ঘূর্ণিঝড় রেমাল কক্সবাজারে বিপদ সংকেত নামানোর পর ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এর পর পরই কক্সবাজারে শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। যে ঝড়ো হাওয়ায় উড়ে গেছে সাগরপাড়ের শতাধিক দোকানপাট। আগ্রাসী সাগরের ভয়ঙ্কর ঢেউয়ে উপড়ে গেছে ঝাউ বাগানের গাছ। রবিবার (২৬ মে) রাত ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই ভারী বর্ষণ সোমবার (২৭ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত অব্যাহত আছে। থেমে থেমে চলা এ ভারী বর্ষণের সঙ্গে ঝড়ো হওয়া ও বজ্রপাত হচ্ছে।
সোমবার বিকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, সৈকতে উড়ছে বালু। অনেক সময় ঝড়ো বাতাসে উপড়ে পড়ছে গাছপালা। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দেওয়া ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামানোর ঠিক পরপরই শুরু হয় এই তাণ্ডব। ঝড়ো বাতাসে উড়ে গেছে দোকানপাট। সৈকতের ৫টি পয়েন্টের শতাধিক দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লাবণী পয়েন্টের চায়ের দোকানদার রাসেল বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় কক্সবাজার অতিক্রম করার পর এভাবে তুমুল বৃষ্টি আর ঝড়ো বাতাস আগে কোনোদিন দেখিনি। এই প্রথম ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব স্বচক্ষে দেখলাম। আমার দোকানের ছাউনি বাতাসে উড়ে গেছে আর পানির বোতল থেকে শুরু করে চিপসের প্যাকেট উড়ে কোথায় গেছে জানি না।
সোমবার বেলা ১১টার পরপরই শুরু হয় জোয়ার। প্রবাহিত হয় সর্বোচ্চ উচ্চতায়। তাণ্ডব শুরু করে উপকূলের ঝাউ বনে। উপড়ে ফেলে বেশ কিছু বৃক্ষ। ভয়ঙ্কর ঢেউয়ের তোড়ে তলিয়েছে শহর রক্ষা বাঁধ।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানিয়েছেন, গেল রবিবার দুপুর ১২টা থেকে সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে ৯৩ মিলিমিটার। আগামী আরও ২ থেকে ৩ একই ধরনের বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। ফলে পাহাড় ধ্বসের আশঙ্কা রয়েছে। সাগরের পানি স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে এখনও ২ ফুট উচ্চতা বেড়ে রয়েছে। ফলে সাগরবর্তী এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করবে।
বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে কক্সবাজারের অন্তত ৩০ গ্রাম প্লাবিত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা। এর মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরাটেক, কুতুবদিয়া পাড়া, সমিতি পাড়া, মোস্তাকপাড়া, ফদনার ডেইল, নুনিয়ারছড়া, মহেশখালী উপজেলার ধলাঘাটা ও মাতারবাড়ি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব উপকূলের লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন। যাদের রান্না করা খাবার বিতরণ করছে প্রশাসন।
এদিকে, ভূমিধ্বসের আশঙ্কায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে আশ্রয় নিতে প্রচারণা চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভা। সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান জানিয়েছেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণদের নিরাপদে আশ্রয় নিতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জনপ্রতিনিধিরা কাজ করছেন।