কক্সবাজারের তিন উপজেলায় সাবেক তিন জনপ্রতিনিধির বাজিমাত

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৪, ১৫:১৬ | অনলাইন সংস্করণ

  উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে কক্সবাজারের তিন উপজেলায় ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিন উপজেলার মধ্যে দু'জন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন। তারা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য স্ব পদ থেকে সদ্য পদত্যাগ করেছেন।অন্যজন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন।

এদের মধ্যে রামু উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো। তিনি এর আগে ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের টানা ২ বারের চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে আবদুল্লাহ সিকদার এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মুসরাত জাহান মুন্নী নির্বাচিত হয়েছেন। 

অন্যদিকে, উখিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। তিনিও এর আগে রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের টানা তিন বারের চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে কক্সবাজার রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি  সাংবাদিক রাসেল চৌধুরী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শাহীন আক্তার নির্বাচিত হয়েছেন। শাহীন আক্তার আগেও একবার উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

তাছাড়া টেকনাফ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন জাফর আহমদ। তিনি এর আগেও একবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন ও বর্তমানে কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদস্য হিসাবে দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে সরওয়ার আলম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে  মর্জিনা আক্তার সিদ্দিকী নির্বাচিত হয়েছেন। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বুধবার (২৯মে) এ তিন উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৮টা থেকে যথা নিয়মে ভোট গ্রহণ শুরু হয়, আর শেষ হয় বিকেল ৪টায়।

নির্বাচন শেষে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা কন্ট্রোল রুম থেকে তিন উপজেলার চেয়ারম্যানসহ ভাইস চেয়ারম্যানদের নাম বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

রামু উপজেলা পরিষদ : 

তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন প্রার্থী অংশ নিয়েছিলেন।

ভোটগ্রহণ শেষে বেসরকারি ফলাফলে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন, সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো (মোটর সাইকেল)। তিনি পেয়েছেন ৪৩ হাজার ৮০৩ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী সোহেল সরওয়ার কাজল (আনারস) ১৬ হাজার ৯৮৪ ভোট এবং মোহাম্মদ ইউসুফ ইকবাল ২ হাজার ১২৪ ভোট পেয়েছেন।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে মো. আবদুল্লাহ সিকদার (চশমা) ২৪ হাজার ৭৪৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন (তালা) ১২ হাজার ৪০৮ ভোট, মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন (উড়োজাহাজ) ১০ হাজার ৪৮৬ ভোট, মোস্তাক আহমদ (টিউবওয়েল) ৯ হাজার ১০৪ ভোট ও কায়সার কামাল চৌধুরী শিমুল (মাইক) ৬ হাজার ১৪২ ভোট পেয়েছেন।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মুসরাত জাহান মুন্নী (প্রজাপতি) ৩৪ হাজার ৫৩৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী আফসানা জেসমিন পপি (কলস) ২৭ হাজার ৯৯৭ ভোট পেয়েছেন।

চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো ২০১১ ও ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। রামু উপজেলা পরিষদের এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্যে গত ২৯ এপ্রিল ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। জাতীয় সংসদের হুইপ ও কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের সমর্থন নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তিনি।

অপরদিকে এ নির্বাচনে পরাজিত সোহেল সরওয়ার কাজল জাতীয় সংসদের হুইপ ও কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের আপন বড় ভাই। সোহেল সরওয়ার কাজল রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি ২০০৩ সালে ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ২০০৯ ও ২০১৯ সালে দুইবার রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন সোহেল সরওয়ার কাজল।

উখিয়া উপজেলা পরিষদ :

উখিয়া উপজেলা থেকে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১১ জন প্রার্থী অংশ নিয়েছিলেন।

ভোটগ্রহণ শেষে বেসরকারি ফলাফলে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন, জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী (আনারস)। তিনি পেয়েছেন ৩৮ হাজার ৫২৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী আবুল মনসুর চৌধুরী (মোটরসাইকেল) ২৭ হাজার ৫২১ ভোট এবং জাফর আলম (ঘোড়া প্রতিক) ১৫৩৯ ভোট। যদিও জাফর আলম ভোটের একদিন আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাংবাদিক  মো. রাসেল চৌধুরী (তালা) ২২ হাজার ৫৯৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী কামাল উদ্দিন মিন্টু (মাইক) ১৮ হাজার ৮০৮ ভোট, জাহাঙ্গীর আলম (টিউবওয়েল) ১৫ হাজার ৪২৫ ভোট,সাংবাদিক গফুর চৌধুরী (চশমা) ৫ হাজার ৯৯২ ভোট এবং গফুর উল্লাহ (বই) ৪ হাজার ৭৫৮ ভোট পেয়েছেন।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শাহীন আক্তার (হাঁস) ২৭ হাজার ৪৭৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী কামরুন্নেছা বেবী (কলস) ২৬ হাজার ৯৬০ ভোট, সানজিদা আক্তার নূরী (প্রজাপতি) ১২ হাজার ৮১১ ভোট পেয়েছেন।

চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী জাহাঙ্গীর আলম ২০১১ সালের ইউপি নির্বাচনে জয়ী হয়ে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০২১ সালে টানা তৃতীয়বারের মতো জিতে বর্তমানেও এই পদে আসীন ছিলেন। উখিয়া উপজেলা পরিষদের এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্যে গত ২৮ এপ্রিল তিনি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির  সমর্থন নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তিনি।

টেকনাফ উপজেলা পরিষদ:

টেকনাফ উপজেলার মোট ৫৯ কেন্দ্রে জাফর আহমদ (আনারস প্রতীক) নিয়ে পেয়েছেন ৫২ হাজার ৩ শত ৬৭ ভোট তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নুরুল আলম (টেলিফোনে প্রতীক) নিয়ে পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৯ শত ১ ভোট। মোটরসাইকেল প্রতীক দিদার মিয়া পেয়েছেন ২ হাজার ১শত ৩৩ ভোট।

পুরুষ ভাইস-চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে সরওয়ার আলম । তার প্রাপ্ত ভোট ৩৯ হাজার ৩৫ । নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি মাইক প্রতীকের মাওলানা রফিক উদ্দিন পেয়েছেন ৩৫ হাজার ১শত ৫৪ ভোট, চশমা প্রতীক নিয়ে আবু ছিদ্দিক আবু পেয়েছেন ১৬ হাজার ১শত ৯২ভোট।

মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে এগিয়ে রয়েছেন ফুটবল প্রতীক নিয়ে মর্জিনা আক্তার সিদ্দিকী। তার প্রাপ্ত ভোট ৬১ হাজার ৪শত ১। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি পদ্মফুল প্রতীক নিয়ে তাহেরা আক্তার পেয়েছেন ১৮ হাজার ৩শত ৮৪ ভোট, কলস প্রতীক নিয়ে গোলাপজান আক্তার পেয়েছেন ১০ হাজার ৯৩ ভোট।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নাজেম উদ্দিন বলেন, তৃতীয় ধাপে কক্সবাজারের রামু, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় সুষ্ঠু ও শন্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে । প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করায় কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি।

এদিকে, বৈরি আবহাওয়ার কারণে সেন্টমার্টিনদ্বীপ কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম এবং ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাগণ যেতে না পারায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।

এ নিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাচন ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, ‘সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে সেন্টমার্টিনে ইভিএম এর বক্সসহ নির্বাচনি সরঞ্জামাদি পাঠানো হলেও বৈরি আবহাওয়ার কারণে সেন্টমার্টিনদ্বীপ কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম এবং ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাগণ যেতে পারেননি। তাঁরা ঘাট থেকে ফেরত এসেছেন।

উল্লেখ্য, সেন্টমার্টিনদ্বীপ একটিমাত্র কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৭১৩ জন। তম্মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ হাজার ৮৫৮ এবং মহিলা ভোটার ১ হাজার ৮৫৫ জন।