দিনাজপুরে হারভেস্টার মেশিন এখন কৃষকের গলার কাঁটা

প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৪, ১৪:৫৮ | অনলাইন সংস্করণ

  বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

কৃষি যান্ত্রিকীকরণ লক্ষ্যে সরকারের দেওয়া ধান কাটা মেশিন এখন কৃষকের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। দিনাজপুর জেলায় শতাধিক হারভেস্টার মেশিন বিভিন্ন যন্ত্রাংশের অভাবে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে বলে অভিযোগ চাষিদের। যন্ত্রাংশের আকাশচুম্বী দামের কারণে তারা এই ভরা মৌসুমেও ঠিক করতে পারছেন না হারভেস্টার মেশিনগুলো। যে কারণে লোকসানে ওই কৃষকেরা। সরকারের ভর্তুকি দামে এসব হারভেস্টার মেশিন কৃষকদের প্রদান করা হলেও, দায় এড়িয়ে যাচ্ছে স্থানীয় কৃষি অফিস। 

কৃষকদের দাবি, অনেক কষ্ট করে এসব হারভেস্টার মেশিন ক্রয় করেছেন তারা। এক থেকে দুই বছর যেতে না যেতেই শুরু হয়েছে যান্ত্রিক ত্রুটি। বিভিন্ন যন্ত্রাংশ উচ্চমূল্য হওয়ায় সহজেই কিনতে পারছেন না তারা। আবার কষ্ট করে কিনে ধান কাটা মেশিনগুলো কোনোরকম চালু করলেও তা স্থায়ী হচ্ছে না। যে কারণে দিনাজপুর জেলায় শতাধিক হারভেস্টার মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। কৃষকরা এ বিষয়ে লিখিত ও মৌখিকভাবে একাধিকবার স্থানীয় কৃষি অফিসে অভিযোগ দিলেও এসব হারভেস্টার মেশিন মেরামতের জন্য কোন সুরাহা হয়নি। মেকানিক্সের অভাবে অনেকে পড়েছে বড়লোকসানের মুখে।

দিনাজপুর সদর উপজেলার কৃষক  রহমতুল্লাহ বলেন, লাভের আশায় সরকারে দেওয়া ভর্তুকি মূল্যে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশি কিনে যন্ত্রণার মধ্যে আছি। এ মেশিনের একটার পর একটা পার্টস নষ্ট। আবার যন্ত্রণা করে লাগালে কিছুদিন চলার পরে নষ্ট হয়ে যায়। এ মেশিনের যন্ত্রাংশের দাম খুব বেশি। এর যন্ত্রাংশ বাজারে পাওয়া যায় না অর্ডার দিয়ে নিয়ে আসতে হয়। ধানের ভরা মৌসুম, কিন্তু মেশিন দিয়ে ধান কাটতে পারছি না।

বোচাগঞ্জ উপজেলার কৃষাণী জীবন নেহার বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ লক্ষ্যে সরকারের দেওয়া ধান কাটা মেশিন এখন আমার গলার কাঁটা। জমানো ৫ লাখ টাকা আর এনজিও থেকে লোন নিয়ে গতবছর একটি ধান কাটা কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন কৃষি অফিস থেকে ক্রয় করি। এক বছরের মাথায় নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। এই মেশিনের যন্ত্রাংশের দাম খুব বেশি। নাম দিয়ে কেনার পরেও বেশিদিন টিকে না, আবার নষ্ট হয়ে যায়। এখন এমন অবস্থা যে এনজিওর লোন শোধ করব না গাড়ির যন্ত্রাংশ ঠিক করব।

 বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষক আবুল হোসেন বলেন, অর্ধেক মূল্য দিয়ে একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন কিনেছি আর অর্ধেক মূল্য সরকার ভর্তুকি দিয়েছে। কিন্তু এ ধানকাটা মেশিনের এত সমস্যা হয়, এর যন্ত্রাংশ পাওয়া যায় না বাজারে। অর্ডার দিয়ে যন্ত্রাংশ কিনে আনলে আবার মেকানিক্স পাওয়া যায় না। কৃষি অফিসে যোগাযোগ করলে তারাও এর কোনো সমাধান দিতে পারে না। এ মেশিন দিয়ে কৃষকের উপকারটা কী?

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি মূল্যে  দিনাজপুর জেলায় পাঁচ শতাধিক হারভেস্টার মেশিন রয়েছে। হারভেস্টার মেশিনগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এ বিষয়ে কৃষকরা কোনো অভিযোগ করেনি। হারভেস্টার মেশিন নষ্টের দায় কৃষি অফিসের নেই বলে তিনি জানান।