অদ্য ০৫ জুন, ২০২৪ রোজ বুধবার বেলা ১১টায় ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, কেরাণীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে, “আশ্বাস-মানব পাচার থেকে উদ্ধারপ্রাপ্ত নারী ও পুরুষদের জন্য” শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প অবহিতকরণ সভার আয়োজন করে। উক্ত প্রকল্পটি উইনরক ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের সহযোগিতায় ৭টি সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ১০টি জেলায় বাস্তবায়ন করছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোঃ আবু রিয়াদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন আশ্বাস প্রকল্পের কেইস ম্যানেজার-ইকনোমিক ডেভেলপমেন্ট, জনাব নূরে সাবা জ্যোতির সঞ্চালনায়, সভায় সভাপতিত্ব করেন ও স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের অধিকার ও সুশাসন সেক্টরের টিম লিডার মোঃ মহব্বত হোসেন। পরবর্তীতে প্রকল্পটি থেকে উদ্ধারপ্রাপ্ত নারী-পুরুষদের উপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র ‘অনুপ্রেরনার ছায়াচিত্র- প্রেরণার আলোক শিখা’ প্রদর্শন করা হয় যেখানে প্রকল্পটির কর্মসম্পাদন প্রক্রিয়া এবং মানব পাচারের শিকার ব্যাক্তিদের অভিব্যক্তি এবং অগ্রযাত্রার পেছনের গল্প তুলে ধরা হয়। এরপর আশ্বাস প্রকল্পের রিজিওনাল কো-অর্ডিনেটর অসিত ব্যানার্জী প্রকল্পটির উপর একটি সংক্ষিপ্ত ধারনা প্রদান করেন। প্রকল্প পরিচিতির পরে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের আশ্বাস প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক যুবাইদা নাজনীনের সঞ্চালনায় একটি মুক্ত আলোচনার আয়োজন করা হয় যেখানে সকলেই অংশগ্রহন করেন এবং তাদের মতামত তুলে ধরেন। এরপর সার্বিক বিষয়ের উপরে প্রধান অতিধি তার বক্তব্য প্রদান করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেরাণীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মোঃ আবু রিয়াদ, মানব পাচারের শিকার হয়েছেন এমন লোকদের মানসিক ও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য এই উদ্যোগ গ্রহন করায় ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন এবং উইনরক ইন্টারন্যাশনালকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আরোও বলেন যে, আমাদের অর্থনীতির একটি সিংহভাগ রেমিটেন্স এর উপর নির্ভরশীল, যা যোগাতেই মূলত এই ব্যক্তিরা শিকার হয় নানামুখী বিপদের। এই ব্যক্তিদের সাধারন জীবনধারায় অন্তর্ভুক্তি শুধু তাদের জন্য নয়, তাদের পরিবার, সমাজ এবং সর্বোপরি দেশের জন্যও প্রয়োজনীয়। অন্যদিকে, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের অধিকার ও সুশাসন সেক্টরের টিম লিডার মোঃ মহব্বত হোসেন বলেন, ‘ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৩ কোটি মানুষকে সেবা প্রদান করেছেন। আমরা জানি, পাচারের শিকার একজন ব্যাক্তি উক্ত প্রতারনার পর সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেই জন্যেই তাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজন বহু মাত্রিক প্রচেষ্টার এবনং আশ্বাস প্রকল্প তাই করার চেষ্টা করছে। একই সাথে, প্রকল্পের রিজিওনাল কো-অর্ডিনেটর অসিত ব্যানার্জী বলেন যে, আজকের আয়োজনে প্রকল্পের সাথে সংযুক্ত সরকারী এবং বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতিই প্রমান করে প্রকল্পের প্রতি সকলের আন্তরিকতা ও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের গ্রহণযোগ্যতা। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নির্বিশেষে সকলের ওতপ্রোত অংশগ্রহণই প্রকল্পটির সফলতা এবং কার্যকরতা নিশ্চিত করবে।
অবহিতকরন সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, রুহিতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, হাজী আব্দুল আলী; উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা, মোঃ নজরুল ইসলাম; উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দিন; উপজেলা মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা, মালা বড়াল; কোনাখোলা থানার ইন্সপেক্টর মোঃ হেলাল উদ্দিন প্রমুখ। এছাড়াও, প্রবাসী কল্যান ব্যাংক, ব্র্যাক, ইনসিডিন বাংলাদেশ, বাস্তব, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, বিসিক, থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং আরও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ, সাংবাদিক ও প্রাইভেট সেক্টরের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং আশ্বাস প্রকল্পের কর্মীবৃন্দ অবহিতকরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য যে, মানব পাচার থেকে উদ্ধারপ্রাপ্ত নারী ও পুরুষদের মর্যাদা ও কল্যাণ পুনরুদ্ধার করা এবং স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২৪ সালের মার্চে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন এর মাধ্যমে ঢাকা জেলার কেরাণীগঞ্জ, সাভার এবং ধামরাই উপজেলায় ৩০০ জন সারভাইভার (৬৫% নারী) নিয়ে এই প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। উদ্ধারপ্রাপ্ত নারী ও পুরুষদের মনোসামাজিক কাউন্সিলিং, চিকিৎসা সেবা, আইনি সহায়তা ও কর্মমূখী বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের সামাজিক অবস্থান ও মর্যাদা পুন:প্রতিষ্ঠা করা এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে সহযোগিতা প্রদান করাই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। ইতোমধ্যে উইনরক ইন্টারন্যাশনাল গত ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট ০৫টি জেলায় আশ্বাস প্রকল্পের আওতায় ৪৫০০ জন পাচারের শিকার নারী-পুরুষকে অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে মর্যাদা পুন:প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করেছে।