ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

‘আমার স্বামীরে ফিরিয়ে দাও’

‘আমার স্বামীরে ফিরিয়ে দাও’

সহকর্মীর গুলিতে নিহত পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল হক রায়হানের (২৭) গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণায় চলছে শোকের মাতম। স্বামীর অকাল মৃত্যূতে স্ত্রী তানিয়া আক্তার তন্বী (২৩) বিস্মিত, বাকরুদ্ধ। কিছুক্ষণ পর পর হঠাৎ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন, উনিশ মাস বয়সের শিশু সন্তান তাহেরুল হক তাকিকে কোলে নিয়ে তিনি শুধু একটি কথাই বলতে পারছেন- আর কিছু চাই না, আমি আর কিছু চাই না, আমার স্বামীরে ফিরিয়ে দাও'। তার কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার আকাশ-বাতাস।

ছেলের অকাল মৃত্যূতে মাতম করছেন বৃদ্ধা মা মালেহা খাতুন (৬০)। কখনো বা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন তিনি, কখনো যাচ্ছেন মূর্ছা। বিলাপ করে কাঁদছেন ভাই আমিনুল হক মিঠু, বোন শিউলি, পপি। তাদের কান্না দেখে অশ্রু সংবরন করতে পারছেন না রায়হানের বাড়িতে সহানুভূতি জানাতে আসা শত শত নারী-পুরুষের কেউ। এদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই রায়হানের শিশু সন্তান তাকির। কী হয়েছে, কী ঘটেছে, বাড়িতে এত মানুষ কেন- সে কিছুই বুঝতে পারছে না। গতকাল ভিডিও কলে সে বাবাকে দেখেছে, সেই বাবা যে আর কোনদিন আসবে না, কোনই উপলব্ধি নেই তার।

রায়হান নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত শামসুল হকের ছেলে। তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে সর্ব কনিষ্ট তিনি। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক জোনের ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে সহকর্মীর গুলিতে নিহত হয়েছেন তিনি। এই প্রতিবেদক রোববার বিকেলে তার গ্রামের বাড়ি পরিদর্শন করেন। লাশ তখনও ঢাকায়। তথাপি দেখা যায় রায়হানের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছেন শত শত নারী-পুরষ। জানা যায় রায়হানের অকাল মৃত্যূতে শোকাহত সবাই।

শোকসন্তপ্ত পরিবেশে সাংবাদিকতা বড়ই বেমানান। তবু কথা বলতে হয়। অনেক চেষ্ঠায় কথা হয় রায়হানের স্ত্রী তন্বী, মা মালেহা, শাশুড়ি আঙ্গুরা, ভগ্নীপতি হাবিবসহ এলাকার ক’জনের সাথে।

তম্বী বলেন, সর্বশেষ শনিবার বিকেল চারটায় ভিডিও কলে কথা হয় রায়হানের সাথে। এ সময় রায়হান বাবুকে (তাকি) দেখে, স্ত্রীর কোশল কামনা করে। বলে- রাতে ডিউটি আছে, এখন ঘোমানো দরকার। তন্বী বলে- ঘোমাও। মা মালেহা বলেন, কেই কিছু কয় না। কিছু একটা অইছে শুইন্যা বড় ছেলেরে ফোন দিছি। সে ফোন রাইখ্যা দিছে। রায়হানরে ফোন দিছি, সে ধরছে না। তন্বীরে জিগাইছি, কিছু কইছে না। পরে শুনছি আমার ছেলেডারে মাইর্যা ফালাইছে। আমি এর বিচার চাই। শশুর লুৎফুর রহমান বলেন, তিনবছর আগে মেয়েটার বিয়ে হয়েছে। অল্প বয়স। তার জীবনটা কেমনে কাটবো।

সহানুভূতি জানাতে রায়হানের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছেন শুনুই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি তানভীর হাছান খান কামাল ও আটপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাহাত বিশ্বাস। তারা বলেন, রায়হান খেলাধূলা করতো। খুব পছন্দ করতো ক্রিকেট। কোনদিন কারো সাথে খারাপ ব্যবহার বা ঝগড়াঝাটি করে নাই। তার মৃত্যূতে আমরা খুবই কষ্ট পেয়েছি। আমরা হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।

মনিরুলের ভগ্নীপতি হাবিবুর রহমান বলেন, লাশ কখন আসবে জানি না। শুনেছি, সোমবার সকালে ঢাকায় পোস্ট মর্টেম ও পরে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরো জানান, রায়হানের বড় ভাই মাহবুব আলম টিটু ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশে (ডিএমপি) কর্মরত। তিনিই লাশের সাথে আছেন।

কনস্টেবল,নেত্রকোণা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত