়ে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা এবং মামলার অন্য একটি ধারায় ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
রোববার (২৬ মে) চাঁদপুরের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (২) সাহেদুল করিম আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মজিবুর রহমান ভূঁইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আইনজীবী মজিবুর রহমান ভূঁইয়া জানান, মামলাটি প্রায় ৭ বছর চলাকালীন সময় আদালত ১৯ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন। আসামির অপরাধ স্বীকার এবং মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা শেষে বিচারক এই রায় দেন। রায়ের সময় আসামী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট সেলিম আকবর ও ইয়াসিন আরাফাত ইকরাম।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মো. হযরত আলী (৩০) ওই উপজেলার কীর্তনখোলা গ্রামের সুরুজ মিয়ার ছেলে। হত্যার শিকার মিতু আক্তার উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের আবু তাহেরের মেয়ে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. হযরত আলী একই উপজেলার কীর্তনখোলা গ্রামের সুরুজ মিয়ার ছেলে।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, মিতু আক্তারের সঙ্গে ২০১৩ সালে মোবাইলে পরিচয় এবং প্রেমের সম্পর্ক হয় হযরত আলীর। ওই বছরই তারা উভয়ে নিজ ইচ্ছায় হাজীগঞ্জে কাজী অফিসে বিয়ে করেন। এরপর শ^শুরালয়ে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হন। যার ফলে ২০১৬ সালের ২৫ জুন নোটারী পাবলিক এর মাধ্যমে মিতু ও হযরত আলীর তালাক সম্পাদন হয়। এর মধ্যে হযরত আলী প্রবাসে চলে যায় এবং মিতুর সাথে ফোনে যোগাযোগ রাখে। ২০১৭ সালের জুন মাসে আবার দেশে ফিরে আসে এবং পরের মাসের ২৩ জুলাই মিতুকে নিয়ে চাঁদপুর শহরে ঘুরতে আসে। ঘুরাঘুরি শেষে মিতুকে বাড়িয়ে দিয়ে যায়। ওই দিন রাতেই হযরত আলী ও তার বন্ধুরা মিতুদের বাড়ীতে খেতে আসবে বলে। রাত ৯টার দিকে মোবাইল ফোনে হযরত আলী মিতুকে বন্ধুদের তাদের বাড়ীর সামনে থেকে এগিয়ে নিতে বলে। মিতু এগিয়ে আনতে গিয়েই হত্যার শিকার হন। তার মা রাবেয়া বেগম মেয়ে ঘরে ফিরে আসতে না দেখে এগিয়ে গিয়ে এলাকার আবদুর রহমানের ঘরের দক্ষিণে পুকুর পাড়ে মিতুর গলাকাটা মরদেহ দেখতে পান। তিনি ডাকচিৎকার করেন এবং লোকজন এগিয়ে এসে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করেন।
এই ঘটনায় মিতুর মা রাবেয়া বেগম পরদিন ২৪ জুলাই হযরত আলীকে আসামী করে হাজীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ আসামীকে হযরত আলীকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেন।
মামলাটি থানা আমলে নিয়ে তদন্ত করার দায়িত্ব দেন তৎকালীন হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জসিম উদ্দিনকে। তিনি তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ১৮ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।